ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

হালফিল বৃত্তান্ত

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর

ড. মাহফুজ পারভেজ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার
mzamin

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শোচনীয় অভিজ্ঞতায় ইউরোপ নিজের ভূখণ্ডকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। তবুও যুদ্ধ গ্রাস করেছে ইউরোপকে। বসনিয়া, কসোভো পূর্ব ইউরোপ হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের জন্য এখন সবচেয়ে অন্ধকারময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রুশ আগ্রাসনের নিন্দায় মুখর। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে তৎপর। ইউক্রেনকে সাহায্য করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন  ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে অনেক বড় পরিসরে ও কৌশলগতভাবে নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দেয়া হবে’ বলে হুমকি দিয়েছেন।

রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধ দ্বিতীয় বছর পেরিয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়েছে এবং সহসাই এ যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। তবে, সংঘাত আরও জটিল হওয়ায় ক্লান্ত ও হতাশাগ্রস্ত ইউক্রেনের নাগরিকরা। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সিই রেজনিকভ ‘অস্ত্র ধারণ করতে সক্ষম এবং প্রস্তুত আছেন’, এমন নাগরিকদের ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক টুইটে বলেছেন, ‘রাশিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাদের রাষ্ট্রে আক্রমণ করেছে, ঠিক যেমনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী করেছিল। রাশিয়া মন্দের পথে যাত্রা করেছে।

বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করছে। মস্কো যাই ভাবুক না কেন ইউক্রেন তার স্বাধীনতা ছাড়বে না।’
বাস্তবতা হলো, হাজার হাজার বেসামরিক লোক রুশ কারাগারে বন্দি। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন এখন ক্লান্ত ও হতাশাগ্রস্ত। যুদ্ধ শুরুর দিকে ৮৫ শতাংশ নাগরিক মনে করতো বিজয় তাদের হবে। সে ধারণা ক্রমশ পাল্টাচ্ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক এখন বিশ্বাস করে, যুদ্ধজয়ে তাদের আরও কয়েক বছর লাগবে। 

কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, রুশ হামলার সামনে ইউক্রেন কতোদিন টিকে থাকতে পারবে? যদিও এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে কোনো পক্ষই নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করতে পারেনি, তথাপি ইউক্রেন যথেষ্টই কোণঠাসা ও নাকাল হচ্ছে। লড়াইয়ে টিকতে না পেরে পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইউক্রেন। সমপ্রতি আরও বেশ কয়েকটি শহর হাতছাড়া হয়েছে তাদের।
ইউক্রেনের নতুন সামরিক প্রধান ওলেকজান্দ্রার সিরস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার বাহিনী যাতে ঘিরে ফেলতে না পারে এবং সামরিক কর্মকর্তাদের জীবন রক্ষার জন্য আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী মর্যাদার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রাশিয়ার বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে, বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা কমে যাওয়ায় ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুই বছর ধরে ইউক্রেনের মিত্ররা যে প্রচুর পরিমাণ সামরিক, আর্থিক ও মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে, তা ক্রমশ কমছে। ‘কিয়েভ ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি’র হিসেবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইউক্রেনে প্রায় ৯২ বিলিয়ন ডলার এসেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে, আর ৭৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ট্যাংক, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দূরপাল্লার আর্টিলারি ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু সামপ্রতিক মাসগুলোতে সহায়তার পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে এবং ইউক্রেনকে আদতে কতোদিন তাদের মিত্ররা সহায়তা চালিয়ে যেতে পারবে, সে নিয়ে আলোচনা চলছে।

এমন শঙ্কা ভর করেছে যে, যদি নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প আবারো জিতে আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা থমকে যাবে। তবে, জি-৭ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের জন্য যৌথ অস্ত্র ক্রয় নিয়ে আলোচনা করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চলতি ফেব্রুয়ারিতে নানা আলোচনা ও হাঙ্গেরির সাথে দর কষাকষির পর ৫৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে। হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান, যিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ, তিনি প্রকাশ্যেই ইউক্রেনকে সহায়তার বিরোধিতা করছেন। ইউক্রেনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন অধিকাংশ পশ্চিমা নেতা। যুদ্ধের দ্বিতীয়  বর্ষপূর্তিতে ইউক্রেন বাহিনীর প্রতিরোধের প্রশংসা করেছেন ইইউ প্রধান। ইউক্রেনের প্রতি ফ্রান্সের ‘অটল সমর্থন’ থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন ম্যাক্রোন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং কানাডার জাস্টিন ট্রুডোসহ পশ্চিমা নেতারা কিয়েভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ইউক্রেনে আসেন। ভন ডার লিয়েন, ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান পোল্যান্ড থেকে একটি রাতের ট্রেনে ইউক্রেনে উপস্থিত হন।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভের গোস্টোমেল বিমানবন্দরে একটি উন্মুক্ত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা ৭৩০ দিন ধরে লড়াই করছি। আমরা আমাদের জীবনের সেরা দিনে জিতবো। ইউক্রেনের সেনাপ্রধান অলেক্সান্ডার সিরস্কিও একই সুরে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, ঐক্যই আমাদের বিজয় এবং এটি অবশ্যই ঘটবে। কারণ, আলো সবসময় অন্ধকারকে জয় করে!’ 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের পাশে রয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা অর্থনৈতিক, সামরিক এবং নৈতিকভাবে কিয়েভের পাশে আছি। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে আছি, যতক্ষণ না দেশটি চূড়ান্তভাবে দখলমুক্ত হয়।’

কিয়েভে পৌঁছানোর আগে এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা আমাদের যৌথ ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছে। তারা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই করছে যে, গণতন্ত্র বাঁচার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং জয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু যুদ্ধ চলছে, সেটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এ কারণেই কানাডা প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘আরও সমর্থনের পথে ইউক্রেন। দেশটি ন্যাটোতে যোগ দেবে। কিন্তু, ইউক্রেনকে সেই দিনের জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি এখনই কিয়েভের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখবে ন্যাটো।’ বৃটেন ইউক্রেনের জন্য জরুরি প্রয়োজনে গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবারুদ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করার জন্য একটি নতুন ৩১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, অর্থ ও জনশক্তি নিয়ে রাশিয়ারও সমস্যা রয়েছে, তবে এটি আপেক্ষিক। কিন্তু তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের দু’বছরে কী পেলেন পুতিন? আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর রিপোর্ট বলছে, ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে। যুদ্ধে তিন মাসের মাথাতেও পরিস্থিতি প্রায় তাই-ই ছিল। দু’বছর আগে পরাক্রমশালী রুশ সেনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা দেখে চমকে গিয়েছিলেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। যুদ্ধে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে পশ্চিমা দুনিয়ার সমর্থনে ইউক্রেনের বাহিনী যে ভাবে রাশিয়াকে নাস্তানাবুদ করেছিল, তাতে বিশ্বের সামরিক ভারসাম্যের ‘কাঁটা’ নড়ে যেতে পারে বলেও আঁচ করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে। আভদিভকা শহর দখল নেয়ায় রুশদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। মারিয়ুপোলের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছে তারা। অন্যদিকে, আমেরিকা-সহ পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক সাহায্যে ‘ভাটার টান’ এসেছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের দ্বিতীয় বছর পেরিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে মস্কো। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তৃতীয় বর্ষপূর্তির আগেই পুতিনের ইউক্রেন অভিযানের ‘নির্ণায়ক ইতি’ হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের ‘নির্দিষ্ট ৭০টি লক্ষ্যে’ (মস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী। পাশাপাশি স্থল এবং জলপথেও শুরু হয়ে গিয়েছিল আগ্রাসন। ডনবাস-রাশিয়া সীমান্তের পাশাপাশি, বেলারুশে মোতায়েন রুশ ট্যাংক এবং সাঁজোয়া ব্রিগেডগুলো হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ইউক্রেনের মাটিতে। আক্রমণ শুরু হয়েছিল জলপথেও।

ইউক্রেনের উপকূলবর্তী শহর ওডেসা এবং মারিয়ুপোল দখলের লক্ষ্যে ক্রাইমিয়া বন্দর এবং কৃষ্ণসাগরে মোতায়েন রুশ রণতরী এবং ‘অ্যাম্ফিবিয়ান ল্যান্ডিং ভেহিকল’ থেকে সেনা অবতরণ শুরু হয়ে যায়। রুশ হামলার দ্বিতীয় দিনেই পতনের মুখে দাঁড়িয়েছিল ইউক্রেনের পরিত্যক্ত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চেরনোবিল। ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল রুশ ফৌজ। এমনকি, বেলারুশ সীমান্ত পেরিয়ে আসা রুশ বাহিনীর একাংশ পৌঁছে গিয়েছিল রাজধানীর কাছে। সীমিত ক্ষমতা নিয়েও ইউক্রেনের সেনাদল রুখে দাঁড়িয়েছিল। শুরু হয়েছিল পুরোদস্তুর যুদ্ধ, যাতে পুতিন নেপাল থেকে ভাড়াটে যোদ্ধা সংগ্রহ করেন ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর পাশাপাশি। 

অকিঞ্চিৎকর সামরিক শক্তি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে কতোটা সাফল্য পেয়েছে ‘মহাশক্তিধর’ রাশিয়া? ২০২২ সালের ৪ঠা জুন, যুদ্ধের ১০০তম দিনে  জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, তার দেশের ২০ শতাংশ এলাকা রুশ বাহিনীর দখলে। যুদ্ধের দুই বছরেও সামগ্রিক চিত্রটা বিশেষ বদলায়নি। সামরিক অভিযান ঘোষণার একদিন আগেই পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস (পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে একত্রে এই নামে ডাকা হয়) এলাকাকে ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। গত দু’বছরে ওই অঞ্চলের কিছু জনপদ রুশ সেনার দখলে এসেছে। অন্যদিকে, দীর্ঘ দু’বছরের অসম যুদ্ধে চমকপ্রদ প্রতিরোধের উদাহরণ তৈরি করা ইউক্রেনের সেনারা এখন অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের অভাবে ভুগতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে আর কতো দিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

রুশ অভিযান শুরুর আগে আমেরিকার সেনার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের জানিয়েছিলেন, পুরোদস্তুর হামলা শুরু করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী দখল করতে পারে পুতিন-সেনা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং রাজধানীর দোরগোড়ায় পৌঁছেও পিছু হটতে হয়েছে রুশ ফৌজকে। হারাতে হয়েছে, বুচা, ইজয়ুম, বোরোডিয়াঙ্কা, চেরনিহিভ, খেরসনের দখল। আর পিছু হটার আগে নির্বিচারে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। মিলেছে গণকবরের সন্ধান।

তবে গত দু’বছরে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত, পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে সচল রাখা। ইরান, চীন, তুর্কির পাশাপাশি পুরনো বন্ধু ভারতও এ ক্ষেত্রে মস্কোর পাশে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশিংটনের ‘হুঁশিয়ারি’ উপেক্ষা করে কেনা হয়েছে রুশ তেল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পক্ষে পুতিনের মূল ‘অজুহাত’ ছিল, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে  জেলেনস্কি সরকারের তৎপরতা। এ ক্ষেত্রে পুতিনের হুমকিতে কান দেননি  জেলেনস্কি। যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই সেই প্রবণতা সংক্রমিত হয়েছে রাশিয়ার অন্য দুই প্রতিবেশী ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের মধ্যে। রাশিয়ার হুমকি উপেক্ষা করেই ন্যাটোতে যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। ইউক্রেন-যুদ্ধে জিতলেও যা মস্কোর পক্ষে ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ইউক্রেনে হেরে যাওয়ার পথও খোলা নেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে এলে তিনি নাকি খুনও হয়ে যেতে পারেন। এমনই মন্তব্য টেসলার সিইও, ধনকুবের মাস্ক-এর। তার মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ প্ল্যাটফরমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেন, পুতিন কখনোই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হার স্বীকার করবেন না। যারা ইউক্রেনের জয়ের স্বপ্ন দেখছেন, তারা ‘রূপকথার জগতে’ বাস করছেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেন, ইসরাইল ও তাইওয়ানের সাহায্যার্থে আনীত একটি মার্কিন বিলে ৯৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দ রয়েছে। পুতিনও একটি নতুন আইনে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাফ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে সাহায্য করার নেপথ্যে তাদের নিজস্ব আগ্রহ রয়েছে। আমেরিকা চায় রুশ স্বৈরাচার খর্ব করতে।

লেখক: প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status