প্রথম পাতা
হ্যালো এসআই বলছি পুলিশের সার্ভারে আপনার নাম ঢুকে গেছে
শুভ্র দেব
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
হ্যালো আমি এসআই ফারুক বলছি। আপনার মোবাইল নম্বর পুলিশের সার্ভারে ঢুকে গেছে। সার্ভার থেকে আপনার মোবাইল নম্বর ডিলেট করতে হবে। একটা কোড দিচ্ছি এই কোডটা আপনার মোবাইলে চাপুন। কোড চাপার পর আপনার মোবাইলটি ১ ঘণ্টা বন্ধ রাখুন। এভাবেই সাইবার প্রতারকরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফোন দেয়। ততক্ষণে সাইবার অপরাধীরা ওই মোবাইলের যাবতীয় তথ্য এবং ঘনিষ্ঠদের মেসেজ করে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে টাকা আদায় করে নেয়।
শাহরিয়ার আলম (৩৮) কাজ করেন একটি প্রতিষ্ঠানে। মে মাসের প্রথম দিকে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। যে নম্বর থেকে ফোন আসে ওই প্রোফাইলে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তির ছবি। পুলিশের পোশাক পরা ছবি দেখে কিছুটা ভয়ে ফোন রিসিভ করেন শাহরিয়ার। অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন আমি এসআই ফারুক। আপনার মোবাইল নম্বর পুলিশের সার্ভারে ঢুকে গেছে। শাহরিয়ার তখন আরও ভয় পেয়ে যান। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন কোনো অপরাধ না করে কীভাবে সার্ভারে নম্বর চলে গেল? এখন তার কী করতে হবে? তখন এসআই পরিচয় দেয়া ব্যক্তি বলেন এখন আপনার নম্বর ডিলেট করতে হবে। শাহরিয়ার বলেন, কীভাবে ডিলেট করতে হবে। জবাবে এসআই বলেন, আপনাকে একটা কোড দিচ্ছি ওটা আপনার মোবাইলে চাপুন। কোড নম্বর সেট করার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। তখন সেই এসআই বলেন, এবার আপনার মোবাইল নম্বরটি এক ঘণ্টা বন্ধ রাখেন। শাহরিয়ার মোবাইল বন্ধ করে দেন কিছুক্ষণ। যখন মোবাইল চালু করেন ততক্ষণে তার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যায়। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনসহ অনেকের সঙ্গে ওই হ্যাকাররা যোগাযোগ করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করেন তানিয়া আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সময় তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এসপি পরিচয় দিয়ে ফোন করেন এক ব্যক্তি। প্রোফাইলে পুলিশের পোশাক পরিহিত ছবি ছিল। হ্যালো বলার পরপরই অপর প্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি এসপি জসিম। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে বলছি। আপনার মোবাইল নম্বর পুলিশের কাছে রয়েছে। এটি সার্ভারে সেট হয়ে গেছে। আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেন। এসব কথা শুনে তানিয়া অনেকটা ভীতি নিয়ে এসপি পরিচয় দেয়া ব্যক্তিকে বলেন, তিনি নিজেও জানেন না, এ ছাড়া কোনো অপরাধও করেননি তাহলে কীভাবে তার মোবাইল নম্বর পুলিশের সার্ভারে গেল। তখন ওই এসপি বলেন, সমস্যা নাই। এটা ডিলেট করা যাবে। আপনার মোবাইলে একটা কোড যাবে সেটা আপনার মোবাইলে চাপতে হবে। তারপর আপনার মোবাইলটি ৪০ মিনিট বন্ধ করে রাখবেন। এসপি’র দেয়া কোড চাপার পর তানিয়া তার মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। পরে মোবাইল চালু করে দেখেন তার নাম ভাঙ্গিয়ে তার পরিচতদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে টাকা।
শুধু শাহরিয়ার এবং তানিয়া নয়। সাইবার প্রতারকরা একের পর এক নতুন নতুন কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফাঁদে ফেলে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। প্রতারকরা একই ধরনের অপরাধ বিভিন্ন কৌশলে করে। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে এ ধরনের ক্রাইম একেবারে বন্ধ করা যাবে না। যেই ফোন করুক কাউকে ওটিপি দেয়া যাবে না। আবার কারও কাছ থেকে কোনো কোড নম্বর নিয়ে মোবাইলে সেট করা যাবে না।