প্রথম পাতা
ডানা’র প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার
বঙ্গোপসাগরে ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় ডানা। শক্তি সঞ্চয় করে ক্রমেই এগিয়ে আসছে ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলের দিকে। ডানায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। তবে এই ঝড়ের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ডানা’র যে গতি-প্রকৃতি, তাতে এর আছড়ে পড়ার সম্ভাব্য এলাকা ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল। তবে বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর ডানার প্রভাব পড়তে পারে। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কোথায় আঘাত হানতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৮ অঞ্চলের নদীবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির আভাস দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য দেয়া পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়। আবহাওয়া অফিস জানায়, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বা পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আরেক বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেছেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ডানার যে গতিবিধি, তাতে এটি ভারতের ওডিশা উপকূলমুখী। ধামারা বন্দরের দিকেই এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রম করার যে এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের উপকূল ডানদিকে। আর ডানদিকে থাকার কারণে বাংলাদেশের উপকূলে এর প্রভাব থাকবে অপেক্ষাকৃত বেশি। বাঁ দিকে থাকলে সাধারণত কম থাকে। এর আগে ২০২২ সালের ২৪শে অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করে। সে সময় এর গতিপথের ডান দিকেই ছিল বাংলাদেশের উপকূল। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় এর উপরের বাতাসের গতিবেগ ও ভূপৃষ্ঠের গতির পার্থক্য বেশি থাকলে এর শক্তি কম হয়। তবে পার্থক্য কম থাকলে শক্তি বেশি হয়। আবুল কালাম মল্লিক আরও বলেন, ডানা যদি উপকূল অতিক্রম করার জন্য দীর্ঘ সময় নেয়, তবে এর প্রভাবও দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হবে। আবার বাতাসের গতিবেগ তখন কেমন আছে, তার উপরও বাংলাদেশের উপকূলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নির্ভর করবে।
এ বিষয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে যে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে, তার অগ্রবর্তী অংশে অবস্থিত একটি ভারী বৃষ্টিযুক্ত অংশ বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে রাত ৩টার মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বুধবার রাতে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বরিশাল বিভাগের ভোলা, পটুয়াখালী জেলার উপরে ভারী থেকে খুবই ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ডানার বহিস্থ মেঘের কারণে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে মাঝারি থেকে ভারী মানের বৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো থেকে প্রাপ্ত বুধবারের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় ডানা ওড়িশা রাজ্যের পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে ২৪শে অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ২৫শে অক্টোবর সকাল ৬টার মধ্যে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থলভাগে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।