শেষের পাতা
সিলেটের অ্যামোনিয়া গ্যাস চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির অ্যামোনিয়া গ্যাস সেক্টরে শেকড় গেড়ে বসে আছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। জামালপুরে বসেই তিনি ফেঞ্চুগঞ্জের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে সারকারখানায় দাপট দেখিয়েছেন। ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। এজন্য এবার তার পলিসি ভিন্ন। ব্যাকফুটে থাকায় ‘অথরাইজেশন’ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এরই মধ্যে সিলেটের এক ব্যবসায়ীকে অথরাইজেশন দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় দুই কোটি টাকা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ দক্ষিণ সুরমা রেঙ্গা হাজীপুরের ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিন রফিক সহ তার সিন্ডিকেটের চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে টাকা আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। পরে আদালতের নির্দেশে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এ মামলাটি রেকর্ড করেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সারকারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাসের ডিলার সরিষাবাড়ির এই আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম। সঙ্গে ওই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীও।
তারা জামালপুর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জে এজেন্ট দিয়ে ব্যবসা করছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় দাপট দেখিয়ে তারা একতরফা প্রভাব খাটিয়েছেন। রফিকের ঘনিষ্ঠজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মীর্জা আজম। তার প্রভাবে ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানায় রফিকুল গড়ে তোলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অ্যামোনিয়া গ্যাসের বেশির ভাগ সিলিন্ডার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করেন। এ কারণে বিভিন্ন সময় বেশি দামে গ্যাস বিক্রিতে আলোচিত হন তারা। সারকারখানাতে নিজেদের নামে যেসব সিলিন্ডার বের হতো সেগুলো ছাড়াও কমমূল্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা সিলিন্ডার ক্রয় করে নিতেন। ৩৭০০ টাকায় ক্রয় করা সিলিন্ডার ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকা দামে বিক্রিরও অভিযোগ আছে। এই অবস্থায় ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর বেকায়দায় পড়েন রফিকুল সহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ব্যবসা পরিচালনা করতে তারা সিলেটের ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। রায়হানকে তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীক পার্টনার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রায়হানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা গ্রহণের পর অথরাইজেশন না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ব্যাপারে গত ২রা জুন সিলেটের আদালতে মামলা করেছেন রায়হান।
ওই মামলায় তিনি আসামি করেছেন সরিষাবাড়ি উপজেলার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান, রিপন আহমদ ও মিজানুর রহমানকে। এরা ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার তালিকাভুক্ত গ্যাস সিলিন্ডার ডিলার। মামলায় রায়হান উদ্দিন জানিয়েছেন- তিনি অ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহকারী সাঈদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। একই সেশনের ব্যবসায়ী হওয়ায় আসামি রফিক সহ অন্যরা তার পরিচিত। সম্প্রতি রফিক সহ ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ প্রাইভেট অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার মালিক সমিতি গঠন করে ওই সংগঠনের সভাপতি করেন রায়হান উদ্দিনকে। কয়েক মাস আগে আলোচনার মাধ্যমে চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, নিলয় নির্জন এন্টারপ্রাইজ, আলমাছ এন্টারপ্রাইজ, বুশরা এন্টারপ্রাইজ, শুভ এন্টারপ্রাইজ, আবুল কালাম আজাদ, আতিক এন্টারপ্রাইজ, রিক্ত এন্টারপ্রাইজ, আরএম এন্টারপ্রাইজ, ওয়াইএইচডি এন্টারপ্রাইজ, মাসুদ এন্টারপ্রাইজ, প্রভা এন্টারপ্রাইজ ও নাফিজ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায় পরিচালনার অথরাইজেশন এনে রায়হান উদ্দিনকে দেবে বলে জানায়। ওই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা রায়হানের কাছ থেকে গ্যাস সরবরাহ নিবে বলে দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর ওই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামালের সিকিউরিটি হিসেবে ২ কোটি টাকার নগদে গ্রহণ করেন। একই সময় জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ২৪শে মার্চ একটি চুক্তি সম্পাদন করেন।
এজাহারে রায়হান উল্লেখ করেন- টাকা গ্রহণের পর রফিক সহ অন্য আসামিরা অথরাইজেশন দেয়ার নামে কালক্ষেপণ করেন। বার বার তাগাদা দেয়ার পরও তারা অথরাইজেশন দেননি। গত ১৪ই মে বাদী রায়হান আসামিদের সুরমা মার্কেটের সামনে ক্বিন ব্রিজের মুখে পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে আরও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এদিকে আদালতের নির্দেশে গত মঙ্গলবার রাতে মামলা রেকর্ড করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মামলার বাদী রায়হান উদ্দিন জানিয়েছেন- তারা অথরাইজেশন দেয়ার নামে টাকা নিয়েছে। এর প্রমাণ রয়েছে। পরে যখন হুমকি দিয়ে আরও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এর প্রমাণও রয়েছে।
তিনি বলেন- আওয়ামী লীগের সময় দাপট দেখিয়ে তারা ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার অ্যামোনিয়ার সেক্টরে লুটপাট চালিয়েছে। বর্তমানেও তারা একই ধারা অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তিনি বিষয়টি লিখিত ভাবে সারকারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ি উপজেলায় বিস্ফোরক সহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে মামলায় কী অভিযোগ করা হয়েছে সেটি স্পষ্ট জানেন না বলে মামলার আসামি ও অ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহকারী সরিষাবাড়ির মিজানুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন- রায়হান অথরাইজেশন নেয়ার জন্য আমাদের পেছনে ঘুরেছিল। যখন আমরা অথরাইজড দেইনি। তিনি বলেন- রায়হানকে প্রমাণ করতে হবে সে দুই কোটি টাকা কোথায় পেয়েছে এবং কীভাবে দিয়েছে। প্রমাণ ছাড়া তো কিছু হবে না। তাকে অথরাইজড না দেয়ায় কীভাবে আমরা ফেঞ্চুগঞ্জে ব্যবসা করি সেটি সে দেখিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। এজন্য তারা বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবিলা করবেন বলে জানান। মামলার প্রধান আসামি রফিকুল ইসলামকে ফোন দেয়া হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।