নগদে প্রশাসকের কাজ চালাতে বাধা নেই

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল 
বিভাগ। সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এর ফলে নগদে প্রশাসকের কাজ চালিয়ে যেতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌঁসুলি বি এম ইলিয়াস কচি।

নগদ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে চেম্বার আদালতের দেয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয়া হয়। আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি শুনানিতে অংশ নেন। অন্যদিকে শাফায়েত আলমের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নওশাদ জমির। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি বলেন, আবেদনকারীর (শাফায়েত আলম) নিয়মিত লিভ টু আপিল না করা পর্যন্ত চেম্বার আদালতের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। শুনানির জন্য আগামী ৩রা জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।

গত বছরের ২১শে আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করে। প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক মো. শাফায়েত আলম গত বছরের ২রা সেপ্টেম্বর রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে রায় (রুল ডিসচার্জ) দেন। নগদে প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত গত বছরের ২১শে আগস্টের আদেশ এবং এ নিয়ে হাইকোর্টের ১৬ই ফেব্রুয়ারি দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে মো. শাফায়েত আলম আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত ৭ই মে চেম্বার আদালত প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত আদেশ এবং এ নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। এ সময়ের মধ্যে আবেদনকারীকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এ অবস্থায় শুধু প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত গত বছরের ২১শে আগস্টের আদেশ স্থগিতের অংশটুকু প্রত্যাহার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ই মে আবেদন করেন। গত ১৪ই মে চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় ২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। 

২০১৯ সালের ২৬শে মার্চ মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে এ এমএফএস কোম্পানিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২১শে আগস্ট নগদের আগের পর্ষদ ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামানকে প্রশাসক করা হয়। তিনি প্রশাসক থাকা অবস্থায় নগদে অনিয়মের নানা অভিযোগের মধ্যে কোম্পানিটিতে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর ১৫ দিনের মধ্যে তাকে সরিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মো. মোতাছিম বিল্লাহকে নতুন প্রশাসককে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর প্রশাসক বসানো নিয়ে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে নামে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানিটি।

এর মধ্যে নগদ গত ১৩ই মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায় সিইও হিসেবে যোগ দেন শাফায়েত আলম। প্রশাসক নিয়োগের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ডাক অধিদপ্তর নগদ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়।