ঢাকা, ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র আত্মবিশ্বাসী ইরান

মানবজমিন ডেস্ক
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইরান-ইসরাইলের সংঘাত। এই সংঘাত এখন আর এ দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ক্রমশ পর্দার আড়াল থেকে সামনে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান-ইসরাইল ইস্যুতে আলোচনার মুখ্য অংশে এখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার একাধিক মন্তব্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে- ইরানে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। এখন শুধু মতৈক্যের প্রয়োজন। হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন তিনি। যদিও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, ট্রাম্প ইরানে হামলার বিষয়ে হয়তোবা দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন। তবে এতে তার হামলার ইচ্ছা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে সকলকে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তিনি আরও বলেন, আপনারা এখন পর্যন্ত যেভাবে আচরণ করেছেন, তা অব্যাহত রাখুন। সেই আচরণই আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চালিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, এই সংকট উতরে যাবে ইরান। এদিকে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। ইরান ইস্যুতে দুই দেশের ফোনালাপ করেছেন দুই দেশের  প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিন। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। সকল পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নেয়ার কথা বলেছেন তিনি। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন বার্তার পর এখনো তেহরান খালি করছেন বাসিন্দারা। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা তেহরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করছি। আয়াতুল্লাহদের শাসন ব্যবস্থার ওপর আমরা প্রবলভাবে আঘাত করছি। পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, সদর দপ্তর ও প্রতীকী ভবনগুলোতে আঘাত হানছি। ওদিকে, ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মার্কিন সিনেট কমিটিকে জানান, ট্রাম্প যেকোনো সময় যে আদেশ দেবেন, তা বাস্তবায়নের জন্য পেন্টাগন প্রস্তুত। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বাড়ছে। ইউএসএস নিমিটজ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের নেতৃত্বাধীন একটি স্ট্রাইক গ্রুপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে গালফ অঞ্চলে যাচ্ছে, যেখানে ইতিমধ্যেই ইউএসএস কার্ল ভিনসন নেতৃত্বাধীন আরেকটি গ্রুপ রয়েছে। ফ্লাইট ট্র?্যাকার অনুযায়ী, ইউরোপ থেকে জ্বালানি ট্যাঙ্কারসহ বিভিন্ন বিমানও সেখানে যাচ্ছে। পাশাপাশি এফ-২২ ও এফ-৩৫ স্ট্রাইক বিমান মোতায়েনের খবরও রয়েছে। সিবিএস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বৃটেনের ডিয়েগো গার্সিয়া বা সাইপ্রাসে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো অনুরোধ করেনি। বৃটিশ একটি সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনে সব ধরনের বিকল্পই বিবেচনায় রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কী করতে যাচ্ছে তার স্পষ্ট ধারণা এখনো পাওয়া যায়নি।

ইসরাইলকে লক্ষ্য করে কড়া বার্তা দিয়েছেন খামেনি। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাওয়া ইসরাইলের দুর্বলতার লক্ষণ। এক্সের এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি। খামেনি বলেন, ইসরাইলের শাসনে তাদের মার্কিন বন্ধুদের হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এভাবে সাহায্য চাওয়া প্রমাণ করে যে, ইসরাইলের শাসনব্যবস্থা কতোটা দুর্বল ও অক্ষম। খামেনি আরও বলেন, আমি জাতিকে বলতে চাই, শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তিনি আরও বলেন, আপনারা এখন পর্যন্ত যেভাবে আচরণ করেছেন, তা অব্যাহত রাখুন; সেই আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যান। এদিকে বৃহস্পতিবার খামেনিকে ফের হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। এদিন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, খামেনিকে ‘আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়া যায় না’। ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পরে ইসরাইলের সোরোকা হাসপাতালে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাসপাতালটির বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড। এরপরই আয়াতুল্লাহ খামেনিকে লক্ষ্য করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, খামেনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তিনি ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চান। হাসপাতালের ওপর হামলার নির্দেশও তিনিই ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন।

শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি ও বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। বৈঠকটি আয়োজনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে একটি সম্ভাব্য দ্বার উন্মোচিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো একক চুক্তির জন্য ইরানকে চাপ দিতে পারেন। বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা ইরানের কাছ থেকে লিখিত বা মৌখিক আশ্বাস চাইবেন যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং এর পেছনে কোনো অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য নেই। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না, তবে পরোক্ষভাবে তারা এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status