প্রথম পাতা
ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত, ‘মব ভায়োলেন্স’ সহ্য করা হবে না
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
আসছে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গনে অফিসার্স অ্যাড্রেসে তিনি এই কথা বলেন। ঢাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এই সভায় অংশ নেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকেও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কর্মকর্তারা অংশ নেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে শুরুতে আধা ঘণ্টার ভাষণে সেনবাহিনী প্রধান পুরো পরিস্থিতি অবহিত করেন। এরপর সোয়া এক ঘণ্টা সময় ধরে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
বৈঠকে সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী সদস্যরা সারাদেশে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তার প্রশংসা করেন এবং বলেন, তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব সেনাবাহিনী যাতে এই দায়িত্ব শেষ করে ব্যারাকে ফিরে যেতে পারে। বৈঠকে প্রসঙ্গক্রমে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি আসলে সেনাবাহিনী প্রধান এ নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন এবং জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। জানুয়ারির শুরুতে নতুন নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি। মানবিক করিডোরের বিষয়ে যে আলোচনা আছে অফিসারদের প্রশ্নে এই প্রসঙ্গও আসে। এ বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। জাতীয় ঐকমত্যেরও প্রয়োজন আছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সেনা প্রধান ইংরেজিতে এক বাক্যে বলেন, ‘দেয়ার উইল বি নো করিডোর’। দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল থেকে পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা হতে পারে এমনটা উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
জাতিসংঘ কর্তৃক জুলাই-আগস্ট বিষয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তার প্রসঙ্গও আসে অফিসারদের আলোচনায়। প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি কেন এই প্রশ্ন তোলা হয়। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংষ্কারের যে প্রক্রিয়া চলছে এ প্রসঙ্গও উঠে বৈঠকে। এ বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, কি সংস্কার হচ্ছে, কিভাবে সংস্কার হচ্ছে এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনাও করা হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। স্থানীয় মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতাদেরও মতামত নেয়া প্রয়োজন।
পোশাক শিল্প খাতের পরিস্থিতিও উঠে আসে বৈঠকের আলোচনায়। একের পর এক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি বলে মত দেয়া হয়।
গত নয় মাস ধরে এক ধরণের অভিভাবকত্বহীন অবস্থা অনুভব করছেন উল্লেখ করে সেনা প্রধান বলেন, একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। নির্বাচিত সরকার আসলে সার্বিকভাবে দেশের পরিস্থিতি আরো স্থিতিশীল হবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, সেনাবাহিনী এমন কোনো কাজ করবে না যা দেশ ও জনগণের ক্ষতি হয়। অন্য কাউকেও এমন কাজ করতে দেয়া হবে না।
সেনাবাহিনী প্রধান ‘মব ভায়োলেন্স’-এর বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, এখন থেকে এসব আর সহ্য করা হবে না। আসন্ন ঈদুল আজহায় মানুষ যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেন সেনাপ্রধান। বলেন, অন্তবর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি, সহযোগিতা করে যাব।
পাঠকের মতামত
এমন সুন্দর বক্ত্যব্য হাসিনার শাসনামলে শোনা যায়নি, যখন ভারতকে করিডোরের নামে স্বার্বভৌমত্ব দিয়ে দেয়া হয়েছিল ।
ধন্যবাদ সেনাপ্রধানকে। উনি খুবই ভদ্র, স্থির এবং সঠিক সময়ে দেশের প্রয়োজনে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যেমন করেছিলেন ৫ আগস্ট এ। স্যালুট
যুগে যুগে যে কোন গনতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্ররা জীবন দিয়েছে।সফল ও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এনসিপির মতো ছাত্ররা মবতৈরী করেনি।টোকাইয়ের দল গঠন করেনি।এই কথিত সমন্বয়কদের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে হবে।তাই সেনা প্রধানের বক্তব্য সময়োপযোগী।সেনা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Salute
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হওয়া উচিত। ছাত্ররা শুধু নির্বাচনের জন্য জীবন দাণ করেনি।
সেনাপ্রধান এই ধরনের বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে কিনা, তা আইনগত ভাবে দেখা উচিত। এই দেশে এমন সেনা প্রধান আগেই কখনো দেখা যায়নি। তবে জনগণ জেগে আছে। কোন কাহিনী কাজ হবেনা।
তুমি কিছু একটা কর ভাই। আর সহ্য হচ্ছে না।
অভিনন্দন
ধন্যবাদ সেনাপ্রধানকে। উনি খুবই ভদ্র, স্থির এবং সঠিক সময়ে দেশের প্রয়োজনে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যেমন করেছিলেন ৫ আগস্ট এ। স্যালুট
সেনাপ্রধান কি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নাকি সরকারী নীতি নির্ধারক? আমার বিশ্বাস ওনি প্রায়শই নিজের সীমাবদ্ধতা ও জনগণ কতৃক প্রদত্ত সীমারেখা ভুলে যান।
বিদেশী মদদে ও পরিকল্পনায় দেশের আপামর মানুষকে খুন করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় সরকার পরিচালনার যে নীল নক্সা একেছিল রক্ত পিপাসু খুনী হাসিনা তা ভেবে বিভীষিকায় শরীর শিউরে উঠে। কথায় বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ। এই বিভীষণ-বাহিনীর হাত থেকে আমাদের মজলুম মানুষকে বাচানোর জন্য আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অনেক অনেক সাহসীকতার সহিত মানুষ খেকো স্বৈরাচারের মোকাবিলা করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করেছে। খোদার দরবারে লাখো লাখো শুকরিয়া। আমাদের গর্বের সেনাবাহিনীর সম্মান ও গৌরব আরো উচ্চতর আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী প্রধানকে five star general পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সহ আগামী নির্বাচন-উত্তর সরকারের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি। যেহেতু তিনি স্বৈরাচারী কুলঙ্গার সরকারকে হঠানোর জন্য সশরীরে মাঠে ছিলেন এবং এখনো মাঠে আছেন সেহেতু তাকে five star general পদ দিয়ে ভূষিত করা সরকারের প্রধান কর্তব্য বলে মনে করি।
স্যার, সঠিক মতামত দিয়েছেন।ধন্যবাদ