প্রথম পাতা
হাই ভোল্টেজ লন্ডন বৈঠকে দৃষ্টি সবার
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
উপলক্ষ মর্যাদাপূর্ণ আরেকটি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ। সঙ্গে বৃটেনের রয়েল ফ্যামিলি, দেশটির সরকার এবং কমনওয়েলথ লিডারশিপের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করার সুযোগ। ওয়াকিবহাল সূত্রমতে পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডনে ‘ল্যান্ডমার্ক ভিজিট’ হতে চলেছে। আজ তিনি রাজা চার্লস থ্রির হাত থেকে কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ গ্রহণ করবেন। পরবর্তীতে রাজার অডিয়েন্স তথা তার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসবেন। সেগুনবাগিচার নথিপত্র বলছে- কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে বৃটিশ রাজপরিবারের এমন অডিয়েন্স এটাই সম্ভবত প্রথম। তাছাড়া বৃটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এরইমধ্যে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল তার সঙ্গে দেখা করেছেন। গণতন্ত্র চর্চার পীঠস্থান বৃটেনের ঐতিহ্যবাহী চ্যাথাম হাউজে খোলামেলা বক্তৃতা করেছেন তিনি। তাছাড়া বৃটেনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্লোবাল পারসোনালিটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তথা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক দৃষ্টি কাড়ছে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের। ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের চোখও লন্ডনের সেই বৈঠকে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে হবে হাই ভোল্টেজ সেই বৈঠক। যেখানে একান্তে কথা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে।
বিবিসি’র ভাষ্য মতে, এমন এক সময়ে বৈঠকটি হচ্ছে, যখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বেশ কিছু ইস্যুতে বিএনপি ও সরকারের টানাপোড়েন চলছে। বিএনপি’র একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি নেতা তারেক রহমান আর অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠকের বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেই যোগাযোগ করা হয়। প্রথম দিকে বিএনপি প্রস্তাবিত বৈঠকটির ব্যাপারে অতটা আগ্রহী ছিল না। তবে নির্বাচন প্রশ্নে আলোচনা হতে পারে, সেই বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত দলটি বৈঠকে সম্মতি দিয়েছে। বৈঠকটি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে মনে করেন ক্ষমতার সিঁড়িতে অপেক্ষমাণ দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি মতে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বৈঠকটিকে দেখছেন দু’পক্ষের মধ্যে আস্থার সংকট কাটানোর উদ্যোগ হিসেবে। প্রধান উপদেষ্টার বৃটেন সফরের খবর প্রকাশের পর থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা আলোচনা চলছে।
খবর বেরিয়েছে- লন্ডন বৈঠকে প্রাধান্য পেতে পারে নির্বাচনে দিন-তারিখ চূড়ান্তকরণের বিষয়টি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা অতিব জরুরি কিছু সংস্কার করে এপ্রিলে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই সরকার আদৌ নির্বাচন করতে চায় না- এমন অভিযোগ তুলে গত ক’মাস ধরে রাজনীতিতে এক ধরণের অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে ভোটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে। এপ্রিলে ভোটের ঘোষণাকে বিএনপি মেনে নেয়নি আবার একবাক্যে প্রত্যাখ্যানও করেনি। এরইমধ্যে আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে শুক্রবার (১৩ই জুন) লন্ডনে অনুষ্ঠেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ বা বৈঠক। বৈঠকে ভোটের দিন-ক্ষণ, সংস্কার, জুলাই সনদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কী বোঝাপড়া হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল। রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, রোজার আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সময় নির্ধারণ করতে পারলে রাজনৈতিক বোঝাপড়া স্বস্তিদায়ক হতো। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন আসন্ন লন্ডন বৈঠকে হয়তো সরকার এবং বিএনপি’র অবস্থানের মধ্যবর্তী অর্থাৎ ডিসেম্বর বা এপ্রিল নয়, ফেব্রুয়ারিতে ভোটাভুটির প্রশ্নে সমঝোতা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এই বৈঠকটি যাতে হয়, এ ব্যাপারে সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ভূমিকা রাখেন। পরে দু’পক্ষের ইচ্ছায়, বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে বাড়তি আগ্রহে তা চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। তারা এই বৈঠককে দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য হিতকর হবে বলে মত দেন।