প্রথম পাতা
নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া
প্রচারণায় পোস্টার থাকছে না, এক মঞ্চে ইশতেহার পাঠ, যুক্ত হচ্ছে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান
স্টাফ রিপোর্টার
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা-২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিধিমালা অনুযায়ী, এবার নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীরা পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। আর আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ জরিমানা ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আচরণবিধিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান। এছাড়া এক প্লাটফর্মে সকল প্রার্থীর ইশতেহার বা ঘোষণাপত্র পাঠ করা বিধানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার, ডিজিটাল বিলবোর্ডের ব্যবহার এবং মিডিয়াতে সংলাপের সুযোগ। গতকাল কমিশন সভায় আচরণবিধির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, খসড়া আচরণবিধিতে কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। এর কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন ও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেজন্য এই বিধিমালার খসড়া শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করার বিষয়ে আরপিও-এর ধারা ৯১ (ঙ) আচরণবিধিতে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। এটা আগে ছিল না। প্রার্থীর প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না, এবার যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টার ব্যবহার বন্ধে সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল। আমরাও একমত। আর ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা, যেমন সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেয়া তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ভোটার স্লিপের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। টি-শার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, এটার ব্যাপারে শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে। আর্মসের সংজ্ঞার মধ্যে দেশীয় অস্ত্রও যুক্ত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না। মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রচারণার সময় থাকছে তিন সপ্তাহই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসকল প্রার্থী সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনাপর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পরে তাদেরকে সেখান থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কেননা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাই প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকেন। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যেও এটা ছিল। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনে যে স্বাভাবিক শাস্তি ছিল, ছয় মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। এবার জরিমানা সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে। এটিও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ছিল। আর প্রার্থী ও দলের জন্য অঙ্গীকারনামা নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে এই বিধিমালা মেনে চলার ব্যাপারে।
আচরণবিধির গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এটা এবার যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরপিও’র ৯১-এর (ঘ)-তে গুরুতর অপরাধের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তি পেয়ে যায় তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। তবে এখানে একটা প্রটেকশন আছে, সেটা হলো-এটা ইনকোয়ারি কমিটির কাছে যাবে, এরপর তারা ইনকোয়ারি করবে এবং পরবর্তীতে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে। সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে রাখার বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, কমন প্লাটফর্ম বলতে আমাদের যেসব রিটার্নিং অফিসার রয়েছেন সংশ্লিষ্ট আসনে, তিনি সব প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।
এদিকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, সভার আলোচ্যসূচিতে ছিল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্তকরণ ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত। সময়ের অভাবে এবং কিছু উপাত্ত এখনও বাকি থাকায় সীমানা নির্ধারণের আলোচনাটা আজ আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের বিষয়টা সম্পন্ন হবে।