শেষের পাতা
স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন প্রিয়াংকা গান্ধী
মানবজমিন ডেস্ক
২০ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবারসমর্থকদের কয়েক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। তাদের স্বপ্নকে পূরণ করতে প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কন্যা, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র। ভারতের ঐতিহ্যবাহী গান্ধী
পরিবারের সবচেয়ে পরিচিত মুখের অন্যতম ভাইবোন- রাহুল ও প্রিয়াংকা। দীর্ঘদিন ধরে দাবি উঠেছে, প্রিয়াংকাকে রাজনীতিতে নামার। তিনি তাদের দাবির মুখে এক পর্যায়ে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হন। তারপর থেকে কংগ্রেসের তথা তাদের জোট ইন্ডিয়ার এবারের নির্বাচনে তিনি ছিলেন প্রচারণায় সরব। এবার ইন্ডিয়া জোট ও কংগ্রেস যে ভালো ফল করেছে, তার অনেকটা কৃতিত্ব তার। ভাই রাহুল গান্ধী রায়বেরেলি ও কেরালার ওয়েনাডে আসন থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনি ঐতিহ্যবাহী রায়বেরেলি রেখে অন্য আসন ছেড়ে দিচ্ছেন। সেই আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৫২ বছর বয়সী প্রিয়াংকা গান্ধী।
প্রিয়াংকা গান্ধীর এমন সিদ্ধান্তকে বিস্ময়কর ঘোষণা বলে অভিহিত করেছেন সাংবাদিক জাভেদ আনসারী। তিনি বলেন, আমি মনে করি যদি নয়, তিনি কখন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসছেন, প্রশ্ন ছিল তা নিয়ে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে কংগ্রেসের ধারাবাহিক পরাজয়ের পর অনেকেই তার ভাই রাহুল গান্ধীকে দায়ী করেছিলেন। বলেছিলেন, তার মধ্যে নেতৃত্বের অভাব আছে। কিন্তু খুব অল্প বয়স যখন প্রিয়াংকার, তখন থেকেই জনগণ প্রিয়াংকা গান্ধীর মধ্যে তার দাদী, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেখতে পেয়েছেন। তারা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাকে তুলনা করেন। ১৯৯০-এর দশকে মা সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী প্রচারণায় প্রথম সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন মিস প্রিয়াংকা। ভাই রাহুলের জন্যও প্রচারণা চালিয়েছেন। অবশেষে ২০০৪ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রশংসা করেন সিনিয়র রাজনীতিকরা। তিনি যেভাবে জনগণের সঙ্গে মিশে যান তা তার প্রশংসাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশে কংগ্রেসের প্রচারণার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। এর মধ্যদিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাজে পারফর্ম করে কংগ্রেস। কিন্তু মিস প্রিয়াংকাকে এর জন্য দায়ী করা হয়নি। দলের সিনিয়র নেতারা বলেন, তার কাজ এবং তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন মাপা যাবে না তার পারফরমেন্সের সঙ্গে। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করা হয় তাকে। ফলে তিনি বিভিন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারণা চালান। দলীয় নেতারা বলেন, তিনি এবার হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের সরকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কংগ্রেসের প্রেস্টিজ ইস্যু উত্তর প্রদেশে এবার তিনি সামনের সারিতে থেকে প্রচারণা চালিয়েছেন। বিশেষ করে গান্ধী পরিবারের ঘাঁটি আমেথি এবং রায়বেরেলিতে। ফলে এ দুটি আসনে কংগ্রেস বিজয় লাভ করেছে। রাজনৈতিক ভাষ্যকর নীরজা চৌধুরী বলেন, যদি মিস প্রিয়াংকা বিজয়ী হন তাহলে পার্লামেন্টে একসঙ্গে ভাইবোনকে দেখতে পাওয়াটা হবে আনন্দের। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি প্রিয়াংকা উদ্ধারকর্তা। তিনি রাহুল গান্ধীর চেয়ে পরিষ্কার কথা বলেন। এ কারণে, তার দিকে ঘনিষ্ঠ দৃষ্টি রাখা হবে। ওয়েনাডে আসনে মিস প্রিয়াংকা সম্ভাব্য এমপি হবেন- এমন সম্ভাব্যতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেসের নেতারা ও কেরালার কর্মীরা। ওদিকে প্রিয়াংকার নির্বাচনে অভিষেককে বংশীয় রাজনীতি বলে এর সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, কংগ্রেস তো একটি রাজনৈতিক দল নয়। একটি পারিবারিক ব্যবসা। অন্যদিকে প্রিয়াংকার প্রার্থিতা ঘোষণাকে প্রশংসা জানিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সদস্য অ্যানি রাজা। তিনি সাম্প্রতিক নির্বাচনে ওয়েনাডে থেকে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।