শেষের পাতা
একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে কেন এত আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবারসম্প্রতি প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছিল- কোমলপানীয় ব্র্যান্ড কোকাকোলা, বাংলাদেশ। যে বিজ্ঞাপনের সংলাপে পণ্যটি ইসরাইলের নয় বলে ইঙ্গিত করা হয়। একই সঙ্গে কোক বয়কটের যে ক্যাম্পেইন চলছে তা থেকে সরে আসতে উৎসাহিত করা হয়। যদিও কোম্পানিটির উদ্দেশ্য সফল হয়নি। অনেকটা বুমেরাং হয়েছে বিজ্ঞাপন তৈরি। ব্র্যান্ডটি বাধ্য হয়ে বিজ্ঞাপনটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেয়। যদিও পরবর্তীতে কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে পুনরায় ইউটিউবে বিজ্ঞাপনটি উন্মুক্ত করা হয়।
কিন্তু হঠাৎ কেন এ আলোচনা। কেন-ই-বা কোক বাংলাদেশি ভোক্তাদের কাছে পণ্যটি ইসরাইলের নয় বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই কোকাকোলা বিজ্ঞাপন তৈরি করে প্রচার করে। ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা এবং নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বাংলাদেশিদের মধ্যে। দেশটিতে মানবিক বিপর্যয়ের জন্য তারা ইসরাইলের পাশাপাশি তাদের মিত্রদের দায়ী করছে। অন্যদিকে বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয় ইসরাইলি পণ্যের। সে হিসেবে কোকাকোলা বয়কটের ক্যাম্পেইন চলছে দেশ জুড়ে। যাতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে কোকাকোলা।
কোমলপানীয় ব্র্যান্ডটির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে তাদের পণ্য বিক্রি কমছে ব্যাপক হারে। তাই বাজার ধরে রাখতে ভোক্তাদের নিজেদের বার্তা স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ বিজ্ঞাপন তৈরি। কিন্তু ভোক্তাদের অনুভূতিকে আমলে না নিয়ে ও পর্যাপ্ত গবেষণা ছাড়াই বিজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়। যার কারণে সুনাম কুড়াতে গিয়ে উল্টো বয়কট ক্যাম্পেইন জোরালো হয়েছে। কারণ বিজ্ঞাপনের সংলাপে এমন কিছু বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে যা তথ্যবহুল নয় বলে মনে করছেন অনেকে। এমনকি অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে কোকাকোলার কারখানার থাকার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসায়ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে। সবমিলিয়ে সংবেদনশীল ব্যাপারে চিত্রনাট্য ও সংলাপগুলো সামঞ্জস্য দেখা যায়নি। ফলে বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
ইউটিউবে গত ৯ই জুন প্রচারিত বিজ্ঞাপনটির নিচে অসংখ্য অপ্রত্যাশিত কমেন্ট জমা পড়ে। জোরালো হয়েছে বয়কট ক্যাম্পেইন। অনেকে বিজ্ঞাপনের সংলাপ পরিবর্তন করে প্রচার করছে কোক না কেনার জন্য। বয়কটের ডাক দেয়া হয় বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত অভিনয় শিল্পীদেরও। এমন প্রেক্ষাপটে ১১ই জুন বিজ্ঞাপনটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু সকালে সরিয়ে ফেলা হলেও সন্ধ্যায় কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে পুনরায় বিজ্ঞাপনটি উন্মুক্ত করা হয়। অন্যদিকে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিনেতারা। বিজ্ঞাপনটিতে অভিনয় করেছেন, অভিনেতা ও নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন, শিমুল শর্মা, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু প্রমুখ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা ও অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন বলেন, আমি একজন নির্মাতা এবং অভিনেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বিগত দুই দশক ধরে নির্মাণ ও অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত।
সম্প্রতি কোকাকোলা বাংলাদেশ আমাকে তাদের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ এবং সেটিতে অভিনয় করার জন্য নিয়োগ করেছিল। আমি শুধুমাত্র তাদের দেয়া তথ্য ও উপাত্ত অনুযায়ী কাজটি তুলে ধরেছি। বিজ্ঞাপনটি প্রচার হওয়ার পর থেকে অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি এবং আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি আবারো বলতে চাই কাজটি শুধুই আমার পেশাগত জীবনের একটি অংশ। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সবসময় মানবাধিকারবিরোধী যেকোনো আগ্রাসনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আপনাদের অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি। এখানে আমি কোথাও ইসরাইলের পক্ষ নেইনি এবং আমি কখনোই ইসরাইলের পক্ষে নই। আমার হৃদয় সবসময় ন্যায়ের পক্ষে এবং মানবতার পাশে আছে, থাকবে। আরেক অভিনেতা শিমুল শর্মাও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেন, আমি মাত্র আমার জীবনের পথচলা শুরু করেছি, আমার এই পথচলায় ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাকে ভবিষ্যতে একজন বিবেকবান শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য শুভ কামনায় রাখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
তিনি আরও বলেন, আমি আর ভবিষ্যতে কোনো কাজে অভিনয় করতে গেলে অবশ্যই আমাদের দেশের মূল্যবোধ, মানবাধিকার, মানুষের মনোভাবকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে বিবেচনা করে তারপর কাজ করবো। শিমুল আরও বলেন, আমি শিমুল শর্মা যদিও পরিচয় দেয়ার মতো একজন অভিনেতা এখনো হয়ে উঠতে পারিনি কারণ একজন অভিনেতা হওয়ার জন্য যে অধ্যবসায় এবং দূরদর্শিতা দরকার সেটা এখনো আমার হয়ে ওঠেনি, আমি চেষ্টা করছি মাত্র। তাই হয়তো না বুঝে করা আমার কাজ আজ আমার দর্শক, তথা আমার পরিবার ও দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। অবশ্য এর আগে এই অভিনেতা জানান, বাংলাদেশে কোক নিয়ে প্রপাগান্ডামূলক একটি তথ্য ছড়িয়ে আছে। কোনো প্রোডাক্টকে যদি ধর্মীয় মোড়কে মুড়িয়ে ফেলা হয়, তাহলে কিছু করার নেই। সবাই নিজেদের জায়গা থেকে স্টেটমেন্ট দিতে পারে। সেই জায়গা থেকে কোকাকোলা বিজ্ঞাপনটি বানিয়েছে।
এদিকে দোকানে দোকানে কমেছে কোকাকোলা বিক্রি। ভোক্তারা কোক পরিহার করে ভিন্ন কোমলপানীয়ে ঝুঁকছেন। জাকির হোসেন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, কোক খাওয়া মানে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের চলমান গণহত্যাকে সমর্থন করা। কারণ এটি ইসরাইলি পণ্য। ১৩৮ বছর ধরে কোক পৃথিবীর ১৯০টি দেশে যে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে সেখানে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে গত কয়েক বছর। কারণ ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে মুসলিম বিশ্বে বয়কট করা হচ্ছে কোককে। প্রচারিত বিজ্ঞাপনটিতেও ব্র্যান্ডটি কোক মুসলিমপ্রধান তুরস্ক ও সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া স্পেনকেও টেনেছে। সেখানে ওই দুটি দেশে কোক উৎপাদন ও বাজারজাত করার কথা উল্লেখ করলেও তুরস্কের পার্লামেন্টের অভ্যন্তরণে কোক নিষিদ্ধের কথা বলা হয়নি। আব্দুল্লাহ আল মাহদী নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্যে কোক সূক্ষ্মভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কোক বয়কটে নানা ভিডিও প্রচার করছে। এমনকি ‘যে দোকানে কোক, সে দোকান বয়কট’ সেøাগানেও বয়কট আন্দোলন জোরালো করা হচ্ছে। তারা দেশীয় একটি কোমলপানীয় ব্র্যান্ড গ্রহণে ভোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে কোকাকোলা বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়নি। অনেকটা চুপ রয়েছে ব্র্যান্ডটি।
বাংলাদেশে কোকাকোলার যাত্রা সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়, বাংলাদেশে কোকাকোলা তাবানি বেভারেজের (টিবিসিএল) মাধ্যমে ঢাকায় এবং কে রাহমান-এর মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রবেশ করে ১৯৬২ সালে। ১৯৮২ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল)-এর পানীয় ইউনিট কোকাকোলার ফ্র্যাঞ্চাইজি বোতলজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কোম্পানিটি ১৯৮৭ সালে কুমিল্লায় তার পূর্ণাঙ্গ বোতলজাতকরণ প্লান্ট স্থাপন করে। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কোকাকোলা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বাজারের বোতলজাতকরণ, প্যাকেজিং, বিক্রয় এবং বিতরণের দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে কোকাকোলার বাজারজাতকরণে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সিসিআই। ময়মনসিংহে তাদের নিজস্ব প্লান্ট থেকে কোকাকোলা উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে।
ইসরাইলের মতো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আমাদের যার যেটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু অসহযোগিতা করা উচিত। সাথে ইসরাইলের সহচর রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানেরও ছাড় নেই। আমাদের অনেকের ফিলিস্তিনের জন্য আর্থিক বা সরাসরি সাহায্য করার ক্ষমতা না থাকলেও মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইসরাইলের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। আমি আপনি একজন একজন যদি কাজ করে যাই, একযোগে অনেক বড় ফলাফল আসবে ইনশাআল্লাহ। কাজেই আপনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মোটেও ক্ষুদ্র নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে কবুল করুন।
কোকাকোলা,পেপসি,স্ফাইট,ফান্টা ইত্যাদি ইসরাইলী পণ্য বয়কট অব্যাহত থাকুক।
কোকাকোলা, পেপসি, যদিও আমেরিকার পণ্য কিন্তু এগুলোর আয়ের সিংহভাগ ইসরাইল পেয়ে থাকে এবং আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের রক্ত ঝরায় তাই তাদের সব পণ্য বয়কট করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য।
একজন সত্যি কারের মুসলিমের নিকট কোকাকোলা পান করার মানে হলো, ফিলিস্তিনের নারী শিশু সহ অসহায় নিরপরাধ মানুষের রক্ত পান করার সামিল। এমন বাস্তবতায় যেখানে বহু বছর আগে থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রায় প্রতিনিয়তই এদেশ সহ পৃথিবীর সকল দেশের জনসাধারণকে এই বলে সতর্ক করে আসছে যে, সকল প্রকার কোমল পানীয় মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সেখানে এই পানীয় ত্যাগ করতে তো আর সাত পাঁচ ভাবনার দরকার আছে বলে মনে করি না। একটি বিষয়ে আজ আর না বললেই নয়, বিগত বছরগুলোতে নানা ধরনের বাঁধা -বিগ্ন,চাপ, এবং সেন্সরের মতো বিষয় গুলোকে পাশ কাটিয়ে একমাত্র মানবজমিন পত্রিকাটিই সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশে অভাবনীয় সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। আমার আাশা এবং বিশ্বাস আগামী দিনেও মানবজমিনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। শুভ কামনা মানবজমিন পত্রিকা এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের জন্য।
প্যালেস্টাইনে ভারতীয় বোমায় নিরীহ মানুষ মরছে, তো ভারতের ইশারায় না নাচলে হয়না?
ফেসবুক গুগল কেন বয়কট করে না।
মানবজমিন কে ধন্যবাদ। সসমসাময়িক বিষয় নিউজ করার জন্য এবং জনসাধারণের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সব সময় সঠিক নিউজ করে মানবজমিন।
Fanta & Sprite also the same made product of Coca cola company. So that we can also avoid these ... Thanks
ভোক্তারা চাইলে দেশি পণ্যের প্রতি পক্ষপাত নিতেই পারেন, পারেন বিদেশি পণ্য বর্জন করতে। কিন্তু ভোক্তাসাধারণ আর সংবাদমাধ্যম এক নয়। কোকা কোলা আর পেপসি দুটোই আমেরিকান কোম্পানির পণ্য। কোকা কোলার শুরু ১৮৮৬ সনে, পেপসির শুরু ১৮৯৮ থেকে। দুটোরই শেয়ার বিক্রি হয় নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে। "কোক-পেপসি ইসরাইলী পণ্য" - এটাই তো বিশেষ স্বার্থপক্ষ থেকে চালানো ভুয়া প্রচার। এই রিপোর্টে সে বিষয়ে বক্তব্য কোথায়? রিপোর্টে তথ্যের ভারসাম্য থাকা উচিত। এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন ঠিক নয় যাতে পাঠকরা ভুয়া প্রচারকেই সত্যি বলে মনে করেন। অমনটা হলে সংবাদমাধ্যমও ভুয়া প্রচারের ভাগিদার হয়ে যায়। মানবজমিনের কাছ থেকে এ ধরনের ভুল আশা করি না।