বৈঠক টার্নিং পয়েন্ট

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন পেছানো বার্তাকে ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ’ বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে এই দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারেন। 

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ সব কথা বলেন। বৈঠকের পরপর গাড়িতে উঠেই তারেক রহমান প্রথম টেলিফোনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে। এরপর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আজকে জাতির অনেক প্রতীক্ষিত একটি সুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমরা অপেক্ষা করছিলাম যে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠকটি প্রধান অনুষ্ঠিত হয়, প্রায় দুইঘণ্টার এই বৈঠক নিয়ে গোটা জাতি উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষায় করছিল এবং সবাই অপেক্ষা করছিল যে, আমি যে কথাটি আগেই বলেছিলাম, এই বৈঠকটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। আল্লাহ্‌র কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, সত্যিকার অর্থেই বৈঠকটি একটা টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করলাম বৈঠকের পরপরই একটা যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যে ঘোষণায় বলা হয়েছে, আমাদের দুই নেতার বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান ছিল নির্বাচন ইস্যু। সেই নির্বাচন ইস্যুতে তারেক রহমানের যে প্রস্তাব, এপ্রিলে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে- সেটা উপযুক্ত সময় নয়, বিধায় তাকে এগিয়ে নিয়ে আসা। সেই সেক্ষেত্রে গোটা জাতি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করলো যে, প্রধান উপদেষ্টা এটাতে সম্মত হয়েছেন, তারা ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এর মাধ্যমে তারেক রহমান আবার প্রমাণ করলেন তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে দলগুলো রয়েছে, সেই দলগুলোর নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রনায়কোচিত যে গুণগুলো তার মধ্যে রয়েছে, সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। প্রথম একটি বৈঠকে, যেটা গোটা জাতি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল, সেই বৈঠকটিতে তিনি আল্লাহ্‌র রহমতে সফল হয়েছেন। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সকল নেতা-কর্মীর পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এই সভাটিতে তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সব কিছু অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থা কাটিয়ে তিনি এবং তারেক রহমান, এই দুই নেতা আবার সামনের দিকে আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করতে হবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, অতীতে যে সমস্ত ছোটখাটো কথা-বার্তা হয়েছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে সামনের দিকে জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে এবং যেটা বলা হয়েছে- সমস্যাগুলোকে সমাধান করে নিয়ে আমরা যেন অতিদ্রুত একটা নির্বাচন যেটা বলা হয়েছে যে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, সেই নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে যেতে পারি এবং জাতির যে আকাঙ্ক্ষা সেটা পূরণ করতে পারি এবং ১৫ বছরেরে এই ফ্যাসিস্টদের ধ্বংস করা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যে কাঠামো, সেই কাঠামোকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপান্তরিত করতে পারি। এই বিষয়টা সবচাইতে গুরুত্বপূণর্, আমরা প্রায় ১৫ বছর পরে গণতন্ত্র উত্তরণে একটা সুযোগ পাচ্ছি।
গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে জীবনদানকারী নেতা-কর্মী ও জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আত্মত্যাগকারীদের সকল শহীদ এবং দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি তারেক রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৈঠকের পর আমাদের সঙ্গে উনার কথা হয়েছে। উনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তার মাতা আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং তাকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র একটা দিনের ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে- একটা চর্চার বিষয়, এটা একটা কালচার- সেই কালচার আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। সারাক্ষণ আমাদের মধ্যে বকাবকি, গালিগালাজ, সোশ্যাল মিডিয়াতে বকাবকি, ওমুকখানে বকাবকি না করে আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে একযোগে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা দেশকে পুনর্গঠনের জন্য, নতুন বাংলাদেশ গঠন করার জন্য এগিয়ে যাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন ও আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্বপ্ন, যেসব শহীদ প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ্‌ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।