ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৪, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

‘৯ এ হয়নি’ নব্বইতে হবে তো!

ইশতিয়াক পারভেজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে
২৬ জুন ২০২৪, বুধবারmzamin

‘যার হয় ৯ তেই হয়, যার হয় না ৯০ তেও হয় না।’ বাংলার এই প্রবাদটা সবারই জানা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা দেখে এক টাইগার ভক্ত সেই প্রবাদটির কথা মনে করিয়ে দিলেন। কারণটাও স্পষ্ট ২০ ওভারের ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৯টি বিশ্বকাপ খেলা টাইগাররা এবারো অর্জনের খাতা ‘শূন্য’ নিয়ে ফিরছে দেশে। অন্যদিকে সাত বিশ্বকাপ খেলা আফগানিস্তান টাইগারদের হারিয়ে নিশ্চিত করেছে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলা। ২০০৭, নিজেদের প্রথম আসরে এক ম্যাচ জিতে সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরের তিন ম্যাচ হেরে বিদায়। এরপর ১৭ বছর পর ফের সুপার এইট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা। কিন্তু এবারো তিন ম্যাচ হেরে বিদায়। এই আসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন সুপার এইটই খেলা। ১৭ কোটি বাঙালির স্বপ্ন আর ক্রিকেট প্রেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে খেলতে আসে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন
চারটির মধ্যে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইট নিশ্চিত করে বাড়িয়ে তোলে প্রত্যাশার পরদ। যার শেষটা হয়েছে চরম হতাশা আর লজ্জায়। মাত্র ১১৬ রান তাড়া করতে নেমে ৮ রানে হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভ্যাইল স্টেডিয়ামে যখন আফগানিস্তান তাদের ক্রিকেটের সূর্যদয় দেখছিল সেখানে বাংলাদেশেরে ভোর হয় বিশাদের আলো নিয়ে। অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নয়া অধিনায়ক দেশবাসীকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েছেন। তবে ক্ষমার চেয়ে সাহসটাই দেখতে চেয়েছিলেন দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা! শান্ত বলেন, ‘বিশ্বকাপের পুরো যাত্রা সম্পর্কে বলবো, আমরা দল হিসেবে বাংলাদেশের সব সমর্থককে হতাশ করেছি। যারা আমাদের খেলা অনুসরণ করেন, সবসময় অনুসরণ করেন তাদের ‘লেট ডাউন’ করেছি। সেই কারণেই আমি দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।’ 

শেষ আটে এসে বাংলাদেশের প্রথম দুই প্রতিপক্ষ ছিল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। দু’টি ম্যাচই শান্তর দল হেরেছে বাজেভাবে। সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন। কিন্তু হঠাৎ করেই উত্তেজান বাড়িয়ে দেয় আফগানিস্তান ও ক্যারিবীয়ান বৃষ্টি। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জমিয়ে দেয় সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়েরে উত্তেজনা। দু’টি ম্যাচ হেরেও শেষ চারে খেলার সুযোগ এসেছিল টাইগারদের। একটি পরিসংখ্যানের বেড়াজালে ফেলে আফগানদের হারালেও তা হয়ে যেত নিশ্চিত। আর তা না হলেও আন্ততো আসরে নিজের চতুর্থ জয়ের সান্ত্বনা নিয়েও দেশে ফেরার সুযোগ ছিল, যার কোনোটাই হয়নি। প্রথম সুযোগটা আসে টসে হেরেও অসাধারণ বোলিংয়ে আফগানদের ১১৫ রানে আটকে দেয়ার পর। বাংলাদেশ ১২.১ ওভারে এই ১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারলেই শেষ চারে নিশ্চিত হয়ে যেতো। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারের দৈন্য ব্যাটিংয়ে সেটি হয়নি। ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। এরপর পর বার বার বৃষ্টির আসা-যাওয়া। তখন তৈরি হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হলেও এগিয়ে থেকে কারা জিতবে সেটাই যেন আরেকটা লড়াই হয়ে ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দেখে একবারো মনে হয়নি বৃষ্টি আইনের হিসাব নিয়ে তারা মাঠে লড়াই করছেন। 

সমীকরণের হিসাবে সেমিফাইনালের স্বপ্নটা যখন শেষ হয়ে গেছে তখন টাইগারদের সামনে জয় দিয়ে লজ্জা এড়ানো লক্ষ্য আসে। এই ম্যাচ জিতলে জয়ের সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে সফল আসর হবে। ১২ ওভার শেষে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪২ বলে ৩২ রান। তখন স্কোর বোর্ডে ৮৭ রান হাতে অবশিষ্ট তিন উইকেট। ক্রিজে তখন দলের হয়ে শুরু থেকে লড়াই করছেন লিটন দাস। তাকে সঙ্গ দিতে এসে একে একে ফিরে গেছেন ৬ ব্যাটার। যার মধ্যে দেশের হয়ে টানা ৯টি বিশ্বকাপ খেলা সাকিব আল হাসানও আছেন। ছিলেন আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। কিন্তু তারা দু’জনই দলকে হারানোর রাস্তাটা করে দিয়েছেন। শুরুটা পুরো আসরে ব্যর্থ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে দিয়ে। আবারো ডাক মারলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে গত ম্যাচে ২৯ রানের ইনিংস খেলে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও, শেষ ম্যাচে ফের ব্যর্থ। চার ম্যাচে এটা তার তৃতীয় ডাক! অন্যদিকে আগের দুই ম্যাচে চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলা অধিনায়ক শান্ত। তবে স্নায়ু চাপের ম্যাচে ফিরেছেন মাত্র ৫ রানে। ২.৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চিন্তার ভাঁজ বাংলাদেশের কপালে। পরের বলেই নাভিনের বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়েই ফিরেছেন সাকিব। তার গোল্ডেন ডাক বেশ চাপে ও বিপদে ফেলে দিয়েছে দলকে। সৌম্য সরকার এসে চেষ্টা করলেও ১০ রানের বেশি আসেনি তার ব্যাটে। রশিদ খান স্ট্যাম্প ভেঙে দেন তার। ৬.৩ ওভারে ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

সেখান থেকে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের দৌড়ে আর ফিরতে দেননি রশিদ। দ্রুতই পরের তিনটা উইকেটও নেন তিনি, ভেঙে দেন বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদণ্ড। দারুণ ছন্দে থাকা তাওহীদ হৃদয়কে ফিরিয়েই মূলত ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের মোড়। ৯ বলে ১৪ রান করেন হৃদয়। এরপর নড়বড়ে মাহমুদউল্লাহকে ১০.৫ ওভারে ফেরানোর পর, রিশদকেও শূন্য হাতে দেখান সাজঘরের পথ। ১১ ওভারে ৮০ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৯২ রানের মাথায় গুলবাদিন নায়েব তানজিম সাকিবকে ফেরালে চাপ আরও বাড়ে। যদিও তখনো ভরসা হয়েই দলকে আগলে ছিলেন লিটন দাস, ছিলেন শেষ পর্যন্ত, তবে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। তাকে দর্শক বানিয়ে অপরপ্রান্ত থেকে তাসকিন ও মোস্তাফিজ আউট হয়ে যান। লিটন ৪৯ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগানরা পেয়ে যায় ভালো শুরু। ১০.৪ ওভারে রিশাদ হোসেনের হাত ধরে আসে প্রথম উইকেট। জমে ওঠা আফগানদের ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছেন তিনি। তানজিদের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ইব্রাহীমকে। ২৯ বলে ১৮ করে আউট হন এই ব্যাটার। ইব্রাহীম আউট হতেই চাপ আরও বাড়ে আফগানদের। পরের ১৮ বলে আসে মাত্র ৪ রান! সেই চাপ ধরে রেখে দ্রুত আরও কয়েকটা উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। মোস্তাফিজ এই ফাঁকে ফেরান আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে। ১২ বলেন ১০ রান আসে তার ব্যাটে। পরের ওভারে আবারো দৃশ্যপটে রিশাদ। ১৬.১ ওভারে থিতু হয়ে যাওয়া গুরবাজকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ফেরান তিনি। ৫৫ বলে ৪৩ রানে আউট হন গুরবাজ। এক বল পর গুলবাদিন নায়েবকেও ৪ রানে ফেরান এই লেগ স্পিনার। পরের ওভারে তাসকিনের শিকার হন মোহাম্মদ নাবী ১ করে।  শেষ দিকে রশিদ খানের ১০ বলে ১৯ রানের ঝড়ে ১১৫ পর্যন্ত পৌঁছায় আফগানিস্তান। মূলত ব্যাট ও বল হাতে রশিদের কাছেই যেন হেরে গেছে সাকিবরা। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status