ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
mzamin

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি এবং অবনতির দিকে যাচ্ছে। জবাবদিহিমূলক বিচারিক প্রক্রিয়ার অভাব ও নারীকে অধস্তন হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতাকে উৎসাহিত করছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়, তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টায় নানা মহল সেই ঘৃণ্য কাজেও জড়িয়েছে। উল্টো ভুক্তভোগীকে কলঙ্কিত করা ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার করার চেষ্টা চলমান, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি; বরং প্রতিনিয়ত তা অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এতে সমাজে ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত সহিংসতার মনস্তত্ত্ব ক্রমে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং এটি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিফলন। এ পরিস্থিতি একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। ভুক্তভোগী নারীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি মুরাদনগরের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ছবি ও ভিডিও দ্রুত অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে কমিটি। এ ছাড়া, নারীর প্রতি সহিংসতাকারী যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, দেশের প্রতিটি নারী নির্ভয়ে, সম্মানের সঙ্গে এবং নিরাপদে বসবাস করতে পারলে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ হিসেবে গড়ে উঠবে।

সিপিবি’র নিন্দা:
এদিকে, কুমিল্লার মুরাদনগরে এক ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তারা এ ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। রোববার এক বিবৃতিতে সিপিবি’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরের দরজা ভেঙে এক ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীকে যেভাবে গণধর্ষণ, নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে প্রচার করা হয়েছে, তা কোনো সভ্য সমাজে ভাবা যায় না। বিবৃতিতে অভিযুক্ত ধর্ষক ফজর আলী ও তার সহযোগীদের এবং সারা দেশে নারী নিপীড়ক ও ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। সিপিবি’র নেতারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের বিরুদ্ধে মব তৈরি, অনলাইনসহ নানাভাবে নিপীড়ন, হেনস্তা করা হচ্ছে। অব্যাহত নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেও সরকার ও প্রশাসনকে এসব ঘটনা প্রতিরোধ ও বন্ধ করতে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ:
কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ঘটনা শুধু একটি ভয়াবহ অপরাধ নয়, বরং নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ; যা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মৌলিক ভিত্তিকে লঙ্ঘন করে। পাশাপাশি এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আসকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই অপরাধের পেছনে কেবল ব্যক্তি নয়, বরং সরকারের নির্লিপ্ততা ও দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা কাজ করছে। একজন নারী তার নিজ ঘরে, নিজ পরিচয়ে সুরক্ষিত না থাকলে, তা রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা ও নিরাপত্তাহীনতা নির্দেশ করে। অতীতে নারীদের ওপর হামলা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনায় বিচার বিলম্বিত বা অপরাধীদের রক্ষা করার যে প্রবণতা দেখা গেছে, এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা বলে বিবেচিত হতে পারে। গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে ঘটনার যথাযথ ও দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্ত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিবৃতিতে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ক্ষতিপূরণ, প্রয়োজনীয় আইনি, মানসিক ও স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানের দাবি জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র। 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র বিবৃতি: 
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার দ্রুত বিচার এবং সব আসামির কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। এক বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিপীড়নের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়া নারীর প্রতি আরেক দফা নির্যাতনের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি অপরাধের শিকার নারীর সামাজিক ও মানসিক স্থিতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই শাস্তিযোগ্য অপরাধ সামাজিক সহিংসতাকে উৎসাহিত করে। এমজেএফ প্রত্যেক নাগরিককে এই নিষ্ঠুরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সচেষ্ট আইনি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status