ঢাকা, ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট

সেবা চালু হলেও পরিস্থিতি থমথমে

সুদীপ অধিকারী
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
mzamin

জুলাই আহতদের সঙ্গে হাতাহাতি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে ১৮ দিন কর্মবিরতির পর অবশেষে চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু হয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে পুরোদমে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অপারেশনসহ হাসপাতালটির সকল বিভাগের সেবা চালু করা হয়। তবে ছাড়পত্র দেয়ার পরও জুলাই আহতরা হাসপাতাল ত্যাগ না করা ও ছুটিতে থাকা অন্য আহতরা ফেরত এলে নতুন করে আবারো ঝামেলা বাধার আতঙ্ক কাজ করছে চিকিৎসক-নার্সদের ভেতরে। তাই হাসপাতাল জুড়ে আনসারের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে পোশাকি পুলিশ। সেবা চালু হলেও পুরো হাসপাতালে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। 

গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই হাসপাতালটির সকল বিভাগ চালু করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে সেবা নিচ্ছেন। প্রয়োজনমতো রোগীদেরকে ভর্তিও করা হচ্ছে। শুরু হয়েছে প্যাথলজি সেবাও। গত ১৮ দিন ধরে ভৌতিক পরিবেশ বিরাজ করা পুরো হাসপাতালে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। আর নতুন করে যেন হাসপাতালে কোনো হট্টগোল না বাধে এজন্য হাসপাতালে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন বাহিনীর সদস্যদের। একে একে রোগী তার স্বজনদের সঙ্গে এসে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন হাসপাতাল থেকে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থেকে আসা সাদিয়া আক্তার নামে এক রোগী বলেন, আমি গত এক মাস ধরে আমার চোখের যন্ত্রণায় ভুগছি। আমি ঈদের আগে একবার এসেছিলাম। তখন হাসপাতাল বন্ধ থাকায় দুই-একদিন অপেক্ষা করে আবারো বাড়ি ফিরে যায়। এরপর চোখের যন্ত্রণায় থাকতে না পেরে ঈদের পর গত ১০ই জুন আবারো এই হাসপাতালে আসি। কিন্তু তখনো চিকিৎসা পাইনি। তখন আমাদেরকে জানানো হয়েছিল আজকে হাসপাতাল খুলতে পারে। তাই এই কয়েকদিন একটি আবাসিক হোটেলে ছিলাম। আজকে সকালবেলা হাসপাতালে চলে এসেছি। কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেখে ভালো লাগছে। এই সেবা যেন বন্ধ না হয়। একটা সরকারি হাসপাতাল দিনের পর দিন এইভাবে বন্ধ থাকলে আমাদের মতো দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের শারীরিক কষ্টের সঙ্গে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থেকে আসা আব্দুল গনি নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার ভাইয়ের ডান চোখে সমস্যা। একটি দুর্ঘটনায় তার চোখে আঘাত লাগার পর থেকে সে আর ডান চোখে কিছু দেখে না। নোয়াখালী সদর হাসপাতাল থেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা রেফার করে দেয়। গত সপ্তাহে তাকে নিয়ে আমরা ঢাকা এসে দেখি এই হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে। শনিবার খুলবে। তাই এই কয়েকদিন এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। আজকে এসে ডাক্তার দেখালাম। এখন একটু স্বস্তি লাগছে। এদিকে, হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ থকায় ঈদের দিন থেকে চোখে রক্তঝরা নিয়ে নিচতলার বেঞ্চে শুয়ে রাত কাটানো টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বয়োবৃদ্ধ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭ই জুন ঈদের দিন সকালে আমাদের এলাকায় একজন শত্রুতা করে আমার চোখে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। ওই আঘাতে আমার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আমার মাথা, নখ, মুখ, কান দিয়ে রক্ত বের হয়। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল থেকে আমাকে ঢাকার এই চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেদিন এখানে এসে আমি কোনো চিকিৎসা পাইনি। আমার ডান চোখ দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে ও ব্যথা করছে। প্রথমে আমাকে ভর্তি দিলেও সিট নেই বলে নিচের বেঞ্চে ফেলে রাখা হয়। পরে চারতলার এই বেডে আসি। কিন্তু বেডে এসেও চিকিৎসা পাচ্ছিলাম না। আজ থেকে ডাক্তাররা আসছেন। চিকিৎসা দিচ্ছেন। খুব ভালো লাগছে। টানা ১৮ দিন বন্ধ থাকা হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাত্র চারজন রোগীর মধ্যে একজন এন.পি-৪০ নম্বর বেডে শুয়ে চিকিৎসা নেয় মো. শাহীন। তিনি বলেন, গত মাসের ২৪ তারিখে ভোলা থেকে এসে আমি এই হাসপাতালে ভর্তি হই। আমার চোখের ছানি অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই এত সব কাণ্ড। মারামারি। হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেল। তারপরও চিকিৎসার আশায় হাসপাতালেই পড়েছিলাম। স্বপন নামে আরেক রোগী বলেন, এই কয়দিন আমরা কীসের মধ্যদিয়ে দিন পার করছি তা শুধু আমরাই জানি। কেউই আসেনি। খোঁজও নেয়নি। আজ থেকে সকল বিভাগ চালু হয়েছে। চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু করেছে। আমরা চাই কোনো সরকারি হাসপাতাল যেন আর কোনোদিন এইভাবে দিনের পর দিন বন্ধ করা না হয়। সাধারণ মানুষ যেন তাদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা ঠিকঠাক পায়। 

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আহতদের চিকিৎসা সমন্বয়ক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা বলেন, আজ (শনিবার) সকাল থেকে আমাদের সকল বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা পুরোদমে কাজ করছেন। এখন সবকিছু স্বাভাবিক। আশা করছি, আর কোনো বিভ্রান্তি বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে আবার সেই আস্থা ফিরে আসবে। 

হাসপাতালে পুলিশ মোতায়নের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন, হাসপাতাল ও হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগীদের নিরাপত্তা এবং হাসপাতালে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পুলিশের উপস্থিতি থাকবে।  

এসব বিষয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, শনিবার সকাল থেকে হাসপাতালে পুরোদমে সেবা চালু হয়েছে। আমরা এভাবেই রোগীদের সেবা দিতে চাই। একইসঙ্গে আমার হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের নিরাপত্তা ও তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে দিতে চাই। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status