ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে বন্যা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবারmzamin

সিলেটে আবহাওয়া বার্তায় বৃষ্টির চোখ রাঙানি আছে। মধ্য জুলাইয়ে ফের পাহাড়ি ঢল আসার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে সিলেটে হতে পারে আবারো বন্যা। কিন্তু দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি এখনো চারটি উপজেলা থেকে নামেনি। এই চারটি উপজেলা হচ্ছে; ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ। কুশিয়ারা অববাহিকার জনপদ চার উপজেলা। ইতিমধ্যে জেলার অন্যান্য উপজেলায় পানি কমলেও চার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে বন্যা। গতকাল মাত্র দুই ইঞ্চি পরিমাণ পানি কমেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এই চার উপজেলার মধ্যখানে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদী। এটির সংযোগস্থল সিলেটের উজানের উপজেলাগুলোর পাশাপাশি মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার।

বিজ্ঞাপন
বলতে গেলে মৌলভীবাজারের পানি অপসারণেরও একমাত্র পথ কুশিয়ারা। ফলে অমলসীদ দিয়ে তেমন পানি না এলেও হাকালুকি হাওরের পানির কারণে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমছে ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। আবার বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যায়। এ কারণে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো মানুষের বসবাস। চার উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তায়ও পানি। গত ১১ দিন ধরে চরম দুর্ভোগে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। বন্যা স্থায়ী রূপ নেয়ায় অনাহারে, অর্ধাহারে কাটছে মানুষের জীবন। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- গতকাল তিনি আকাশ পথে ঢাকা থেকে সিলেট এসেছেন। দেখেছেন মিঠামইনের হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, সব নদ-নদী পানিতে টইটুম্বুর। পানি নামার জায়গা নেই। নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত রয়েছে। ফলে ধীরে পানি নামছে। তার মতে; নদীতে পানি না কমলে লোকালয় থেকে কমবে না। কিন্তু এখনো হাওর থেকে নদীতে পানি যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রূপ নিচ্ছে সিলেটের কয়েকটি উপজেলা। এজন্য পানি কমার অপেক্ষায় থাকতে হবে বলে জানান তিনি। বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরে পানি। কুশিয়ারা নদীর তীরে এই দুই উপজেলা সদরের অবস্থান। দুই সপ্তাহ ধরে পানি থাকায় অর্ধেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- আগে ছিল কোমর পানি। কয়েকদিনে ধীরে ধীরে পানি কমে এখন সেটি হাঁটু পানিতে এসে ঠেকেছে। এখন পানি কমছে খুব ধীরে। এ কারণে বিশেষ করে বালাগঞ্জের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে না। উপজেলার ৬০ ভাগ এলাকা পানির নিচে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা হাজারো মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছে না। বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনহার মিয়া জানিয়েছেন- দুই জেলারই পানির বেসিন হচ্ছে বালাগঞ্জ, ওসমানীগর হয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদী। যেটুকু পানি কমছে, উজান থেকে ফের সে পরিমাণ পানি চলে আসছে। তিনি বলেন- বন্যার্তদের মধ্যে খাবার সংকট নেই। কিন্তু পানিবন্দি থাকার কারণে মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। অনেক স্থানে যাতায়াত ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে ফেঞ্চুগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন- ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে হাকালুকি হাওর এসে মিশেছে কুশিয়ারা নদীতে। অন্যদিকে মনু নদী হয়ে পানি আসে। ফলে ফেঞ্চুগঞ্জের হাওর তীরবর্তীর অবস্থা করুণ। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। এসব এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোও কষ্টকর। একই অবস্থা গোলাপগঞ্জের হাওর এলাকারও। বন্যাকবলিত চার উপজেলার মধ্যে ভাটির উপজেলা হচ্ছে ওসমানীনগর। এ কারণে এ উপজেলার পশ্চিম  পৈলনপুর, সাদিপুর ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি সূচনীয়। এই দুই ইউনিয়নে পানি কমছে না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর। উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ জানিয়েছেন- পশ্চিম পৈলনপুর ও সাদিপুরসহ গোটা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। পানি কমছে ধীরগতিতে। যেভাবে রাতারাতি পানি বেড়েছিল সেভাবে কমছে না। এ কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এই অবস্থায় তারা গোটা উপজেলায়ই ত্রাণ কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছেন। তিনি জানান- তার উপজেলায় ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৩৩শ’ মানুষ অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। পানি থাকায় এখন গাড়ির পরিবর্তে নৌকায় মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে- সিলেটের ৯৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২০২টি গ্রাম এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বন্যাকবলিত রয়েছেন ৭ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। ২৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো বসবাস করছে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে পানি কমায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হচ্ছে।

ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি: বন্যাদুর্গতরা এখন ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় গত ৮ দিনে ডায়রিয়া, আরটিআই, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৮২৬ জন। বন্যা ও পরবর্তী সময়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভাগ জুড়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৯৪টি মেডিকেল টিম। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status