শেষের পাতা
টার্গেট নির্বাচন, এক কাতারে ইসলামী দলগুলো
আহমেদ জামাল
২ জুন ২০২৫, সোমবার
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এক কাতারে আসছে ইসলামী দলগুলো। নির্বাচন এবং সংস্কার ইস্যুতেও একই সুরে কথা বলছে তারা। উদ্দেশ্য আগামী নির্বাচনে শক্ত অবস্থান তৈরি করা। একইসঙ্গে ইসলামী দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনতে পারলে ভোটের রাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা। বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন, কীভাবে হবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট দিকনির্দেশ না থাকলেও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে তারা এগোচ্ছেন। বৃহৎ ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে পেছন থেকে শক্তি যোগাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ইতিমধ্যে পাঁচটি রাজনৈতিক দল এক বাক্সে ভোট পাঠাতে ঐকমত্য গড়ে তুলেছে। দলগুলো হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস। ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, কোনো একটি আসনে একাধিক ইসলামী দলের প্রার্থী থাকলে ইসলামপ্রিয় ভোটাররা বিভ্রান্ত হন। প্রার্থী বাছাইয়ে বিব্রতও হতে হয় ইসলামী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ ভোটারদের। আশা করি আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের এই বিভক্তি থাকবে না ইনশাআল্লাহ। একক প্রার্থী দেবে ইসলামী দলগুলো।
তিনি বলেন, এই ঐক্যে আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আনার চেষ্টা চলছে। এর অন্যতম উদ্দেশ্য বড় জোট করে বিএনপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া কিংবা একতাবদ্ধ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপি’র কাছ থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসনে ছাড় পাওয়া। সমপ্রতি পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে পাঁচ সমমনা ইসলামী দল নিয়ে বৈঠক করেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর চরমোনাই)। তিনি বলেন, একটি বাক্সে ভোট পাঠাতে সমমনা পাঁচ ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতারা একমত হয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার, নির্বাচন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এই সংলাপ করে ইসলামী আন্দোলন। নিবন্ধিত অপর দুই ইসলামপন্থি দল ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলনকেও সমমনা পাঁচ দলের মোর্চায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। যদিও এই দুই দল বিগত আওয়ামী লীগ আমলের ৭ই জানুয়ারির ভোটে অংশ নেয়। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল হাসনাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহকে ইতিমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের মতো খেলাফত আন্দোলনকেও ‘পরিশুদ্ধ’ করে আনা হবে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকতে পারবে না ধরে নিয়েই তৎপরতা চালাচ্ছে দলগুলো। বড় জোট করে বিএনপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া কিংবা একতাবদ্ধ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপি’র কাছ থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসনে ছাড় পাওয়া দু’টি লক্ষ্যই রয়েছে ইসলামী দলগুলোর। দ্রুত নির্বাচনের দাবি পূরণে বিএনপি কাছে টানলেও আগামী নির্বাচনে কতোটা ছাড় দেবে, তা পরিষ্কার না করায় দলগুলো নিজেরা এক হচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপি’র সঙ্গেও রাজনৈতিক আলাপ চালাচ্ছে। এদিকে হেফাজতে ইসলামের ঘনিষ্ঠ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলো ৫ই আগস্টের পর থেকেই বলছে, আগামী নির্বাচনে লক্ষ্য ইসলামপন্থিদের ভোট এক বাক্সে পড়তে হবে। ১৭ই এপ্রিল খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি আলোচনার টেবিলে বসে একই লক্ষ্যের কথা বলেছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। ফলে ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের পর তারাই হবে ধর্মভিত্তিক দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি।
এব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইয়্যুম বলেন, আমাদের চাওয়া আগামী নির্বাচনে প্রতিটি আসনে সমমনা দলগুলোর সম্মিলিতভাবে একক প্রার্থী। এক্ষেত্রে আদর্শিক বিরোধ থাকলেও জামায়াত একমত বলে মনে হচ্ছে। গত ২১শে জানুয়ারি জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে এই দুই নেতার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রয়েছে। ওদিকে গত ২৬শে জানুয়ারি চরমোনাই পীরের সঙ্গে দেখা করতে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ ১০ দফায় একমত হয়ে ঘোষণাপত্রে সই করে দুই নেতা। এর আগে ২২শে জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। তবে আগস্টে খেলাফত মজলিসসহ অধিকাংশ ধর্মভিত্তিক দল বৈঠক করে জামায়াতের সঙ্গে। গত ২৯শে ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফতের সম্মেলনে যোগ দিয়ে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছিলেন, ইসলামী দলগুলোর মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।
সর্বশেষ ৮ই মে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংস্কার, নির্বাচন ও নারী কমিশনের প্রস্তাব ও দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের। মতবিনিময় সভায় জাতীয় নির্বাচনে সম্মিলিতভাবে আসন ভিত্তিক একক প্রার্থী ও এক বাক্সে দেয়ার বিষয়ে কৌশলগত ঐকমত্য পোষণ করা হয়। এ ছাড়া আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরির ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানো এবং প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৭ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়।
পাঠকের মতামত
We are Muslim.We have obligation for votes.We must back to our Allah & should be in face of question for vote.---White Eye.dt.03-06-2025.Pls.press my opinion.
চমৎকার সুযোগ!এখন কওমী ঘরানার কিছু দূর দৃষ্টিহীন আলেম পিঠটান না দিলেই হোল।জাতি ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী দলের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম চায়!!
হাসনাত আমিনি আর খেলাফত আন্দোলনের চরিত্র জাতি জানে। যা ইসলামী আদর্শের বাইরে। ঐতিহ্য আর স্বার্থ ছাড়া তাদের আছে কী ? মাদ্রাসার ক’জন ছাত্র আর উচ্চাভিলাসী কিছু মাওলানা ছাড়া তাদের কোন অবস্থান নাই। তাহলে কেন তাদের পূর্নবাসন করতে হবে। আওয়ামীলীগকে রিফাইন করতে চাইলে বিএনপির দোষ আর এ দালালদের রিফাইন করতে চাওয়াটা দোষের নয় ? ইসলামী দল গুলো যদি আল্লাহর জন্যই কাজ করে তাহলে ঐক্য করতে এত বাধা কোথায়। এত দিন কেন লাগবে সিদ্ধান্ত নিতে ? ময়দানে কাজ নেই কর্মী বাহিনী নেই ঢাকায় বসে ক’জন নেতা হুংকার দিয়ে ইসলাম কায়েম করেন। চরমোনাই ছাড়া খেলাফত মজলিসের কিছু কাজ আছে আর তিন দল তো নেতা আর ঐতিহ্য নির্ভর। ছেলে ভুলানোর গল্প দিয়ে দেশ এবং ইসলাম বাঁচান যায় না। আর এক ইউটোপিয়া হল হেফাজতে ইসলাম।দু চার জন ভাল মানুষ ছাড়া ম কাশেমীতে ভরা হেফাজত। তাদের বৈশিষ্ট্য হল যেথায় দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার দু চার টুকরা মাখন। হায়বে কপাল পোড়া জাতি আমরা। উম্মতের কান্ডারি নাই।
This will be very good idea and I appreciate it for the sake of Islam and sake of Bangladesh. Carry on, In Sha Allah...
বিএনপিকে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিপক্কতা দেখাতে হবে। অন্যথায়, বাঙালিরা তাদের জীবন শিক্ষা দেবে।