প্রথম পাতা
ইউনূস-তারেক বৈঠক
ময়নাতদন্ত
মিজানুর রহমান
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
দূরত্বের মূলে ছিল নির্বাচন প্রশ্নে অবিশ্বাস। দু’পক্ষের মাঝে জমে ছিল ঘন কালো মেঘ। কিছু লোক সরকার ও বিএনপি’র স্বাভাবিক সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলছিল পরিকল্পিতভাবে। তাদের টার্গেট ঘোলা পানিতে মাছ শিকার! এ জন্য সেনা নেতৃত্বকেও পক্ষভুক্ত করার অপেচেষ্টা হয়। সব মিলে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। যার প্রভাব পড়ে সরকারের কাজকর্মে-গতিতে। পুরো বিষয়টিকে বেশ জটিল রূপ দিতে সক্ষম হয় দুরভিসন্ধিতে মত্ত স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। কিন্তু না, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থাৎ দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিচক্ষণতায় যড়যন্ত্রকারীদের কূটকৌশল আপাতত ভেস্তে গেছে। সরকারপ্রধান এবং বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর দাবি- এক ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যকার শুক্রবারের একান্ত বৈঠকটি। তার আগে কয়েক মিনিট ছিল দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ফটোসেশন। তাতে ক্যামেরার সামনেই তাদের আন্তরিকতাপূর্ণ বাক্য বিনিময় হয়। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে পারস্পরিক জানা-বোঝার সুযোগ হয়েছে জানিয়ে উভয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে- ড. ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যকার শুক্রবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তটি ‘হুমজিক্যাল’ ছিল না। এটি আয়োজনে অনেককে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সেই তালিকা দীর্ঘ। সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, উভয়ের ঘনিষ্ঠ এবং কল্যাণকামী দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের অন্তত দু’জন উপদেষ্টা এবং চূড়ান্ত বিচারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের আন্তরিকতায় দূরত্ব ঘুচিয়ে বৈঠকটির আয়োজন সম্ভব হয়েছে। সূত্রের ভাষ্য ছিল এমন, ‘দৃশ্যত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিএনপি’র তরফে লন্ডন বৈঠকের প্রয়োজনীয় ব?্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এটা অস্বীকারের জো নেই যে, উভয় পক্ষের দূরত্ব ঘোচাতে বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা, উভয়ের পছন্দের একজন রাষ্ট্রদূত (চুক্তিতে নিযুক্ত) একজন আন্তর্জাতিক খ?্যাতিসম্পন্ন ফটোসাংবাদিক এবং তারেক রহমানের বিশ্বস্ত সহযোগী একজন ব্যারিস্টার। তারা দিন রাত খেটেছেন। লন্ডন এবং ঢাকার টাইম জোনের ব্যবধানকে বিবেচনায় রেখে তারা উভয়ের মধ্যে বার্তার আদান-প্রদানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার কঠিন সময় পার করেছেন। তারা মিটিং আয়োজনের চেয়ে আউটকামকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও ঐতিহাসিক ওই বৈঠক পরবর্তী যৌথ বিবৃতি প্রচারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি’র এক সময়ের জোট সঙ্গী জামায়াতসহ অভ্যুত্থানের পক্ষের অনেক রাজনৈতিক দল। একটি বিশেষ দলের সঙ্গে রাষ্ট্রের যৌথ বিবৃতিতে বিষ্ময় প্রকাশ করে তারা বলছে- এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য মোটেও অনুকূল নয়, বরং এটা নৈতিকতা বিরুদ্ধ। এটি একটি দলের প্রতি সরকারপ্রধানের অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য এসেছে। তাদের অভিযোগ লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার তুলনায় সংস্কার ও বিচার গুরুত্ব পায়নি।’ ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক- সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, লন্ডন বৈঠক সরকার ও বিএনপি’র মধ্যে সদ্ভাব নিয়ে এসেছে। কারণ ওই বৈঠকের আগে সরকার এবং বিএনপি’র নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। যেখানে আত্মসমালোচনার সুযোগ পেয়েছে উভয়ে। সূত্র মতে, বৈঠকে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন উভয়ে। তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনের এই সুযোগকে কোনো অবস্থাতেই নষ্ট না হওয়ার ওপর জোর দেন। তারেক রহমান বাংলাদেশ নিয়ে তার আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন। ড. ইউনূসও নিজের রাজনৈতিক অভিলাস না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেন। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই মর্মে ড. ইউনূস চ্যাথাম হাউসে যে বক্তৃতা করেছেন সে প্রসঙ্গও আসে আলোচনায়। ড. ইউনূস খোলাসা করেই বলেন- তিনি জাতিকে একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চান। এ নিয়ে জাতির কাছে তার কমিটমেন্ট রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় যেন নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি নিশ্চিত করতে দল হিসাবে বিএনপি’র ইতিবাচক ভূমিকা আশা করেন।
সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রশ্নে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তারেক রহমান তার প্রশংসা করেন। গ্রহণযোগ্য এক্সপার্টদের নিয়ে কমিশনগুলো গঠনের জন্য সাধুবাদ জানান। তারেক রহমান সংস্কার প্রশ্নে তার দল ঘোষিত ৩১ দফার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, মানুষ যদি তাদের ম্যান্ডেট দেয় তবে তারা সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বিচার প্রশ্নেও তারা ইতিবাচক থাকবেন। ড. ইউনূস মানুষের ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেন। বলেন, যেনতেন নির্বাচন মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায় না। এজন্য সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় তারেক রহমান এপ্রিলের প্রথমার্ধে কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। সেই যুক্তিতেই তিনি রমজানের আগে নির্বাচনের প্রস্তাব করেন। তখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি সাপেক্ষে প্রস্তাবিত সময়ে নির্বাচন হতে পারে। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এটা ছিল প্রথম সাক্ষাৎ। তবে গত ১০ মাসে তাদের মধ্যে একাধিকবার টেলিফোনে আলাপ হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পাঠকের মতামত
"অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থাৎ দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিচক্ষণতায় যড়যন্ত্রকারীদের কূটকৌশল আপাতত ভেস্তে গেছে।" ------ তাহলে যড়যন্ত্রকারী আছে দলের ভিতরেই যেটা তাদের কথা-বার্তায় ফুটে উঠেছে ।
Let's start 'March for Yunus' campaign for keeping Dr. Yunus' government in power until all reforms are completed, all trials of the BAL atrocities, crimes, and corruptions are completed, and all judgments are carried out. Only then we can talk about elections. For this goal, we would like to see the former prime minister of Bangladesh, Ms. Khaleda Zia, should come out and stand beside in solidarity with Dr. Yunus.
বৈঠকে কী আলোচনার মৃত্যু ঘটেছে যে ময়না তদন্ত হলো?
ডক্টর ইউনুস পক্ষপাতদূষ্ট আচরণ করেছেন এই বৈঠক করে।