বাংলারজমিন
সরাইলে ৩ পদে ভোটযুদ্ধে ১৫ প্রার্থী হিসাবে ব্যস্ত ভোটাররা
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবারব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী মাঠের ভোটযুদ্ধে এখন ৩ পদের জন্য লড়াই করছেন ১৫ প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৪ জন প্রার্থী। গত মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর শোডাউন, মিছিল, মাইকিং ও পথসভায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সরাইলের নির্বাচনের মাঠ। প্রতীক ও প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার লিফলেটে ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পাঁচ বছর পর আবারো কদর বেড়েছে ভোটারদের। দিনে রাতে ভোটারদের ঘরের কড়া নাড়ছেন প্রার্থীরা। ভালো প্রার্থী ও তাদের জয়-পরাজয়ের হিসাব কষছেন ভোটাররা। সবমিলিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে প্রচণ্ড দাবদাহেও সরাইল সদরসহ ৯টি ইউনিয়নেই বইছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। তবে বিভিন্ন জায়গায় বসে প্রার্থীদের নিয়ে রসালাপে ভোটারদের ভিন্ন মন্তব্য চলছে। অনেকের সাফ কথা দাঙ্গাবাজ, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, থানার দালাল, শোষক, অভদ্র ও সন্ত্রাসীকে নয়। আমরা ভোট দিবো জনগণের সেবক, নম্র, ভদ্র, সৎ, যোগ্য ও শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিকে। সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরাইলে শুধু চেয়ারম্যান পদে ১৬ প্রার্থীসহ অন্য দুই পদেও ছিল প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সে সময়ে পোস্টার আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন অনেকেই। অনেকে ঘুরে ফিরে করেছেন জনসংযোগ। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই কমতে থাকে প্রার্থীর সংখ্যা। অবশেষে মনোনয়নপত্র ক্রয় করলেন মোট ২১ জন। প্রত্যাহারের তারিখের আগে শুরু হয়ে গেল নানা নাটকীয়তা। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেন স্থানীয় বিএনপি’র প্রভাবশালী দুই নেতা আনোয়ার হোসেন ও এড. নুরুজ্জামান লস্কর তপু। কৌশলে সটকে গেলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা সেলিম খন্দকার। তাদের সরে যাওয়াকে ঘিরে মানুষের মধ্যে চলছে ভিন্ন ধরনের মন্তব্য। শেষ তারিখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও প্রতীক বরাদ্দের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে আসছি বলেও না গিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন যুবলীগ নেতা রাজিব আহমেদ রাজ্জি। এক সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে দায় সেরেছেন। সকল নাটকীয়তার পর এখন সরাইলে চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন ৫ জন প্রার্থী। এ তালিকায় রয়েছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিকবারের সাবেক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর (ঘোড়া)। উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের (প্রস্তাবিত কমিটি) সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ (কাপ-পিরিচ), সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সম্পাদক মো. শের আলম (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মো. মুখলেছুর রহমান (আনারস) ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব ব্যবসায়ী মো. জামাল মিয়া (দোয়াত-কলম)। ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হানিফ আহমেদ সবুজ (তালা), স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী মো. হোসেন মিয়া (টিউবওয়েল), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাফেজ মো. আলতাফ হোসেন (চশমা), ব্যবসায়ী মো. সোহেল মিয়া (টিয়া পাখি), মো. কাউছার আহমেদ (উড়োজাহাজ) ও মো. এনাম খাঁ (মাইক)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছা. রোকেয়া বেগম (হাঁস), শামীমা আক্তার (প্রজাপতি), সাবেক ইউপি সদস্য মো. শিরিন আক্তার (কলস) ও মোছা. আবেদা বেগম (ফুটবল)। গত মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে গরম হয়ে উঠেছে সরাইলের নির্বাচনী মাঠ। মুহূর্তের মধ্যে প্রার্থীদের রঙ্গিন ছবি আর প্রতীক দিয়ে কৌশলী আবেদন আর মমতার লেখায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মাইকিং আর মিছিলের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ৯টি ইউনিয়নের পাড়া মহল্লা। ভোটের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। তাই তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই ছুটছেন প্রার্থীরা। কদর বেড়ে গেছে এখন সাধারণ ভোটারদের। পুরুষদের পাশাপাশি এখন মহিলাদেরও খোঁজখবর নিচ্ছেন প্রার্থীরা। দিনে রাতে ভোটারদের ঘরের কড়া নেড়ে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী অতীতের ভুলত্রুটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাচ্ছেন। গুছিয়ে আগামী দিনে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন ইচ্ছামতো। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। মোটরসাইকেলের শোডাউন, পথসভা, মিটিং, মিছিল চলছে বিরামহীন। পথে প্রান্তরে হাটে মাঠে ঘাটে শুধু ভোটের আলোচনা। সাধারণ ভোটাররা আড্ডায় বসে প্রার্থীদের চাল-চলন আচার-আচরণ বিশ্লেষণ করছেন। বাদ পড়ছে না তাদের অতীত কর্মকাণ্ডও। কাকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য উপজেলার অভিভাবক করলে সুখ-শান্তিতে থাকবে মানুষ। এমন সব হিসাবও কষছেন ভোটাররা। দাঙ্গা বাধিয়ে, মামলার দালালি ও সালিশের নামে জনগণের শোষণকারীদের বর্জনের অনুরোধও করছেন তারা। কোনো বেকার বা অভাবী লোককে জনপ্রতিনিধি না বানানোর অনুরোধ করছেন একে অপরকে। সাধারণ ভোটার দেওড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন মন্টু, শাহবাজপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. শাহিদ মিয়া, শাহজাদাপুর গ্রামের রাহুল ভৌমিক ও মলাইশ গ্রামের জ্যোতিষ চৌধুরী বলেন, জনপ্রতিনিধির কাছে আমরা ভাত-কাপড় চাই না। আমরা চাই শান্তি ও স্বস্তি। তাই মাদকের শেল্টার, দলবাজ, দাঙ্গাবাজ, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী ও থানার দালাল প্রকৃতির লোককে ভোট দিবো না। সর্ব দিকে সৎ, নম্র, ভদ্র, শান্ত ও যোগ্য ব্যক্তিকেই ভোট দিয়ে প্রতিনিধি বানাতে চাই। টাকা নিয়ে খারাপ লোককে চেয়ার দিলে পাঁচ বছর সকলকে চরম মূল্য দিতে হবে। ভোটের মাঠে থাকা সকল প্রার্থীই পরাজয় নয়, জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে চলেছেন।