প্রথম পাতা
আবু সাঈদ হত্যা মামলা
২৬ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
স্টাফ রিপোর্টার
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ জমা দেয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ই জুলাই। মামলার ৩০ আসামির মধ্যে পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। সোমবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন চার্জ দাখিলের উপর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউটর এমএইচ তামিম, মিজানুল ইসলাম, শহীদুল আলম সরদার, ফারুক আহমেদসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
প্রতিবেদনে অপরাধ সংঘটনে আসামিদের যৌথ দায় ও ঊর্ধ্বতন অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে ১১ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া মারধর করেন। তিনি সাঈদকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান মাসুদ তার গলা চেপে ধরেন। কিন্তু দমে না গিয়ে আবু সাঈদরা আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে ১৬ই জুলাই আবু সাঈদরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওইদিন দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পার্ক মোড় এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ।
এ ঘটনায় ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আসামিরা হলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হাসিবুর রশিদ বাচ্চু, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান ওরফে বেল্টু, উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. আবু মারুফ হোসেন টিটু, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম। আসামিরা তাদের পদ অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থেকে যৌথভাবে নির্দেশনা দিয়ে তাদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আসামি এএসআই (সশস্ত্র) মো. আমীর হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে গুলি চালিয়ে নিরস্ত্র শহীদ আবু সাঈদকে হত্যা করে এবং কমপক্ষে চারজনকে আহত করে। এ ছাড়াও অন্যান্য আসামিরা তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে এই হত্যাকাণ্ড, আক্রমণ ও নির্যাতনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কিংবা সহায়তা করে। এ ছাড়াও হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তনে বাধ্য করে।
শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই আন্দোলনে আবু সাঈদ একজন আইকনিক শহীদ ছিলেন। নিরস্ত্র আবু সাঈদকে ঠাণ্ডা মাথায় খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপরেই আন্দোলনে তীব্রতা পায়। শেখ হাসিনার পতন হয় এবং বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করে। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৪শে জুন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আমরা রিপোর্ট পর্যালোচনা শেষে ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিচারের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন বিচার সেই গতিতে এগোচ্ছে। এটাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা এবং পাশাপাশি ন্যায়বিচারের সকল স্ট্যান্ডার্ড এ দুটোকে মেইনটেইন করে আমরা চলছি। তিনি বলেন, বিচারকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিচার কাজ সমাপ্ত করতে হবে। সেজন্য তাড়াহুড়ো করে মোবাইল কোর্টের মতো মামলার বিচার শেষ করা এখানে সম্ভব নয়। বাকি বিচার প্রক্রিয়া কতোটা দ্রুত এগোবে এটা আদালত নির্ধারণ করবেন। আমরা একদিনও বেশি সময় নিচ্ছি না, নেবোওনা। যথাসময়ে বিচার শেষ করার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা সেটা করবো। বাকিটা নির্ভর করবে আদালতের কার্যধারার ওপর।
উল্লেখ্য, আজ ১লা জুলাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হবে কি না সে বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।