বাংলারজমিন
কুমিল্লায় দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ নিহত ২
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারকুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে জেলার সর্বত্রই সহিংসতা এবং অচলাবস্থা বিরাজ করছে। রোববার দুপুরে জেলার পৃথক স্থানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দেবিদ্বার উপজেলা সদরে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বাসচালক নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭০ জন। এদিন সকালে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি রেকার অগ্নিসংযোগ এবং একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ এবং স্থানীয়রা জানায়, সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। দুপুরে জেলার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দেবিদ্বার। সংঘর্ষে মো. রুবেল (৩৪) নামের এক বাসচালক নিহত হয়েছে। উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের সময় তিনি নিহত হন। সে উপজেলার বারেরা এলাকার বাসিন্দা ও প্রান্তিক পরিবহন বাসের চালক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে দেবিদ্বার উপজেলার শিক্ষার্থীরা। এ সময় পৌরসভা ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন রুবেল। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে মহাসড়কের ময়নামতি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। কোটবাড়ী এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ২০-২৫ জন আহত হয়। তাছাড়া দাউদকান্দি এলাকায় সংঘর্ষে ১০-১২ জন আহত হয়। সবমিলিয়ে জেলায় সংঘর্ষে ৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে জেলা সর্বত্রই চরম উত্তেজনা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল এবং নগরীতে সকল দোকানপাট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দেবিদ্বার সার্কেল) শাহ মোস্তফা মো. তারিকুজ্জামান বলেন, দুষ্কৃতকারীরা দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদে হামলা চালায়। এ সময় তারা ইউএনও’র কার্যালয়সহ বেশকিছু স্থাপনায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে। একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এহসান আলী বলেন, সহিংসতায় আহত ১১ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। দু’জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। জেলা প্রশাসক খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কুমিল্লায় হাইওয়ে থানায় হামলা, পুলিশ সদস্য নিহত
এদিকে, কুমিল্লায় হাইওয়ে থানায় হামলা ভাঙচুর লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুরে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় আক্রমণ করে অস্ত্রশস্ত্র লুটপাট করে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের কনস্টেবল এরশাদ হোসেন নিহত হন। হামলাকারীরা থানা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে সকল আসবাবপত্র এবং পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর করে লণ্ডভণ্ড করে পালিয়ে যায়। নিহত কনস্টেবল এরশাদ (৩০) শেরপুর জেলার বাসিন্দা।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুর আহমেদ বলেন, রোববার সকাল থেকে থানার সব পুলিশ ফোর্স মহাসড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ এক-দেড় হাজার দুর্বৃত্ত থানায় ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় তাদেরকে বাধা দিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কনস্টেবল এরশাদ হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে আমার কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং আমাকেও পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। তারা ইচ্ছামতো তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায়। এ সময় থানার সকল অস্ত্র গুলি লুট করা হয়। পুলিশের ব্যবহৃত সব মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, হামলাকারীরা এখনো থানার দুই পাশে অবস্থান করছে। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানাসহ আশপাশের কয়েকটি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও বিপুলসংখ্যক হামলাকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলা করা হয়েছে। এতে এরশাদ হোসেন নামে আমাদের একজন কনস্টেবল নিহত হয়েছে। আমরা ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে জেলার অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে।