প্রথম পাতা
জাফলংয়ে চাঁদাবাজদের সশস্ত্র মহড়া
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৯ জুন ২০২৫, রবিবারসশস্ত্র চাঁদাবাজদের দখলে এখন জাফলং, বাংলাবাজার ও কালা মিয়ার ঘাট। তাদের কোনো বৈধতা নেই। প্রকাশ্যে হচ্ছে চাঁদাবাজি। এ নিয়ে গতকাল দিনভর বাংলাবাজারে প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে চাঁদাবাজরা। একইসঙ্গে সারি-১ এর নামে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে লেঙ্গুরা গ্রামে লোকজনের সঙ্গে চাঁদাবাজদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। বিকালে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। বালু লুটকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাফলং ও গোয়াইনঘাট সদর। ১৪ই জুন চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে বালু লুটকারী চক্রের সদস্যরা জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ফাওজুল কবির খানকে পথরোধ করে। এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর ওবায়দুল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। এরপর থেকে জাফলংয়ের চাঁদাবাজরা পিছু হটেছে। পূর্ব জাফলংয়ে ইসিএভুক্ত এলাকায় নদীতে চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ঘটনার এক মাসের মাথায় চাঁদাবাজরা ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা জাফলং নদীতে লুট চালু করতে ফন্দি আঁটছে। তবে পুলিশ রাজি নয়। গত কয়েকদিন ধরে চুরি করে পূর্ব জাফলং নদী ও কোয়ারি এলাকায় রাতের বেলা নৌকা তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশ সদস্যরা ব্রিজের নিচেই তাদের আটকে দিয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় চুরি করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। আরেক স্পট বাংলাবাজার। সেটি মধ্য জাফলংয়ে অবস্থিত। বাংলাবাজারে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই মাঠে ছিলেন। তারা বাংলাবাজারে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। এ খবর পেয়ে গত ২৫ই মে দুপুরে ওই এলাকায় হামলা করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। এতে নেতৃত্বে ছিল জাহিদ, জিয়ারত সহ কয়েকজন। তাদের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের গুরুতর আহত করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিট কর্মকর্তা ও পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর উৎসব কর্মকার। ব্যবসায়ীদের দাবি; এসআই উৎসব নিজে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজদের উস্কে দিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনার ২০ দিনের মাথায় উর্ধ্বতনদের নির্দেশে পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। তবে এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। শাহাদাতের দাবি- তার মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশের তরফ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এজন্য তিনি পুলিশের বিট কর্মকর্তা এসআই উৎসবের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেন। বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গতকাল সশস্ত্র অবস্থায় মাঠে নামে চাঁদাবাজরা। নেতৃত্ব ছিল গোয়াইনঘাটের চাঁদাবাজির মূল নায়ক জিয়ারত। সঙ্গে ছিল পুলিশও। তারা বাংলাদেশে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে দিনভর মহড়া দেয়। এতে করে বাংলাবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপি’র ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন তালুকদার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সকালে স্থানীয় আলী হোসেন সহ কয়েকজনের ডাকে বহিরাগতরা সশস্ত্র অবস্থায় আসে বাংলাবাজারে। এর আগে বাংলাবাজারে বালু লুটপাট বন্ধ ছিল। তারা এসে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে মুকতলার একপাশে থাকা খালি ভলগেট উপরে তোলে। তখন বাংলাবাজারে অবস্থান করছিলেন এসআই সায়েদুর রহমান। তার উপস্থিতিতে সশস্ত্র অবস্থায় বালুবাহী ভলগেট লোড দিয়ে ছাড়া হয়। তিনি বলেন- কালা মিয়ার ঘাটের চাঁদাবাজদের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে জাফলং ও বাংলাবাজারের বালু। জাফলংয়ে লুটপাট পুলিশ বন্ধ রেখেছে। কিন্তু বাংলাবাজারে পুলিশের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে বালু লুট করা হচ্ছে। সর্বশেষ চাঁদাবাজদের দিয়ে মহড়া দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। এদিকে, গোয়াইনঘাট সদরে সারি-১ মহালের রয়্যালিটির রিসিট দিয়ে চাঁদাবাজি করছিল জিয়ারত ও তার চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। তাদের টাকা তোলা অবৈধ। কিন্তু পুলিশের শেল্টারে চাদা তোলায় স্থানীয় লেঙ্গুরা গ্রামের বাসিন্দা ও ছাত্র সমন্বয়ক আজমল সহ কয়েক জন অবৈধ রয়্যালিটি দাবি করে কয়েকটি বালুবাহী ভলগেট আটক করে। এ সময় জিয়ারত চক্র তাদের ওপর হামলা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আজমল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- সারি-১ দিয়ে রয়্যালিটি তোলা সম্পূর্ণ অবৈধ। এলাকার মানুষ এর প্রতিবাদ করলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জিয়ারত ও তার লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। গোয়াইনঘাটের তিতারাই এলাকায় কালা মিয়ার ঘাটে বালুখেকো বসে প্রতিদিন ২০-২৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে। তিনি বলেন- পুলিশের সামনে চাঁদাবাজি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে করে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানান তিনি। এদিকে, গোয়াইনঘাট সদরে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন- গোয়াইনঘাটে হাজীপুর, আরকান্দি, জাফলং, বাংলাবাজার সহ কমপক্ষে ১০টি স্থানে বালু লুট করা হচ্ছে। এসব লুটের ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রশাসন কিংবা পুলিশের তরফ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে করে দিনদিন পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হচ্ছে বলে জানান তিনি। গোয়াইনঘাটের ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন- বাংলাবাজারে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনভর সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। গোয়াইনঘাট সদরে নদীতে থাকা পুলিশের একটি টহল দলকে উদ্দেশ্য করে লেঙ্গুরা গ্রামের আজমল সহ কয়েকজন ঢিল ছুড়েছে। এতে পুলিশের কেউ আহত হয়নি।