লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ইসি বদ্ধপরিকর

জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক না কেন নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটের ছয়-আট মাস আগে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা সম্ভব নয়। ভোটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হবে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেয়া। গতকাল আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতে ভোট সংক্রান্ত সরকার ও বিএনপি’র যৌথ বিবৃতির বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি। তবে ফেব্রুয়ারিতে ভোট সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতি এলেও অফিসিয়ালি কোনো কিছু না পাওয়ায় এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি সিইসি।  

এক প্রশ্নের জবাবে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে হোক-আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আগে আমাদের বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে জুন, আমরা সেটি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি ও এগিয়ে যাচ্ছি। সিইসি বলেন, আমরা এখনো প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, কী ধরনের চিন্তাভাবনা করছে, তখন আমরা ধারণা পাবো, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারবো। সরকারের কাছ থেকে যদি ধারণা পাই তাহলে সে অনুযায়ী ইলেকশন ডেলিভার করার জন্য প্রস্তুত আছি এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি। সিইসি জানান, লন্ডনে যে ঘোষণাটা এসেছে অন্যদের মতো মিডিয়া থেকে যেটুকু জানা, এর বাইরে কিছু নেই। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। ভেতরে কি আলাপ হয়েছে। শুধু যৌথ বিবৃতি যেটা দিয়েছে সেটা তো আন-সাইনড। অফিসিয়ালি কোনো কিছু না এলে কিছু করা যাবে না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, নিশ্চয়ই ভেতরে অনেক আলাপ হয়েছে। সেগুলো আমাদের জানতে হবে, সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ইসি হয়তো একটা তারিখ ঘোষণা করবেন। এখন সবকিছু নরমালি দেখলে হবে না। দেশে একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। বিশেষ ধরনের সরকার, বিশেষ ধরনের পরিস্থিতি, একদিকে সরকার বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে, সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করছে। বিচারটা বিচারকের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, তবে ত্বরান্বিত করার বিষয় রয়েছে, এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সংস্কারের বিষয় রয়েছে। এসব নিয়ে সরকারই আলোচনা করছে এ পর্যন্ত। আমাদেরও ধারণা এবং দেশবাসীও আশা করছিল সরকারের পক্ষ থেকে একটা তারিখ ঘোষণা হবে। কিন্তু লন্ডন সফরের পরে দেখলাম যে দায়-দায়িত্ব আমাদের উপরই আসবে বলে মনে হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে আমাদের একটু কথাবার্তা না হলে, কোনো নির্দেশনার জন্য নয়, আপনারা আবার বলে দিবেন না সরকারের কথা মতো সবকিছু করতেছে। আমরা কারও নির্দেশনায় কোনো কাজ করবো না। এটা একদম পরিষ্কার। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, (ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন) এটা এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনী আইন আরপিও অনুযায়ী ইসি গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে। ছয় মাস-আট মাস আগে ওই তারিখে নির্বাচন হবে-এটা বলার বিধান আরপিও-তে নেই। শিডিউল ঘোষণার বিধান বলা রয়েছে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, পরিস্থিতিটা বিশেষ পরিস্থিতি। তা না হলে প্রধান উপদেষ্টা এতদিন ধরে দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করছে? সবাইকে নিয়ে উনি নির্বাচনটা করতে চাচ্ছেন, যাতে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়। উনি দেশে-বিদেশে বলেছেন-আমি এবার জাতিকে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন উপহার দিতে চায়। নির্বাচনটা তো আমাদের দিয়েই করবেন। 

ভোটের ৫০-৬০ দিন আগে শিডিউল ঘোষণার আভাস দিয়ে সিইসি বলেন, যেদিন শিডিউল ঘোষণা করবো তখন ভোটার তালিকা রেডি থাকতে হবে। যে তারিখে আমি শিডিউল ঘোষণা করবো, যেদিন ইলেকশনস ডেট হয় তার মাস দুয়েক আগে শিডিউল হয়। ৫০-৬০ দিন আগে হবে। সামনের কাজগুলোর বিষয়ে সিইসি জানান, ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন করা হবে, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত প্রায়। দল নিবন্ধন ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো বড় কাজ রয়েছে। তফসিল কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ার ফুটিংয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি বলেছি। যখন ভোটের তারিখটি নির্ধারিত হবে তা এখনো হয়নি। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া যাবে। এতদিন তো সরকারই আলোচনা করেছে, আমরা তো আলোচনা করিনি। উনাদের পজিশনটা আমাদের বুঝতে হবে। বোঝার পরে যে দিন- তারিখ ঠিক হবে, অ্যারাউন্ড দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা হবে।  

সিইসি আরও বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথা হয়নি। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যখনই হয় যেন আমরা নির্বাচনটা ডেলিভার করতে পারি। আমি এখন আমার প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে, উনারা কি আলোচনা করেছেন, আমরা নিশ্চয়ই ভারভাল কিছু হবে। এখন আমাদের ধ্যান- ধারণা শয়নে-সপনে নিজেদের প্রস্তুতি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, প্রয়োজন হলে দেখা করতে পারেন তারা। তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতা লাগবে। সরকার আলোচনা করছে, আলোচনার অগ্রগতি, বেসিস কি, চিন্তাভাবনা আমাদের বুঝতে হবে। ভিডিও দেখে তো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। আলোচনাটা সব সময় ওখানে করছে। ভেতরের অন্দরমহলের বিষয়টি বুঝতে হবে। ইসি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক কথা বলতে হয়, আমি এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখি। রাজনৈতিক সচেতন থাকবেন, দলীয় রাজনীতিতে জড়াবেন না-এমন নির্দেশনা কর্মকর্তাদের দিয়েছি। 

নির্বাচনে কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বিষয়টি বারবার স্মরণ করে দেয়ার কথা তুলে ধরেন সিইসি। বলেন, আমরা কারও নির্দেশনায় কাজ করি না। আমরা কারও হুকুমে, কারও নির্দেশনায়, কারও পরিচালনায় আমরা কাজ করি না। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ না করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে যা হয়েছে, কেউ যদি মনে করে কেন্দ্র দখল, বাক্স লুট করবে- তা দিবাস্বপ্ন। সে সুযোগ এবার আর পাবে না, এটা করতে  দেবো না ইনশাআল্লাহ। সবাই সুন্দর নির্বাচন চায়।

এদিকে এদিন সকালে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী মতমিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা রেফারির ভূমিকায়, আমরা রেফারির মতো কাজ করবো। যারা খেলবে খেলুক, যারা জিতবে জিতুক। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হবে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেয়া। ইসি’র শপথ হবে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়া-এমনটা উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, আজকের শপথ হবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার, কোনো দলের জন্য লেজুড়বৃত্তি না করার, আইন অনুযায়ী ও ন্যায়সঙ্গতভাবে কাজ করার।