শেষের পাতা
সিলেটে পানি বাড়ছে ডাইক ভেঙে প্লাবিত নতুন এলাকা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট ও বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১০টি পয়েন্টে ডাইক ভেঙে ও উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ শহরে ঢুকেছে পানি। কোথাও হাঁটু পরিমাণ পানি। আবার কানাইঘাট সদরে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ২ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী দু’দিন পর বরাকের ঢল নামা কমে এলে কুশিয়ারা নদীর পানি কমবে। একই সঙ্গে সুরমা নদীর পানিও কমে আসবে। গতকাল বিকালে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে- জকিগঞ্জের রারাই, সুপারকান্দি, লোফা কোনা, রামধর এলাকায় ডাইক ভেঙে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে নদী তীর উপচে পানি ঢুকেছে। এতে করে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডাইক ভেঙে যাওয়ায় জকিগঞ্জের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৮৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলা সদরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সন্ধ্যায় সদরের এক তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে ছিল। এদিকে, ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আশঙ্কাজনকভাবে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনের বসতঘরে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। রোববার রাত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া শুরু করেছেন। সিলেটে অন্তত ৬টি উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন জানান, কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় জকিগঞ্জে বারবার বন্যা হচ্ছে। রোববার থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ সেদিকে নজর দেয়নি। নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ বন্ধের জন্য বারবার বস্তার চাহিদা জানানো হলেও সরবরাহ করা হয়নি। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বিয়ানীবাজারে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি, টিলা ধসের শঙ্কা: এদিকে টানা বর্ষণ চলছে বিয়ানীবাজারসহ আশপাশের এলাকা জুড়ে। আবার উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এর পানিও নেমে আসছে। এ অবস্থায় বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা ডুবে গেছে। সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরেই এ অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যার আশঙ্কায় বিয়ানীবাজারে ৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিরণ মাহমুদকে প্রধান করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
এদিকে আবার ক্ষণে ক্ষণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সুরমা-কুশিয়ারার পানি। বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের একাধিক স্থানে পানি ওঠেছে। কুশিয়ারা ও সুরমা তীরবর্তী বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ৪৪ টন চাল, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ১৪৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ আছে। আমরা প্রকৃত বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবো।
অপরদিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার নিদনপুর এলাকায় টানা বর্ষণের কারণে টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা প্রশাসন জানায়, টিলা ধসে নিদনপুর গ্রামের বাসিন্দা কাওছার আহমদের বসতঘরের ভেতরে মাটি ঢুকে পড়ে। এতে ঘরের অভ্যন্তরীণ মালামালসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মোস্তাফা মুন্না ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ টিলা চিহ্নিত করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।