ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বাড়ছে আবগারি শুল্ক

ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের ওপর চাপ বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্কের হার বাড়ানোর প্রস্তাব আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে থাকতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি করের স্তরও বাড়াতে পারে এনবিআর। এটি কার্যকর হলে ব্যাংকে টাকা রাখার খরচ সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজার নির্ধারণ করবে-বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন ঘোষণার পর ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ানো শুরু করেছে। ফলে ঋণের সুদহারও ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। হঠাৎ সুদহার এত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গাড়ি-বাড়ির জন্য ঋণ নেয়া গ্রাহকরা। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংক আমানত থেকে রাজস্ব কেটে রাখা সহজ পন্থা। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যৌক্তিক হবে না। বর্তমানে ব্যাংক আমানতকারী থেকে ছয় ধরনের চার্জ কাটা হয়। এরমধ্যে আবগারি শুল্ক বাড়লে ব্যাংকে নগদ টাকা বা তারল্য সংকট আরও বেড়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন
কারণ ঋণের ওপরও এই কর ধার্য হবে। তখন জনগণ ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন। আস্থাও কমে যাবে। 

প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাবে আমানতের পরিমাণ যদি একবার ১ লাখ টাকা বা তার উপরের স্তরগুলোর সীমা স্পর্শ করে, তাহলে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। একাধিকবার স্পর্শ করলেও একবারই আবগারি শুল্ক কাটা হয়। বর্তমানে ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা ও বিমান টিকিট কেনা, এই দুই খাতের ওপর আবগারি শুল্ক বসে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক নতুন করে সাজানোর ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ যেমন বাড়তে পারে, তেমনই আবার শুল্কের স্তরও বাড়ানো হতে পারে। 

বাজেটে বাড়ছে আবগারি শুল্ক: এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছিল সরকার। দুই অর্থবছর বিরতি দিয়ে এ শুল্ক আবারো বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এক বছরের মধ্যে যেকোনো সময় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ টাকা জমা টাকার ওপর কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। ১ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত স্থিতির ওপর ১৫০ টাকা দিতে হয়, যা আগামী বাজেটে ২০০ টাকা হতে পারে। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হতে পারে। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বর্তমানে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এই ধাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা হতে পারে। প্রথম ভাগে ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা এবং ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার ওপর ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। অর্থাৎ এই স্তরে শুল্ক বাড়ছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। 
বর্তমানে বছরে যেকোনো সময়ে কোনো ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে স্থিতি থাকলে তার ওপর এক্সাইজ ডিউটির পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা। এই শ্রেণির ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের দুটি ভাগে ভাগ করা হতে পারে। ১ কোটি টাকা থেকে ২ কোটি টাকার হিসাবধারীদের অপরিবর্তিত রেখে ২ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হিসাবধারীদের ওপর তা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হতে পারে। আর ৫ কোটি টাকার ওপরে জমা থাকা অর্থের ওপর বিদ্যমান ৫০ হাজার টাকার এক্সাইজ ডিউটি অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৩৫ লাখ। এরমধ্যে যারা এক্সাইজ ডিউটির আওতায় আসবে অর্থাৎ ২ লাখ টাকার ওপরে হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় ৯৯ লাখ। আর ১ কোটির ওপর হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার। 
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ার?ম্যান নূরুল আমিন বলেন, বর্তমানে ব্যাংক আমানতকারী থেকে ছয় ধরনের চার্জ কাটা হয়। এ অবস্থায় নতুন করে আবগারি শুল্ক বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। ব্যাংক আমানত থেকে সহজেই রাজস্ব কেটে রাখা সম্ভব। তাই এভাবে শুল্ক বাড়ানো হলে জনগণ ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে করে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

সুদ হার ১৬ শতাংশে উঠেছে: জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মার্ট (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হার) পদ্ধতিতে সুদহার নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করে। এতে সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। মূল্যস্ফীতি না কমায় স্মার্ট পদ্ধতি তুলে দিয়ে সুদহার বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো সাধারণত সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনা কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুদহার নির্ধারণ করে থাকে। যেসব ব্যাংক তারল্যসংকটে থাকে, তারা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে। আবার সামনে সুদহার আরও বাড়তে পারে- এই আশঙ্কায় ভালো ব্যাংকও উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। তবে প্রতিটি ব্যাংক কিছু আমানত উচ্চ সুদে গ্রহণ করে, আবার কিছু আমানতে সুদহার হয় অন্য ব্যাংকের মতোই। ঋণের ক্ষেত্রেও গ্রাহকভেদে সুদ কম-বেশি হয়।

ব্যাংককাররা জানান, ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহার ছয়-নয় কার্যকর থাকায় গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যে ছিল। সামনে সুদহার বেড়ে কোথায় যাবে, তা বলতে পারছেন না ব্যাংকাররাও। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন নিজাম উদ্দীন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কয়েক বছর আগে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্যাংক থেকে একটি মেসেজ এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, আপনার গৃহ ঋণের সুদের হার ১৯শে মে থেকে ১৬ শতাংশ কার্যকর করা হবে। সেই অনুযায়ী নতুন কিস্তির (ইএমআই) হার নির্ধারণ করা হবে। তিনি জানান, আমার মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো কিস্তি দেয়া লাগতো। কিন্তু নতুন কিস্তির হার যুক্ত হলে এক লাফে প্রায় ১০ হাজার টাকার উপরে চলে যাবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যেই উদ্দেশ্যে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম নতুন করে টাকার অঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।

আরেক ঋণগ্রহীতা ফয়সাল বলেন, ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। যখন ঋণ নেয়া হয়, তখন সুদহার ছিল ৯ শতাংশ, মাসিক কিস্তি ছিল ৩৬ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা। এরমধ্যে বেতন-ভাতা বাড়েনি। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ অবস্থায় ঋণের কিস্তি বৃদ্ধির ঘটনা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় জানিয়েছেন, বর্তমান তহবিল খরচ বিবেচনায় সুদের হার ১৪ শতাংশের নিচে থাকবে বলে তিনি আশা করেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো ১৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছেন। 
 

পাঠকের মতামত

ব্যাঙ্কের আমানতের টাকার উপর শকুনের দৃষ্টি পড়েছে । জনগণ যে পরিমাণ আমানত রেখেছেন, সব নিয়ে ও তারা তুষ্ট হবে মনে হয় না । লুটপাট করতে করতে লোভ এত বেড়েছে তা কন্ট্রোল করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । বাংলাদেশে টাকা রাখাই অনিরাপদ।

Kazi
২৩ জুন ২০২৪, রবিবার, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

ব্যংকে টাকা, লকারে স্বর্ণ কোথাও নিরাপত্তা নেই। তারপর আবার আবগারী শুল্ক। রাখলাম না তোর ব্যংকে টাকা। আমার টাকা আমার কাছেই থাক।

Shariar
৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:১৩ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status