ঢাকা, ৫ মে ২০২৫, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সা ম্প্র তি ক

অন্তর্বর্তী সরকার কতোদিন থাকবে?

সোহরাব হাসান

(১ সপ্তাহ আগে) ২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১২:৩১ অপরাহ্ন

mzamin

অন্তর্বর্তী সরকার কতোদিন থাকবে? নির্বাচন কবে হবে? নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হবে কি? নির্বাচনের আগে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি? নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি-না? যেকোনো রাজনৈতিক আড্ডা-আলোচনায় নির্বাচনই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার বিদেশিরাও জানতে চান, নির্বাচনটি কবে হবে?
এসব প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর কারও জানা নেই। সবাই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন। আবার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা নির্বাচনের তারিখ বা রূপরেখা ঘোষণা করতে চায়। কিন্তু সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। পৌঁছার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কেউ সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে চাইলে অন্যেরা বলেন, পুনর্লিখন করতে হবে। এক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে অন্য দল গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য জোর খাটাচ্ছে। আবার একটি দল জাতীয় নির্বাচনকে নিশানা করলে অন্যরা সবার আগে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন দেয়ার দাবি তুলেছে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারা মোটামুটি অভিন্ন অবস্থানে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথমে বিএনপি ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছিল। এরপর তারা ৩১ দফা কর্মসূচি দেয়, যাতে মৌলিক পরিবর্তনের কথা না থাকলেও রাষ্ট্র কাঠামোয় জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

পরবর্তীকালে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি কিছু সংশোধনীসহ সেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করে। সেক্ষেত্রে ৩১ দফা বিএনপি’র একক কর্মসূচি হওয়ার কথা নয়। অন্তত, বিএনপি’র সহযোগী ১২দলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের এটি ধারণ করার কথা। কিন্তু সমপ্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের একটি শরিক দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিকক্ষীয় সংসদের ধারণার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছে। তাদের শঙ্কা, এতে ক্ষমতাসীন দল আরও ক্ষমতাবান হবে। একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষ সংসদ কতোটা ক্ষমতার ভারসাম্য আনবে,  সে বিষয়েও সন্দেহমুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। উচ্চকক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচন ব্যবস্থা তুলে না দিলে এটিও এরশাদ আমলের ত্রিশ সেট অলঙ্কার হবে।

সামপ্রতিককালে গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে চারটি ধারা দেখা যাচ্ছে। প্রথম ধারা সংস্কার ও নির্বাচন উভয় প্রশ্নে বিএনপি’র সঙ্গে সহমত পোষণ করে। দ্বিতীয় ধারা চায় গণপরিষদ নির্বাচন, তৃতীয় ধারা জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন করতে আগ্রহী। আর চতুর্থ ধারার দাবি, গণভোট।
যেখানে সাত দলের মধ্যে চারটি ধারা দেখছি, সেখানে শতাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে একমত হওয়া কেবল কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব।  তাহলে কি নির্বাচন হবে না? নির্বাচন হতে হবে, তবে তার ধরন ও দিন-তারিখ অন্তর্বর্তী সরকারকেই ঠিক করতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি’র নেতৃত্ব নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে। সমপ্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সেরকম সিদ্ধান্তই হয়েছে। তবে তারা মাঠের আন্দোলনে নামার আগে একবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে তার মনোভাবটা জানতে চান। আরও অনেকের মতো বিএনপি’র নেতৃত্বও প্রধান উপদেষ্টাকেই শেষ ভরসা মনে করেন।
ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সময়ও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, ১৬ই এপ্রিল। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক ১৭ তারিখ। বিএনপি চায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের আলোচনা হোক। এ কারণে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকটি পেছানোর কথা বলেছেন। বিএনপি নেতারা এর আগেও বেশ কয়েকবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন নানা বিষয়ে। কিন্তু এবারের বৈঠকে তারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ চাইবেন এবং তা ডিসেম্বরের মধ্যে।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন ‘দেশের ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতিতে যখন যে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন, বিএনপি সে সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপি তো নির্বাচনের জন্যই এত যুদ্ধ করেছে, অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা মনে করি, এ বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। বিএনপি সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যান্য দলও নিচ্ছে। কোনো কোনো দল তো মনোনয়ন দিয়ে দিয়েছে, মাঠেও নেমে গেছে।’
এনসিপি’র এক নেতা বলেছেন, ড. ইউনূসকে ৫ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, জনগণ বলছে আমাদের ৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা উচিত। এসব কথা-বার্তা বিএনপি’র মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে দ্রুত তারিখ ঘোষণা না হলে বিএনপি আন্দোলনে যাওয়ার কথাও চিন্তা করছে। কিন্তু সমস্যা হলো এটি তো প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ঘাড়ে চেপে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার নয়। অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি নিজেও আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে যেই সরকারকে ক্ষমতায় আনার কৃতিত্ব দাবি করে, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন কতোটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, সেই প্রশ্নও আছে। বিএনপি’র নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য শেষ পর্যন্ত তাদের আন্দোলনে যেতে হবে না, সরকার ঘরে বাইরে যেভাবে চাপে আছে, তাতে আন্দোলন ছাড়াই তারা চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

বিএনপি’র আরেকটি উদ্বেগ হলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়া। এক্ষেত্রে সরকারের বাইরেও নানা পক্ষের হিসাব-নিকাশ আছে বলে শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে বিএনপি ধীরে এগোতে চায়। তারেক রহমানের দেশে আসার বিষয়টি এখনই ইস্যু করতে চাইছে না। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে বিএনপি’র প্রতি জনসমর্থন আরও বাড়বে। সেই অবস্থায় তারেক রহমানের ইস্যুটি সামনে আনা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বিএনপি নেতৃত্ব তড়িঘড়ি করে কিছু করতে চান না; যদিও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অধৈর্য হয়ে পড়েছেন।

ভোটের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে বিএনপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে? আওয়ামী লীগ মাঠ ছাড়া। দলটির  নেতাকর্মীরা হয় পলাতক অথবা জেলখানায়। এই অবস্থায় নির্বাচন হলে বিএনপি অধিক রাজনৈতিক সুবিধা পাবে বলে মনে করেন দলের সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা কখনো জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো দলকে ভোট দেবেন না। ছাত্রদের দল এনসিপি আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা তাদের ভোট দেবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিএনপি’র দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া এই দুটি দলের রাজনৈতিক মত ও পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও সামাজিক অবস্থান অভিন্ন। একই মধ্যশ্রেণি থেকে উঠে আসা নেতাকর্মীদের কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন তাদের সহাবস্থান ছিল। বিএনপি’র নেতারা যে আওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন, তারও কারণ ভোটের হিসাব-নিকাশ।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি’র পুরনো বিবাদ ফের সামনে এসেছে। বিভিন্ন স্থানে দুই দলের নেতাকর্মীরা সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন। আবার জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গেও তাদের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় সময় রাজনৈতিক কারণে হামলার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। অবাধ্য ও অপরাধী নেতাকর্মীদের বিএনপি বহিষ্কার করলেও হিংস্র কার্যকলাপ চলছে। এই পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে ও অস্থির করে ফেলেছে’।

গত ৩০শে মার্চ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে স্থানীয় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষে হামলার শিকার হন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমের বাবা আজিজুর রহমান (বাচ্চু মোল্লা)। হামলায় তার হাত ভেঙে যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। উল্লেখ্য, তথ্য ও সমপ্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাবা আজিজুর রহমান। গত ৭ই আগস্ট থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবর অনুসারে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের একটি তালিকা করা হয়েছে এবং অপরাধগুলো আর্থিক ও মৌখিক সহিংসতা (চাঁদাবাজি, হুমকি, দখল ইত্যাদি); শারীরিক সহিংসতা (ভাঙচুর, মারধর, সংঘর্ষ ইত্যাদি) এবং মৃত্যু-এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি সংস্কার চায় না বলে নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারাও নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। ঈদে বেশির ভাগ দলের কেন্দ্রীয় নেতা সম্ভাব্য ৩৯টি নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি’র সামনে এনসিপি ও জামায়াতই নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী। এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে যদি কোনো ‘বোঝাপড়া’ হয় তাহলে ভোটের হিসাব-নিকাশ বদলেও যেতে পারে। 

সূত্র: জনতার চোখ

পাঠকের মতামত

২০২৮সাল।

Shafi Siddique
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বর্তীকালিন কতদিন থাকার নিয়ম তা জানতে চাই আইন কি বলে বা সংবিধানে এ ধরণের বিধান আছে কিনা।

মিলন আজাদ
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status