প্রথম পাতা
তবুও চড়া চালের বাজার
স্টাফ রিপোর্টার
২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম খুচরায় কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারিতে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ওদিকে চালের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে প্রধান এই খাদ্যপণ্যটির আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। যদিও বাজারে এখনো চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আমদানির মাধ্যমে বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ না নিলে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৬ই আগস্ট থেকে ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দুই দফা বন্যা দেখা দেয়। এতে আট লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরও চালের সরবরাহ ঘাটতির কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, তাদের গুদামে এখন চালের মজুদ ১০ লাখ টনের নিচে, যা গত ১৫ই আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুদ কমছে। যে হারে চাল বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে, এতে আগামী বছরের জুলাই নাগাদ প্রয়োজনের তুলনায় ১১ লাখ টন চালের ঘাটতি হতে পারে। নিরাপত্তা মজুদ এবং সম্ভাব্য ঘাটতি বিবেচনায় ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা দরকার।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল এবং এক মাস আগের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে মাঝারি চাল (আটাশ ও পাইজাম) কেজিপ্রতি খুচরায় ৭.৮৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। এক মাস আগে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। অন্যদিকে চিকন চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) কেজিপ্রতি ৪.১৭ শতাংশ দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজার, আগারগাঁও ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক মাসে রাজধানীর বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ধানের দাম বৃদ্ধি ও রাইস মিল থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে।
কাওরান বাজারের হাজী রাইস ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী ফিরোজ মানবজমিনকে বলেন, দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি পর্যায়ে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি (পাইজাম ও আটাশ) চালের দাম বস্তায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়েছে। আর মোটা (স্বর্না, ইরি) চালের দাম বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে চিকন চালের দাম কিছুটা কম বেড়েছে। প্রতি বস্তায় চিকন চালের দাম ৫০ টাকা বেড়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। এই বাজারের মেসার্স নোয়াখালী রাইস ট্রেডার্সের আরেক ব্যবসায়ী মো. শাওন বলেন, আটাশ চালের মৌসুম শেষের দিকে। এ ছাড়া বন্যার কারণে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য দাম বাড়তে পারে। তিনি বলেন, প্রতি বস্তায় চালের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।
চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার: এদিকে বন্যা, আন্দোলন ও ক্ষমতার পালাবদলে সরবরাহ ঘাটতিতে চালের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে পণ্যটির আমদানির ওপর থেকে আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে চাল আমদানির ক্ষেত্রে এখন কেবল ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রযোজ্য থাকছে। তাও কমিয়ে ২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
চাল আমদানিতে আগে সব মিলিয়ে শুল্ককর ছিল ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ (২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ২৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর)। গত ২০শে অক্টোবর চালের ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৫ শতাংশ। আর ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তাতে আমদানিকারকদের তেমন সাড়া না মেলায় আমদানি পর্যায়ে সব শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করে এনবিআরকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। ট্যারিফ কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে এনবিআর সবকিছু বিশ্লেষণ করে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় বলে রাজস্ব বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান।
ওদিকে গত ২০শে অক্টোবর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণায় এনবিআর বলেছিল, ওই সিদ্ধান্তের ফলে চাল আমদানির ব্যয় প্রতি কেজিতে ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে বলে তারা আশা করছে। কিন্তু আমদানি না হওয়ায় এ সুফল বাজারে মেলেনি। চালের বাজার দুই মাস ধরেই চড়া। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে গত এক মাসে।