প্রথম পাতা
ইসি পুনর্গঠন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এনসিপি
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, ইসি (নির্বাচন কমিশন) পুনর্গঠন ছাড়া কোনো ভোট করতে দেবে না এনসিপি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। আমরা যতদিন বেঁচে আছি, এই কমিশন পুনর্গঠন করে ছাড়বোই। গতকাল ইসির পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের মূল ফটকে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুরে ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা। সমাবেশে দুই শতাধিক এনসিপি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদেরকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ঘোষণাপত্র দেবেন। উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এবার যদি হেরফের হয় আসিফ নজরুল বাংলাদেশে থাকবেন কিনা জানি না।
এ মাঠে ‘কুসুম কুসুম খেলা’ চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, এনসিপি নেতারা যতদিন আছি জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম, নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান নিষিদ্ধ হয়নি।
পাটোয়ারী বলেন, সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা ‘বিএনপির মুখপাত্র’ তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী আরও বলেন, ২০২২-এর যে আইন রয়েছে, সেই আইনের মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার যারা রয়েছেন তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের, যারা গত তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছিল। কর্মকর্তা কর্মচারী অনেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে প্রথম দাবি হলো ইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসি একটি সংবিধান প্রতিষ্ঠান, কিন্তু তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জায়গায় কথা না বলে, একটি নির্দিষ্ট দলের মুখপাত্রের ভূমিকা তারা পালন করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। নির্বাচন কমিশনকে যদি ঠিক করতে না পারি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করি না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই পুনর্গঠন করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশনের প্রথম কেইস হিসেবে ধরে নেবো, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন তারা সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারলে আমরা মনে করবো, জাতীয় নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ফিটনেস রয়েছে।
ড. আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, জনগণের সঙ্গে অনেক ‘বাটপারি’ হয়েছে। জনগণের সঙ্গে আপনি বেঈমানি করেছেন। এ বেঈমানি নিয়ে আপনি সরকারি অফিসে আসতে পারেন না। আমরা আপেক্ষা করছি, ঘোষণাপত্র হবে, ইসি পুনর্গঠন হবে, স্থানীয় নির্বাচন হবে, গণপরিষদ নির্বাচন হবে এবং সুন্দর বাংলাদেশ পাবো।
সমাবেশে এনসিপি’র নেতারা বলেন, ২০২২-এর আইনের অধীনে এ ইসি গঠন করা হয়। এনসিপি চায়, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন ইসি গঠন করতে হবে। অবৈধ নির্বাচনের মেয়র কীভাবে বৈধ হয়? প্রশ্ন রেখে অবিলম্বে ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানান তারা। অন্যথায় এনসিপি নির্বাচন বর্জন করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই এনসিপি’র বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। সকাল থেকেই পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদেরও নির্বাচন ভবনের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল। ভবনের সামনের রাস্তায় বসানো হয়েছিল কাঁটাতারের ব্যারিকেড। বিক্ষোভ সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার প্রতিনিধিদের বক্তব্য শেষে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বক্তব্য দেন।