ঢাকা, ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

কুষ্টিয়ায় দুই নদীতে বছরে ২০০ কোটি টাকা লোপাট

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদী থেকে বছরে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার। সরকার রাজস্ব পাচ্ছে মাত্র আড়াই কোটি টাকা। প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন-কেনাবেচা। বালুমহালগুলোতে থাকে অস্ত্রধারী পাহারা। পদ্মা-গড়াই নদীবেষ্টিত জেলার দুই নদীর তীরেই বালুর সাম্রাজ্য। মূলত ২১টি বালুমহাল থেকে তোলা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালু। এর  মধ্যে চারটি স্পট থেকে বিক্রি করা যায়। এরইমধ্যে ইজারা আছে দু’টির। নাব্য পরিস্থিতি, পরিবেশ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আইনি জটিলতায় বাকি ১৭টি থেকে উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ দুই নদীর পাড় ঘেঁষে প্রকাশ্যে এক মহোৎসব চলছে। 

সরজমিন বালু উত্তোলনের বিশাল কর্মক্ষেত্র দেখে বোঝার উপায় নেই, এখান থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি দু’টি ব্রিজ, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তোলা হচ্ছে বালু। এতে শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, সবাই ভালো বালু চায়। তাই যতদূরের লোকই হোক না কেন, এদের প্রধান টার্গেট থাকে এই দুই নদী। এখানে গ্রুপ তো অনেক। ঘাট নিয়ন্ত্রণ, বালু তোলা ও ইজারা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এজন্য কেউ ঝামেলায় না গিয়ে যে যার মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বালুমহাল দখল নিয়ে এখানে বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র পাহারা থাকে প্রতিদিন, রাতে হয় আরও জোরদার। সরজমিন দেখা যায়, গভীর রাত, অথচ অবৈধভাবে বালু তোলায় কোনো বিরতি নেই। যেখানে সাধারণের প্রবেশও নিষেধ। শুধু একটি স্পট থেকে বালুবোঝাই করে বেরিয়ে যায় সাতটি ট্রাক। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে, অনুসন্ধান চলে সে বিষয়েও। যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেল, তারা কেউ বালুমহালে আসেন না সাধারণত। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা বেশ প্রভাবশালী। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হয় তেমন কয়েকজনের সঙ্গে।

কুমারখালী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিলন প্রামাণিক মুঠোফোনে বলেন, ওই ঘাট পাড়ে আমাদের পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বালু পাবেন। আমার কথা বললে দামে কম দেবে। মনোয়ার হোসেন বলেন, দাম ১৮০০ টাকার মতো। আপনার কাছে হয়তো একটু কম নেয়া যাবে, সাড়ে ১৭ হাজারের মতো। পরে কথা হয়, চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জানবার হোসেনের সঙ্গেও। বালুমহালে রাজনৈতিক এই প্রভাবের বিষয় নিয়ে কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে। বিএনপি’র সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মজমাদার বলেন, বর্তমানে যারা বিএনপি’র নেতৃত্বে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিশ্চয়ই যোগসূত্র আছে। অবশ্য তিনি দাবি করেন, বালু উত্তোলনে তার নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন বলেন, আমরা অনেক কিছু অনুভব করি, কিন্তু বলাটা কঠিন। যারা অবৈধ উত্তোলনের অভিযোগ করছে, তারাই একসময় এটা করতো। আমরা বাধা দেয়ার পর তারা আর এসব অপকর্ম করতে পারছে না। তাই উল্টাপাল্টা অভিযোগ দিচ্ছে বলে দাবি তার। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এখানে সরকারের বঞ্চিত হওয়ার শেষ নেই। যেখানে বালু লোড-আনলোড করে, পুলিশ সঙ্গে থাকে। তবে ওখানকার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। ফায়ারিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়। এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এর আগে সাংবাদিকদেরও ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ইজারা দেয়নি জেলা প্রশাসন, তারপরেও কীভাবে হচ্ছে প্রকাশ্যে এ চুরি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেউ চুরি করলে সেটা তো চুরি। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে করাচ্ছি, বিষয়টি এমনও না।

পাঠকের মতামত

Bangladesh-e akhono "Mastaan" asea ?

no need
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

Bangladesh-e akhono Boro Boro "Santrasi" asea naki ?

no need
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status