ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

১০ দিনেও যেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি

সাইয়েদ আবদুল্লাহ
১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

থাইল্যান্ড থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশে ফিরেছেন ৮ই জুন রাতে, এরপর দশদিন পার হয়ে গেল। তবে বহু প্রশ্নের উত্তর রহস্যজনকভাবে 
এখনো মেলেনি। সেসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতেই এই লেখাটার অবতারণা। আব্দুল হামিদের দেশত্যাগ ইস্যু নিয়ে গত ১৫ই মে মানবজমিনে একটা ইনভেস্টিগেটিভ লেখা লিখেছিলাম ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ শিরোনামে।

ওই লেখায় আমি প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছিলাম আব্দুল হামিদের দেশত্যাগ ইস্যুতে কীভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়কে এড়িয়ে শুধুমাত্র লোকদেখানো কিছু একটা করে প্রকৃত বিষয় ধামাচাপা দেয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অন্য চারজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। লেখায় উপস্থাপন করেছিলাম ঊর্ধ্বতন কার কার দায় থাকতে পারে এই ঘটনায়।

কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এবং ঢাকা এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে নিয়োজিত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল ওই ঘটনায়। তাছাড়া পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার দু’জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই চারজনের বিরুদ্ধে নেয়া এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনো কেন প্রত্যাহার করা হয়নি, সেটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আব্দুল হামিদ দেশত্যাগ করার পর দেশের ভেতর চরম সমালোচনা শুরু হয়। তখন সেই ঘটনার তদন্ত করতে দুইটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। একটা কমিটি গঠন করা হয়েছিল পুলিশের ভেতর থেকে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি মতিউর রহমান শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্তের অগ্রগতি কতোদূর, সে সম্পর্কে এখনো কোনো ফলাফল পরিলক্ষিত হয়নি। কী কারণে হলো না, এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার দায় কার?

অন্যদিকে তিনজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অন্য আরেকটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ১১ই মে। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌ-পরিবহন ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। 

উপদেষ্টামণ্ডলীর তিন সদস্য নিয়ে গঠিত এই তদন্ত কমিটি পরবর্তী ১৫ দিনের ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করবেন বলে জানানো হয়েছিল সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে। অথচ তদন্ত কমিটি গঠনের এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে কিনা কিংবা তাদের মতামত কী ছিল- সেগুলো পাবলিকলি জানানো হয়নি। আব্দুল হামিদ দেশে ফেরেন ৮ই জুন, যদি কমিটি যথাযথ নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদন সাবমিট করতো, সেটা ৮ই জুনের আগেই (প্রকৃতপক্ষে মে মাসের মধ্যেই) হয়ে যেতো।

আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ৮ই মে দিনাজপুরে ডিসি অফিসে সাংবাদিক ও বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছিলেন- ‘তাদেরকে (আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে সহায়তাকারীদের) কোনো অবস্থায় ছাড় দেয়া যাবে না। আর যদি শাস্তির আওতায় না আনি, তাহলে আমি সে সময় চলে যাবো (মানে পদত্যাগ করবেন আরকি)।’ 

আব্দুল হামিদ দেশে ফিরে আসার পরও সেই তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ পেলো না, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে কঠোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটারও পরবর্তী কোনো ফলোআপ নজরে পড়লো না। তাহলে কী এই সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট রেজিমের মন্ত্রীদের মতো শুধুমাত্র কথার কথা বলে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চলমান রাখতে চান? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী পরবর্তীতে এই প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়ার তাগিদ অনুভব করেছেন কখনো?

আব্দুল হামিদ দেশে ফিরে এসেছেন এক মাস পরে, ভালো কথা। কিন্তু উনি দেশে ফিরে আসলেই কিন্তু উনার দেশত্যাগের ব্যাপারে সরকারের যে দায়িত্বহীনতা ছিল, সেটা দায়মুক্তি পেয়ে যেতে পারে না।

সরকার যদি মনে করে তাদের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল লোকজন জড়িত ছিল সেই কর্মে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের দায়িত্বশীল বড় পদে বসে থাকা লোকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আলামত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সরকার গত মাসে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে যেভাবে চারজন নিরপরাধ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে  (কিশোরগঞ্জের এসপি, এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশের উপ-পরিদর্শক মর্যাদার একজন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন) শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায্য শাস্তি এখনো কেন প্রত্যাহার করে তাদেরকে স্বপদে বহাল করা হচ্ছে না?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে কার কাছে?

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status