ঢাকা, ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

চক্ষুবিজ্ঞানে বিশৃঙ্খলা

প্রকৃত আহতরা ফেরারি

সাজ্জাদ হোসেন
১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

জুলাই আন্দোলনে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে আহতদের অনেকেই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। অনেকে সুস্থ হলেও বাড়ি না ফিরে হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। নানা ঘটনা প্রবাহে ঈদুল আজহার আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাইকে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দেয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু ঈদ শেষে আবার তারা হাসপাতালে আসলে পূর্বের বিশৃঙ্খলার জন্য কর্তৃপক্ষ আর তাদের হাসপাতালে রাখতে অস্বীকৃতি জানায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা শেষ হওয়ায় গত ৪ঠা আগস্ট অনেককে ছাড়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু তারা সেটি ছিঁড়ে ফেলে হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ঈদের পর সবাই একসঙ্গে হাসপাতালে ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত আহতরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। যাদের পলাতক উল্লেখ করে হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত আহতদের ৮ জন গতকাল জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দ্বারস্থ হন। ফাউন্ডেশন থেকে দুইজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তির পরামর্র্শ দেয়া হয়। বাকি ছয় জনকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে বাড়িতে ফেরার পরামর্শ দেন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর।

জুলাই আন্দোলনে হবিগঞ্জ মডেল থানার সামনে ১৮ই জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় মো. রিমন মিয়া। আহতের পর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত বছরের ২০শে জুলাই চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পরবর্তীতে আবার সমস্যা হলে  বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত ২৯শে এপ্রিল রিমন চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে আবার ভর্তি হন। চিকিৎসকরা জানায়, একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বল বসাতে হবে। কিন্তু ২৮শে মে হাসপাতালটির কর্মচারীদের সঙ্গে রোগীদের স্বজন ও জুলাই আন্দোলনে আহতদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার পর হাসপাতালের সবধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ঈদ শেষে ১২ই জুন আবার হাসপাতালে ঢুকতে চাইলে বাধাপ্রাপ্ত হন রিমন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, হাসপাতালে ঢুকতে না পেরে আমি দুই দিন হোটেলে থেকেছি। পূর্বে আমি যেহেতু পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলাম তাই শুক্রবার রাতে হাসপাতালটিতে যাই থাকার জন্য। কিন্তু সকালে আমাকে আনসার সদস্যরা হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। তিনি বলেন, আমার কাছে আর কোনো টাকা নেই। সারাদিন কিছু খাইনি। ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার টাকাও নেই। উপায় না পেয়ে আমরা কয়েকজন আহত জুলাই ফাউন্ডেশনে আসি। আমাদের দুইজনের চোখের অবস্থা দেখে সিইও স্যার আমাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তির জন্য যাওয়ার পরামর্শ দেন। রিমন বলেন, আমরা জুলাই আন্দোলনে প্রকৃত আহত। অথচ চিকিৎসার জন্য আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। 

রানা হোসেন নামে আরেক আহত বলেন, জুলাই আন্দোলনে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। পরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভর্তি হই। ঈদের আগে আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী ঈদের আগে বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত দেয় যে, আহতরা ঈদে বাড়িতে যেতে পারবে। ঈদের পরে আবার পুনরায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিবে। কিন্তু কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সবাই হাসপাতালে আসে না। পরে আমি কোনো ছাড়পত্র না নিয়েই ময়মনসিংহে যাই। কিন্তু চোখে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে আসলে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমি উত্তরায় আরেক জুলাই যোদ্ধার বাসায় আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জুলাই ফাউন্ডেশনে আসলে ৫০০ টাকা দিয়ে আমাকে বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। তিনি বলেন, চোখে প্রচণ্ড ব্যথায় আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার চক্ষু পরোপুরি বাতিল হওয়ার পথে। আমাদের চিকিৎসার কাগজপত্র ও ফাইল হাসপাতাল আটকে রেখেছে। যাযাবরের মতো ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। 

ইমরান হোসেন নামে আরেক আহত বলেন, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলমের পরামর্শে ঈদে বাড়িতে যাই। কিন্তু ঈদের পরে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে এসে দেখি কোনো চিকিৎসক নেই। একটু পরে দুইজন আহত বাইরে যায় ওষুধ আনতে। কিন্তু তারা যখন হাসপাতালে ঢুকতে যায় তাদের আর ঢুকতে দেয়া হয়নি। পুলিশ বাধা দিয়ে বলে, জানে আলম স্যারের নির্দেশ যারা ঈদে বাড়িতে গেছে তারা আর হাসপাতালে ঢুকতে পারবে না। তারা সবাই পলাতক হিসেবে গণ্য হবে। গতকাল পুলিশ আমাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাকে কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। আমার কোনো চিকিৎসা লাগলে সিএমএইচ কিংবা ইস্পাহানী হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে আসলে আমাদের সবার হাতে ৫০০ টাকা করে দিয়ে বাড়ি ফিরতে বলা হয়।

 

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status