ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

নয়া বিতর্কে এনসিপিতেই চাপান-উতোর

স্টাফ রিপোর্টার
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

নয়া রাজনীতির বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও স্বস্তিতে নেই জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি। রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত সব ইস্যুতে জড়িয়ে যাচ্ছে দলটির নাম। অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সঙ্গেও বাড়ছে দূরত্ব। এক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা কী হবে সেটিও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে তর্ক-বিতর্কের বৃত্তে আবদ্ধ এনসিপি। বিষয়গুলো নিয়ে আত্মসমালোচনা আছে দলটির অন্দরেও। কার্যকর কৌশল নিয়ে আগাতে না পারলে এনসিপি’র ভবিষ্যৎ রাজনীতি শঙ্কায় পড়বে বলে মনে করেন দলটির কোনো কোনো নেতা। 

টানা তিনদিনের আন্দোলনের পর শনিবার সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর আহ্বানে এ আন্দোলন শুরু হলেও এটি ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে এনসিপিসহ জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তি অংশ নেয়। কিন্তু আন্দোলন সফলের পরপরই উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দু’টি ফেসবুক স্ট্যাটাস ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে চলা আন্দোলনের সময়ের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা এবং মাহফুজের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়। এসব ঘটনায় জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র সংগঠনের মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হয়েছে। দল দু’টির নেতাকর্মীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া। 

এ বিরোধ এমন এক সময় সামনে আসে যখন জুলাই অভ্যুত্থানে নৃশংস গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দলটির বিচার কার্যক্রম নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কথা জুলাইয়ের শক্তিগুলোকে। কিন্তু তারা সেটি না করে পুরনো আলোচনা সামনে এনেছেন বলে মনে করেন দলটির কেউ কেউ। তাদের মতে এ বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার সময় ছিল, এমন সময় এটি সামনে এনে আওয়ামী লীগের গণহত্যাকে বৈধতা দেয়া ও বিচার কার্য থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। 

বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথার লড়াইয়ে এনসিপি ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-এর নেতারা। একে অপরের উদ্দেশ্যে তীর্যক বাক্য ছুড়ছেন তারা। এনসিপি ও বাগছাস নেতারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের ভূমিকা সামনে আনছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কর্মসূচিতে গোলাম আযমের নামে স্লোগান দেয়ার সমালোচনা করে ফেসবুকে বক্তব্য দিচ্ছেন অনেকে। সমালোচনা করতে গিয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্যও দিচ্ছেন কেউ কেউ। বিষয়গুলো নিয়ে অস্বস্তি এনসিপি’র অন্দরে। দলটির অনেক নেতা মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকারসহ সব দলকে আমরা দূরে ঠেলে দিচ্ছি এটি কীভাবে সম্ভব। এমনটা হলে আমাদের বন্ধু কে? এভাবে রাজনীতি হয় না। এনসিপি’র অভ্যন্তরীণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা চলছে। এমনকি ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের ব্যানারের কর্মসূচি নিয়ে এনসিপি’র বিবৃতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। 

এনসিপি’র সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসুদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, এমন বিভাজন আর বিভক্তি কারও জন্যেই কল্যাণ বয়ে আনবে না। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে যে বিভক্তি কিংবা বিভাজনকে আপনারা উস্কে দিচ্ছেন, এর পরিণতি পুরো জাতিকেই ভোগাবে। শুধুই বলবো আপনারা ফাঁদে পড়েছেন, অথবা অজান্তে নিজেরাই নিজেদের জন্যে ফাঁদ তৈরি করছেন। বলে রাখলাম। এবার অন্তত থামেন।

দলটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও অনেকে এসব বিষয়ে কথা বলছেন। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথের আন্দোলন সফল হয়েছে। যে আন্দোলন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি’র না হলেও পুরো স্টেক নিজের দাবি করতে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলেন, আওয়ামী লীগ বয়ানে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার পচা রাজনীতি না করে নতুন কিছু করতে হবে। কারণ চেতনা ব্যবসা ছুড়ে ফেলেছে এ দেশের মানুষ। বয়ান হবে জুলাই কেন্দ্রীয়। বাগছাস নেতা আবু বাকের মজুমদারের ও আব্দুল কাদেরের কথা উল্লেখ করে একজন বলেন, ডাকসু’র রাজনীতিও শেষ এদের। শিবিরের সঙ্গে ক্যাচাল করলেই এক্স ছাত্রলীগ ভোট দেবে না। তারা বামকে ভোট দেবে। আত্মসমালোচনাও আছে কারও কারও। একজন তো এমনও বলেছেন যে, এনসিপি বিপুল ভোটে সরকার গঠন করলেও ৬ মাসও টিকতে পারবে না। কারণ রাজনৈতিক বোঝাপড়া, শিষ্টাচার, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সব বিভাগেই আমরা জিরোর কাছাকাছি। 

শাহবাগে জাতীয় সংগীত ইস্যুকে যে ধর্মীয় ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে এনসিপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন একজন। শিবিরের কিছু লোকজন গায়ে পড়ে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য কারও কারও। একজন বলেন, যার নিজস্ব কোনো রাজনীতি নেই সে খোঁচাখুঁচি করে প্রাসঙ্গিক হতে চাচ্ছে। ফলে গণরাজনীতির মাঠ নষ্ট হচ্ছে। যাদের মাঠে বন্ধু নেই তারা প্রাসঙ্গিক হতে চাচ্ছে। 

এ ছাড়াও হাসনাতের ডাকে যারা মাঠে এসেছে তাদের দূরে ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন একজন। ভোটের লড়াই নিয়ে বলা হয়, বাম কখনো এনসিপিকে ভোট দেবে না। এদের ফাঁদে পড়লে রাজনীতি শেষ। আর জাতীয় সংগীত বিরোধীতা করা ছেলেটি শিবিরের ছিল না। কিন্তু বাকের এর দায় শিবিরকে দেয়ার চেষ্টা করবে? এটা হাসিনা স্টাইল মন্তব্য করে একজন বলেন, বাকের একেবারে সব শেষ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রধানের ভার নিতে পারছে না। 

এনসিপি’র বিবৃতি: এদিকে একাত্তর ও শাহবাগের আন্দোলনে গোলাম আযমের নামে স্লোগান ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছে এনসিপি। গতকাল এক বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা, এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মত, পক্ষ এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলেও একটি পক্ষ সচেতনভাবে দলীয় স্লোগান এবং বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। যা জুলাই পরবর্তী সময়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এনসিপি’র কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি। ফলে যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষটিকেই বহন করতে হবে। এনসিপিকে এর সঙ্গে জড়ানো সম্পূর্ণ অহেতুক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এনসিপি মনে করে বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়সমূহ তথা, ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ এর যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত। যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট  রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে। 
 

পাঠকের মতামত

বাংলাদেশের জনগণ এখন চেতনা ব্যবসা খায় না।সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এদেশসহ পুরো পৃথিবীতে ইসলাম বিজয়ী হবেই।ইনশাআল্লাহ

মোঃ মাকছুদুর রহমান
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:২৮ অপরাহ্ন

Dear Sir, I am writing to express my concern regarding the repeated non-publication of my submitted opinions in your esteemed newspaper. Over time, I have shared my thoughts on various reports and notices, always with the intention of contributing meaningfully to public discourse. However, I have noticed that none of my submissions have been published in the Opinion section in online. Most recently, I submitted a response to the above report, but once again, my opinion was not published. I fully understand that editorial discretion and certain guidelines are followed before publishing any content, but I would be sincerely grateful if you could kindly inform me of the reasons why my opinions have not been accepted for publication so far. If there are specific areas where I may improve, whether in tone, content, or format, I would appreciate your feedback. This would help me align better with your editorial standards in the future. On the other hand, if my writing is not aligned with your requirements or expectations at all, I will respectfully refrain from making further submissions. I would be thankful if you could kindly respond to this query via email at your convenience. Your feedback will be highly valued and will help me decide my course of action going forward. Thank you very much for your time and consideration. Warm regards, Fakhruddin Ahmed FCMA, FCA

Fakhruddin Ahmed FCM
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:৫২ অপরাহ্ন

হঠাৎ নেতা হলে যা হয়, এন সি পির বেশির ভাগ নেতাদের এই অবস্থা।

Kazi Mominul Islam
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৭:৪২ অপরাহ্ন

কারো পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান করছি।

Jihad
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:৪০ অপরাহ্ন

যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনদের (শিবির) নিষিদ্ধ করা উচিত।

Shariful Islam
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:৪৬ অপরাহ্ন

Jamat is the most opportunist party in Bangladesh.

Fazle Ahmed
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:১৪ অপরাহ্ন

Amra asa korbo, sobai grouping bad dia ekdom 1 jhot hoya samner dike agaia jan. Grouping hole kew konoi subidha korte parben na bole dilam.

Akash Roy Chowdhury
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:১৮ অপরাহ্ন

Ziaur Rahman didn't give citizenship to Golam Azam. It happened after 1991.

Shumon
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৫১ অপরাহ্ন

জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো ৭২ এর সংবিধানেের ১৩ নং আর্টিকেল এর ধারায় শুধু জামায়াত ইসলামী নয় ধর্ম ভিত্তিক সব দল তখন নিষিদ্ধ ছিলো। মেজর জিয়া ক্ষমতায় আসার পর জামায়াত ইসলামী সহ সকল ধর্মভিত্তিক দলকে উন্মুক্তত করেন শুধু তাই নয় জামায়াতের প্রধান নেতা গোলাম আজমকে নাগরীকত্ব প্রদান করেন। এখন এই জামায়তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি যা হাস্যকর।

মিলন আজাদ
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status