প্রথম পাতা
আশঙ্কা, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলেছে
মানবজমিন ডেস্ক
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
ইরানের মিসাইল হামলায় জ্বলছে ইসরাইলের একটি ভবন
ট্রাম্পের তেহরান খালি করে দেয়ার বার্তায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই। বিশেষ করে তেহরানে স্রোতের মতো মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। এতে করে সড়কে অকল্পনীয় যানজট সৃষ্টি হয়। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের খবর রাখেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ট্রাম্পের বার্তা নিছক কোনো বার্তা নয়। এতে ভয়ঙ্কর কিছুর ইঙ্গিত রয়েছে। অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার এক রকম হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে কি এবার তেহরানে হামলা করে সবকিছু উড়িয়ে দেয়ার ছক সাজানো হয়েছে! এমন ভয়ে মানুষের শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে হিম অনুভূতি। ইরানও নমনীয় হচ্ছে না। তাদের অবস্থান ‘ডু অর ডাই’। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। ওদিকে বিস্ফোরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে তেহরান। মিসাইলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত তেল আবিব। পঞ্চম দিনের প্রাণঘাতী হামলায় বাতাসে বারুদের গন্ধ। জীবন বাঁচাতে তেহরানের সাধারণ নাগরিকরা শহর ছেড়ে যাচ্ছেন। ইসরাইলিরা আশ্রয় নিয়েছে বাংকারে। দেশও ছাড়তে শুরু করেছেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যাচেষ্টার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, হাইপারসনিক মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। সোমবার সন্ধ্যায় ইরানের রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচার চলাকালে তাতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে দু’জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। হামলা চালানো হয়েছে ইরানের একাধিক হাসপাতালে। সেখানে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। রক্তে ভেসে গেছে হাসপাতাল চত্বর। অন্য হাসপাতালগুলোতে আহতদের ঢল নেমেছে। এর একটি ইমাম খোমেনি হাসপাতাল। ইমার্জেন্সি ইউনিটে রোগীদের চাপ বেড়েছে ভয়াবহ। একজন চিকিৎসক একে রক্তস্নান বলে অভিহিত করেছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের যুদ্ধকালীন চিফ অব স্টাফ আলি সাদমানিকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া ইস্পাহানে আরও তিনজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কখন তাদের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইরানি গণমাধ্যম বলছে- ইসরাইলি ভূখণ্ডে ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় ও তীব্র’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি চলছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় এসব তথ্য রীতিমতো বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। ইসরাইল যেভাবে ইরানে হামলা করছে তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ। তারা সেখানকার শীর্ষ সামরিক, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও বহু পারমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। হামলা হয়েছে তেলের ডিপোতে। টেলিভিশন স্টেশন আইআরআইবি’তে এবং হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। এসবই বলে দেয় ইরান পুরোদমে যুদ্ধ করছে। ইরানকে ধ্বংস করে দিতে চায় তারা। একই সঙ্গে টিভি স্টেশন ও হাসপাতালে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তারপরও ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলছেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরিণতি হবে ইরাকের প্রয়াত নেতা সাদ্দাম হোসেনের মতো। ইরানে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে চায় ইসরাইল ও পশ্চিমা বিশ্ব। তবে জোর করে ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা হবে কৌশলগত ভুল- এমন মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সহ তার টিম তড়িঘড়ি করে কানাডার জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে দেশে ফিরেছেন। তা নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা। কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিতে পারে। তারই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ট্রাম্প তাড়াহুড়ো করেছেন। এ জন্যই ভূমধ্যসাগরে তিনি মোতায়েন করেছেন যুদ্ধজাহাজ নিমিটজ। অন্যরা বলছেন, তিনি যুদ্ধ থামানোর জন্য তড়িঘড়ি করে ফিরে গেছেন। অবশ্য এ কাজে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্যবহার করতে পারেন। তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, সংঘাতের বাস্তব সমাপ্তি চান, শুধু অস্ত্রবিরতি নয়। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে পালাতে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, ইরানকে তিনি কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে দেবেন না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করা হলে তা সংঘাত বাড়াবে না, বরং সংঘাতের ইতি টানবে।
পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। কোনো পক্ষই পিছপা হওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ইসরাইলের ক্রমাগত হুমকির বিরুদ্ধে আরও জোরালো হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরাইলের ওপর নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের ঢেউ আছড়ে পড়বে। এটা খুব দ্রুত হবে বলে জানান তিনি। গত কয়েকদিনের তুলনায় সোমবার দিবাগত রাতে ইরানের হামলা বেশ জোরালো ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই হামলায় ইসরাইলের সামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। আইআরজিসি বলেছে, মঙ্গলবার ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর ও মোসাদের অপারেশনাল সেন্টারে আঘাত করেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাসনিম নিউজ একাধিক ছবি প্রকাশ করেছে যাতে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরে আগুন জ্বলছে বলে দেখা গেছে। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরাইল এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তারা যেভাবেই হোক ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে চাইছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুর তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সত্যিকার ইতি চান তিনি। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরাইলের হামলার মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অধিকার। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানানোর পর যেন নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের জ্বালানি সরবরাহকারী বিমানগুলো ইউরোপে পাঠাচ্ছে তারা। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থানগুলোতে সামরিক সেনা ও সরঞ্জাম বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওদিকে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা করতে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ অথবা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে পাঠাতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটি জানিয়েছেন তিনি। সিবিএস নিউজের এক্সের এক পোস্টে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সত্যিকার ইতি চান ট্রাম্প। তবে এটা পারমাণবিক ইস্যু নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে হতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর অর্থ হচ্ছে ইরানকে সম্পূর্ণরূপে পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে।
এদিকে ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস। তিনি বলেছেন, বিশ্বের মধ্যে আমরা ইসরাইলের বড় বাণিজ্য অংশীদার। যার মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ চলতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইউরোপীয় অংশীদারদের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। আর এ সময়ের মধ্যে ইসরাইলকে অস্ত্র দেয়া যাবে না। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পুনরায় সংলাপ শুরু করার আহ্বানও জানিয়েছেন আলবারেস। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর শান্তি অর্জনের জন্য ইইউ যেভাবে কাজ করেছিল, সেভাবেই ইরান-ইসরাইল নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিরোধিতা করার কথা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, কাজাখস্তানের আসতানায় উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল সামরিক অভিযান শুরু করায় মধ্যপ্রাচ্যে হঠাৎ করে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করি, যা অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে লঙ্ঘন করে।
পাঠকের মতামত
পরম করুণাময় মহান আল্লাহর কাছে ইরানের জন্য সাহায্য চেয়ে দোয়া করুন সবাই। বাঁচার আর কোন বিকল্প নাই।
ট্রাম্প বুশের মতোই। সে মুসলিমদের খুনি। দেখো গাজা। সবকিছু ট্রাম্পের তৈরি। আর ইরানেও সে একই কাজ করবে।
Muslim countries should try to kill to people immediately one is mad Trump & another one is netenahu
আল্লাহ তোমার সামনে আমরা খুবই অসহায়। কাফির, ইহুদী ও মুশরিকরা আমাদেরকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। আল্লাহ আমরা গুনাহগার বান্দা। তোমার করুণা, দয়া ও রহমত ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। আমরা তোমার সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে আছি। ইরানকে আল্লাহ তুমি বিজয় দান করো। অন্যথায় আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এই কাফের, ইহুদীরা একে একে অনেকগুলো দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। আল্লাহ তুমি তোমার গায়েবী সাহায্য দ্বারা ইরানসহ প্রতিটি মুসলিম দেশকে রক্ষা করো। আমাদের অকৃতজ্ঞতা ও গুনাহের জন্য মাফ করে দাও।
TRUMP is as like as Bush. He is KILLER of Muslims.
ইসরায়েল আমেরিকার পক্ষে প্রক্সি ওয়ার চালাচ্ছে।
The world is fully enveloped by the people of cheap cowards. If you can’t do anything, do one thing, be a man and show your manly power for Islamic Republic Of Iran. Iran is the last “Trump Card” for the Muslims to walk heads high!