শেষের পাতা
ম্যানিলার সম্মেলনে সামাজিক ব্যবসাকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান
মানবজমিন ডেস্ক
১ জুলাই ২০২৪, সোমবারফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এশিয়া প্যাসিফিক কলেজে ২৯শে জুন একাডেমিক ডায়ালগ আয়োজন করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ইউনূস সেন্টার। এশিয়া প্যাসিফিক কলেজের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় এই ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য সামাজিক ব্যবসা অনুশীলনকারী, শিক্ষাবিদ, উৎসাহদাতা (প্রমোটার) এবং সহকর্মীদের একত্রিত করা। এ ইভেন্টটি হলো তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকা অংশীদারদের জন্য ডায়ালগ শেখা ও যুক্ত হওয়া, আইডিয়া বিনিময় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের প্ল্যাটফরম। যা সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক সমাধানের মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে একত্রিতকরণ, সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সমস্যাগুলোকে সমাধানে অবদান রাখে। এতে অভ্যর্থনা সেশনে বক্তব্য রাখেন ফিলিপাইনের এশিয়া প্যাসিফিক কলেজের প্রেসিডেন্ট ড. মা তেরেসিতা পি মেদাদো, মালয়েশিয়ার আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট, ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আবদ আজিজ তাজুদ্দিন, ভারতের অ্যামিটি ইউনিভার্সিটি মধ্যপ্রদেশের প্রো-চ্যান্সেলর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভিকে শর্মা, এভিএসএম, বাংলাদেশে ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ। তারা বাস্তব জীবনের সমস্যা মোকাবিলায় যুব সমাজের মনকে পরিপালনে শিক্ষাবিদদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রথম প্যানেলটি শিক্ষাবিদদের মধ্যে উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করার ওপর জোর দেয়।
প্রাকটিক্যাল শিল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এতে বক্তব্য রাখেন বক্তারা। প্যানেলে ছিলেন গ্রামীণ ফাউন্ডেশন এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালট্যান্ট টু ননপ্রোফিট অর্গানাইজেশন্স-এর প্রতিষ্ঠা অ্যালেক্স কাউন্টস, ফিলিপাইন হাব ইনিশিয়েটর, এইচইসি সোশ্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন, ফ্লারিশিং এন্টারপ্রাইজ কো-ল্যাব, এডজাঙ্কট ফ্যাকাল্ট্রি, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, ফিলিপাইনের এরউইন লিজারোন্দো, ফিলিপাইনের সোসাইটি ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অব প্রোফেশনাল সোশ্যাল এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ (এসএপিএসই)-এর প্রেসিডেন্ট, পালামিগান কো-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রোডমার্ক বারিগা এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্য একাডেমি অব এন্ট্রিপ্রিনিউরস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা পলা মিলস। পাশাপাশি তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের মধ্যদিয়ে উদ্যোগ শুরু করার পরামর্শ দেন।
ধারাবাহিক সহযোগিতা চুক্তি এবং নতুন উদ্যোগের ঘোষণা শেয়ার করেছেন থাইল্যান্ডের কাসেটসার্ট ইউনিভার্সিটির ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারের পরিচালক ড. বোর্ডিন রাসামিথিস, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ অ্যাট দ্যা ফ্যাকাল্টি অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র লেকচারার ও সহকারী ডিন ড. ফারহানা সিদেক, ফিলিপাইনের ফাউন্ডেশন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন প্রোগ্রামের পরিচালক সিরিল মাপুলা, পায়াপ ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারের ব্যবস্থাপক, থাইল্যান্ডের পায়াপ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মাইকেল জ্যাক মিলেম, তাইওয়ানে ন্যাশনাল কাওহসিউঙ্গ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারের উপদেষ্টা ও অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রফেসর লিন ইং শিং এবং ভারতের পার্টনারশিপস ফর দ্য রোটারি অ্যাকশন গ্রুপ ফর কমিউনিটি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের গ্লোবাল ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ ঘোষ।
ডায়ালগে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নির্গমনের একটি বিশ্ব অর্জনের জন্য চেষ্টা করতে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাবিদদের উৎসাহিত করেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি বেঁচে থাকার দক্ষতা হিসেবে সামাজিক বাণিজ্যের দক্ষতা অর্জনেরও পরামর্শ দেন।
এরপর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় দ্য থ্রিজিরো ক্লাব কনভেনশন।
মূল বক্তব্য, প্যানেল সেশন এবং পুরস্কার বিতরণীর মধ্যদিয়ে এই কনভেনশন বিভিন্ন নেতা, পেশাদার এবং সোশ্যাল বিজনেস ও থ্রিজিরো ক্লাব নেটওয়ার্কের বিশেষজ্ঞদের স্বাগত জানানো হয়। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ১৫০ জন অংশগ্রহণকারী এবং থ্রিজিরো ক্লাবের সদস্যরা।
তিনটি থ্রিজেড ক্লাব সদস্যদের মধ্যে প্যানেল আলোচনা হয়। তাতে ক্লাবের তিনজন নেতা একে অন্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। এই ক্লাবে একজন করে ছিলেন তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের। দ্বিতীয় প্যানেলটি ‘গাইডিং গ্রোথ অন দ্য জার্নি টু কাল্টিভেটিং ইয়ুথ লিডার্স ফর এ থ্রিজিরো ওয়ার্ল্ড’ বিষয়ে আলোচনা করে। এতে বক্তা ছিলেন ফাউন্ডেশন ফর ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস তাইওয়ানের প্ল্যানিং স্পেশালিস্ট জুলি জেন, নিগ্রোস ওমেন ফর টুমরো ফাউন্ডেশন, ফিলিপাইনের এডমিন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্টসের পরিচালক রেমন্ড সিরিওস, নেপালের জীবন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মণ্ডল, আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার রিসার্স অ্যান্ড ইনোভেশন বিষয়ক ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর ড. সুরাইয়া হানিম মোখতারম, রোটারি ইন্ডিয়া লিটারেসি মিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ ঘোষ। প্যানেলটি তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেরা থ্রিজিরো ক্লাবস, সাপোর্ট পারসনস, সাপোর্ট অর্গানাইজেশন এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়। নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিটি ক্লাবকে একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার আহ্বান জানান। একে অন্যের বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান। চিন্তা করতে বলেন কীভাবে এর চেয়েও ভালো কিছু করা যায়। তারপর সচেতনতা সৃষ্টি করার পরামর্শ দেন তিনি। আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সমস্যাগুলো আছে তা সমাধানের একটি প্র্যাকটিস ফের করার আহ্বান জানান।