প্রথম পাতা
হ-য-ব-র-ল সেগুনবাগিচা, বিদায়ের মুডে পররাষ্ট্র সচিব
মিজানুর রহমান
১৪ মে ২০২৫, বুধবার
গুঞ্জন সত্য হতে চলেছে। পররাষ্ট্র সচিব পদে পরিবর্তন আসছে শিগগির। অস্বাভাবিক বিদায় পাচ্ছেন বর্তমান সচিব মো. জসীম উদ্দিন। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অত্যাসন্ন পরিবর্তনের বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, ৮ মাসে অনেকটা ‘তালগোল’ পাকিয়ে ফেলেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন! তাই তাকে বিদায় দিয়ে নতুন কাউকে সচিব পদে পদায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ ওই রদবদল বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মৌখিক নির্দেশনা বজ্রপাতের মতো এসে পড়ে সেগুনবাগিচায়। মুহূর্তেই তা ছড়ায় এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিংয়ে। যার প্রভাব পড়ে অধস্তনদের সেটআপে। অন্তর্বর্তী সরকারের আচমকা এমন সিদ্ধান্ত স্বভাবতই ব্যথিত করে জসীম উদ্দিনকে। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি এমন প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেন। পেশাগত জীবনের একেবারে সমাপ্তি লগ্নে থাকা মিস্টার উদ্দিন বিষয়টির 'সম্মানজনক' সুরাহা চেয়েছেন বলে জানা গেছে। তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন- পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানাজানির পর থেকে ‘মনমরা’ অবস্থায় রয়েছেন জসীম উদ্দিন। তিনি মন্ত্রণালয়ে অফিস করছেন অনেকটা ‘না করার’ মতো। গত সপ্তাহে এবং চলতি সপ্তাহের খোলা দুইদিন সোম ও মঙ্গলবার কারও সঙ্গে তিনি তেমন দেখা-সাক্ষাৎ করেননি। বৈঠকাদিতেও খুব একটা অংশ নেননি বরং তিনি উপযুক্ত প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন। সচিবের নির্লিপ্ততার প্রভাব পড়ছে মন্ত্রণালয়ের রুটিন কার্যক্রমে। যাতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা দিয়েছে সেগুনবাগিচায়।
উদাহরণ হিসেবে এক কর্মকর্তা বলেন, চারদিনের সফরে আগামী ২৮শে মে জাপান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাই প্রোফাইল ওই সফরের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা ও দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয় নিয়ে আগামী ১৫ই মে টোকিওতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি) রয়েছে। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের। কিন্তু নিজের চেয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তায় অর্থাৎ যেতে পারছেন না বলে এফওসি স্থগিত করে দেন সচিব! যা নিয়ে ঢাকা-টোকিও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে জরুরি ভিত্তিতে এফওসি স্থগিত সংক্রান্ত চিঠি (নোট ভারবাল) প্রত্যাহার করা হয়। দিনক্ষণ ঠিক রেখে অর্থাৎ ১৫ ই মে টোকিওতে এফওসি'র বৈঠক জানিয়ে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের বদলে সেই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. নজরুল ইসলামকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য তাৎক্ষণিক পররাষ্ট্র সচিবের পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীকে টোকিও বৈঠকে পাঠানোর কথাবার্তা প্রায় পাকাপোক্ত হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল বৈঠকটি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে না হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরের প্রস্তুতিমূলক সভা হবে। ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়া অর্থাৎ সচিব পদে পরিবর্তনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত, পররাষ্ট্র সচিবের মর্যাদা এবং ব্যক্তি জসীম উদ্দিনের ক্যারিয়ার- সব কিছুর মধ্যে একটি সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ নিয়ে ৩টি বিকল্প প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে রয়েছে। এক. পররাষ্ট্র সচিব নিজে থেকে ছুটিতে চলে যাবেন। দুই. তাকে একটি দেশে রাষ্ট্রদূত পদে পদায়ন করা হবে। ৩. আপাততঃ তাকে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর (শূণ্য) পদে বদলি করে দেয়া হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্তমানে বার্লিনে রয়েছেন জানিয়ে একটি সূত্রের দাবি- আগামী ১৬ই মে উপদেষ্টা দেশে ফিরবেন। তারপর সরকারের অ্যাকশন দৃশ্যমান হবে বলে ধারণা মিলেছে। উল্লেখ্য, অনেক সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে মো. জসীম উদ্দিনকে গত সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র সচিব পদে নিয়োগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাকে অনেকটা নীরবেই গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে বসানো হয়। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর পাওয়া ওই নিয়োগে বিএনপি কানেকশনকে কাজে লাগিয়ে ছিলেন জসীম উদ্দিনের সুহৃদরা। অনেকটা নিঃশব্দে গত বছরের ৮ই সেপ্টেম্বর মো. জসীম উদ্দিনের নাম নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে জুড়ে দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। তখনো তার নিয়োগ সংক্রান্ত অফিস আদেশের কপি প্রকাশ হয়নি। স্মরণ করা যায়, আগামী বছরের ১২ই ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটি শুরু হওয়ার কথা তার। পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার আগে তিনি চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলের সর্বশেষ সফর ছিল চীনে, তখন বেইজিংয়ে রাষ্ট্রদূত ছিলেন জসীম উদ্দিন। তার আগে কাতার এবং গ্রিসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাালন করেন তিনি।
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন নয়াদিল্লি, টোকিও, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইসলামাবাদে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। কনস্যুলার পরিষেবার জন্য রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৮ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জনপ্রশাসন পুরস্কারও পায়। পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের অ্যাপয়েনমেন্ট চাওয়া হয়। সন্ধ্যায় তার দপ্তরে দীর্ঘ অপেক্ষা করেন ওই প্রতিবেদক। তার দপ্তরের পরিচালকের মাধ্যমে সাক্ষাৎ চাওয়া হয়। কিন্তু জবাব আসে নেতিবাচক। বিদায়ের প্রস্তুতিতে থাকার কথা জানিয়ে সচিব কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পাঠকের মতামত
আগেই সরানো সরকার ছিলো।
Someone should kick Jasim's butt!
ফ্যাসিষ্ট এর সুবিধা ভোগীদের তাড়িয়ে দেয়াই উচিত
পিনাকী বাবু অনেক আগেই জসিম উদ্দিন সম্পর্কে সরকারকে কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু সরকারের পচা কান তা শুনতে পায় নাই। মাত্র কদিন পূর্বে অনৈতিক কর্মের জন্য জসিমকে অফিসারস ক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হয়।
সিনিয়রদের ডিংগানোর সংস্কৃতি গুরত্বপূর্ন পদে অযোগ্যের পূর্নবাসন হয়ে দেশের সুনাম ও মর্যাদায় আঘাত আসে।
জয় বাংলা হয়ে গেলো