প্রথম পাতা
তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় হচ্ছে ঢাকায়
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনারের ঢাকা মিশন তিন বছরের জন্য চালু করতে খসড়া সমঝোতায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট জমা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন। ওনাদের সঙ্গে সরকারের অনেকদিন ধরে আলোচনা চলছিল। সংস্থাটি বাংলাদেশে একটি অফিস খুলতে চাচ্ছে। এই আলোচনায় একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া সমঝোতা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে। এটা আমরা কয়েকজন উপদেষ্টা মিলে পরীক্ষা করবো। ফাইনাল খসড়া করে মানবাধিকার কমিশনার কার্যালয়ের প্রধান ভলকার তুর্কের কাছে পাঠাবো। আসিফ নজরুল বলেন, এটা করার পর আশা করি, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমঝোতা সই করতে পারবো। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস হবে। এই অফিস হবে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য। চুক্তির দ্বিতীয় বছরে দুই পক্ষের সম্মতিতে নবায়ন পর্যালোচনা করা হবে। আমরা আশা করি, আগামীতে এবং আমাদের সরকারের আমলেও যদি কোনো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের যে মানবাধিকার বিষয়ক রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো আছে, তার পাশাপাশি জাতিসংঘের এই অফিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মামলা বাণিজ্য এবং ভুয়া মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে নতুন সংশোধন যুক্ত করা হচ্ছে। এতে করে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলে বিচার কাজ শুরুর আগে আদালত অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারবে। আসিফ নজরুল বলেন, আজকের বৈঠকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি কার্যবিধির একটা সংশোধন হয়েছে। আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত, আমরা এগুলো সবাইকে জানানোর চেষ্টা করি। তার মধ্যে একটা হচ্ছে ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা করা, আরেকটি হচ্ছে মিথ্যা মামলা করে অর্থাৎ হয়তো মামলাটি সঠিক কিন্তু সেখানে অনেক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করে এক ধরনের মামলা বাণিজ্য করা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে যত বড় বড় আইনজীবী আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে, অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা একটি সিআরপিসি-তে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি। তিনি বলেন, একটা হত্যা মামলা যখন দায়ের করা হয় সেটা তদন্তে দুই-চার বছর লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক ধরনের মামলা বাণিজ্য থাকে। এখানে যারা আসামি হন তারা কয়েক বছর ধরে একটা আশঙ্কার মধ্যে থাকেন যে, কখন গ্রেপ্তার হবে বা মামলা বাণিজ্য হয় কিনা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা একটা নতুন বিধান করেছি। বিধানে বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে উনার যদি মনে হয় করা যৌক্তিক, তাহলে উনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলতে পারেন যে মামলার তদন্তের বিষয়ে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে। সেই প্রাথমিক রিপোর্ট যখন তদন্ত কর্মকর্তা জমা দেবেন তখন পুলিশ কমিশনার কিংবা পুলিশ সুপার তাকে বলবেন যে, এই প্রাথমিক রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে। জমা দেয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যদি মনে হয় মামলার মধ্যে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে তার মধ্যে ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগই আসলে নেই, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল স্টেজেই ওই মামলা থেকে আসামিদের মুক্ত করে দিতে পারবেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে যেসব মামলায় গ্রেপ্তার বাণিজ্য বা মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, অসংখ্য লোককে আসামি করা হচ্ছে, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের আদালত বিচার শুরু করার আগে মুক্তি দিতে পারবে। এর ফলে ভুয়া মামলা থেকে আশা করি, রেহাই পাওয়া যাবে। তার মানে এই না যে তদন্ত থেমে থাকবে। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার স্টেজে পুলিশ যদি দেখে যাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে আসলেই পরবর্তী সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে, পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার সময় সেসব ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে জমা দিতে পারবে।