ঢাকা, ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

মানবিক করিডোর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, মানবিক করিডোর নিয়ে আমাদের কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা হয় নাই। কারও সঙ্গে কোনো কথা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। খলিলুর রহমান বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ইস্যুটি উত্থাপন করেছিলেন। জাতিসংঘকে একটি শান্তিপূর্ণ সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান করেছিলেন। আমরা আনন্দিত যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে সাড়া দিয়েছে। ১০৬ টি দেশ এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানায়। একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি সম্মেলন আয়োজন করা একটি বিরল উদাহরণ। আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সচিবালয়ে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। 

উপদেষ্টা বলেন, এই সমস্যার সমাধান কী? এর সমাধান প্রত্যাবাসন। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমরা আন্তর্জাতিক একটা কনসেনসাসে পৌঁছেছি। জাতিসংঘ মহাসচিব মার্চে এসে বলে গেছেন, এই সমস্যার সমাধান কেবল মাত্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসনের যে প্রথম পদক্ষেপ, মানে কারা ফেরত যাবেন সেটা নিয়ে মিয়ানমার সরকারের থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৮ লাখ রোহিঙ্গার নাম কয়েক দফায় আমরা মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠাই ভেরিফিকেশনের জন্য। গত ৮ বছর ভেরিফিকেশনের কোনো আপডেট জানা যায়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার জান্তা সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। তারা জানায়, আড়াই লাখ রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার প্রত্যাবাসন যোগ্য হিসেবে নির্ণয় করেছেন। বাকিদের ছবি-তথ্য নিয়ে সমস্যা ছিল। সেগুলো নিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে বসবেন। এই সিদ্ধান্ত গত মাসের  বিমসটেক বৈঠকে আমি এবং মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা দেই। 

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের অধীনে ৯০ শতাংশ রাখাইন আর নেই। এটার অধিকার নিয়ে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। আলোচনা চলছে। আমাদেরকে আরাকান আর্মি সুস্পষ্টভাবে বলেছে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেবেন। আরাকানের যুদ্ধাবস্থা এখনো নিরসন হয়নি। রাখাইন অঞ্চলে ব্যাপক খাদ্যাভাব, ওষুধের অভাব। মানবিক সংকট চলছে। আমাদের আশঙ্কা খাবার না পেয়ে রোহিঙ্গারা চলে আসতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছি ৮ বছর ধরে। অতিরিক্ত শরণার্থী আমাদের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, খাদ্য সংকটে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদের সীমান্তে এসে খাদ্য, ওষুধ সহায়তা চেয়েছেন। তারা যদি এখানে আসা শুরু করে তাহলে তো বিরাট সংকট দেখা দেবে। জাতিসংঘ কার্যক্রম যেটা মিয়ানমারে চলছে সেটাও আর চলা সম্ভব নয়। যুদ্ধাবস্থায় মানবিক সহযোগিতা ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ মহাসচিব এসে বললেন, আমরা রাখাইনে ত্রাণ সহযোগিতা দিতে পারি কি না। যেগুলো জাতিসংঘের তরফে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে, এটা বিতরণের বিষয়ে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। এটা কোনো যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। মিয়ানমারে যে প্রশাসন তৈরি হচ্ছে এতে রোহিঙ্গাদের কোনো অংশগ্রহণ দেখছি না। 

উপদেষ্টা বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, মানবিক করিডোর নিয়ে আমাদের কারও সঙ্গে কোনো কথা হয় নাই। কারও সঙ্গে কোনো কথা হবে না। করিডোর হচ্ছে একটা দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। আমরা যেটা করছি আরাকানে সাহায্য-সহযোগিতার উপকরণ যেহেতু কোনো মাধ্যমে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই জাতিসংঘ আমাদের বর্ডার ব্যবহার করে ওপারে নিয়ে যেতে পারি। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগীদের মাধ্যমে রাখাইনে যে চ্যানেলগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করবে। মিয়ানমারে যখন ভূমিকম্প হলো তখন ত্রাণ পাঠিয়েছি। এ রকম সহযোগিতা করা। আরাকানের অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যাবাসন করতে পারবো না।

তিনি বলেন, আমার জাতীয়তা নিয়ে কথা উঠেছে। আমি এখানে আসার আগে আমেরিকায় থেকেছি কিন্তু আমার কোনো আমেরিকান পাসপোর্ট নাই। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের জাতীয়তা নেই।

এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেন খলিলুর রহমান। রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ইউএনডিপি’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেখানে আসন্ন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংঘাতের কারণে সাহায্য সরবরাহের অন্যান্য সকল পথ বর্তমানে অকার্যকর, তাই বাংলাদেশই এখন একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প। প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা হয়েছিল যে, জাতিসংঘ তার চ্যানেলের মাধ্যমে রাখাইনে সহায়তা বিতরণের ব্যবস্থা করবে এবং মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে সহায়তা পৌঁছাতে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে।

আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের কারণ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আরাকান সশস্ত্র বাহিনী যখন মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। নিজ সীমান্ত রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ রাখা বাংলাদেশের কর্তব্য। এ কারণেই, বাংলাদেশ আরাকান সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার স্বার্থে আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। একইসঙ্গে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ বজায় রাখছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট টেকসইভাবে সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মানবিক সহায়তা প্রদানে নিরাপত্তা ঝুঁকি কী কী এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা যিনি প্রদান করেন এবং যিনি গ্রহণ করেন উভয়ের জন্যই নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। ল্যান্ডমাইন ও আইইডি’র মতো বিস্ফোরক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য হুমকি। সহায়তা প্রদানের আগে এই বিষয়গুলো সমাধান করা প্রয়োজন।

সামপ্রতিককালে আরও রোহিঙ্গারা এসেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে আরও বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব না। মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেটি ঠেকাতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করছে। 
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status