প্রথম পাতা
এনবিআর’র চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা, কর্মসূচি প্রত্যাহার
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুন ২০২৫, সোমবারজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে এনবিআরের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা (এসেনশিয়াল সার্ভিস) ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এদিকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের সব কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের দপ্তর ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করেন। তাতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। এর আগে গত মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তারা এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে গত সপ্তাহে অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন। এরপর শনিবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়, যার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সরকার কঠোর অবস্থানের কথা জানায়।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার আশা করে, তারা আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
এনবিআর সংকট সমাধানে ৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি: ওদিকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান সংকট দ্রুত নিরসনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জনস্বার্থ রক্ষায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণার প্রস্তাব (মন্ত্রিসভায়) অনুমোদন করা হয়েছে।
ওদিকে, রাতে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।