ঢাকা, ১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারসমূহের ভঙ্গুরতার কারণ ও প্রতিকার

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন
১৯ মে ২০২৫, সোমবার
mzamin

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের আবির্ভাব নিয়েও কিন্তু দেশের মানুষের আগ্রহের শেষ নাই। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে বা কে কে হয়েছিলেন, তিনি কার কাছ থেকে কখন কিভাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা অন্তত তিনটি বিকল্প জটিলতায় নিপতিত হয়ে আছে, যা সময়ে সময়ে ভুট্টু ও তার উত্তরসূরির রেফারেন্সের কথা মনে করিয়ে দেয়।

অনেকেই প্রশ্ন করেন পাকিস্তানের প্রথম কায়দে আযম ও পরবর্তী সরকারসমূহ বেশিদিন টিকে নাই কেন? উত্তর একাধিক থাকলেও একটি হতে পারে যে সে সরকারগুলো সুপরিকল্পিত ছিল না। অপরিকল্পিত সরকার টিকবে না- এটাই স্বাভাবিক। আমরা গল্পে জেনেছি একবার বালক কায়দে আযম বন্ধুদের নিয়ে একটি দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। তখন স্টার্ট বলার সঙ্গে সঙ্গে চার বন্ধু চারদিকে দৌড় দিল কিন্তু কায়দে আযম ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। সে কেন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করায় কায়দে আযম বলল, আমরা কোনদিকে কতোদূর ও কতোক্ষণ দৌড়াবো সে পরিকল্পনার আগেই তোমরা দৌড়ালে এটা তো বুদ্ধিমানের কাজ হলো না। তাই আমি দৌড়াইনি। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট রাতে কায়দে আযম কি সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক দায়িত্ব নিয়ে গভর্নর জেনারেল হয়েছিলেন? তিনি কার কাছ থেকে কিসের ভিত্তিতে সরকারি হ্যান্ড ওভার টেক ওভার প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন? ইতিহাস কি বলে? সে সময় ভারতের ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত ও পাকিস্তান- উভয় দেশের গভর্নর জেনারেল হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ নেতা মো. আলী জিন্নাহ তাতে বাধ সাধেন এবং নিজে অনতিবিলম্বে  গভর্নর জেনারেল পদে আসীন হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তাই করেন। (যদিও পরিকল্পনার আলোকে এ পদের জন্য খাজা নাজিমউদ্দিন সহ আরও উপযুক্ত নেতা ছিলেন)। 

এখন কথা হলো এই সরকারি হ্যান্ড ওভার টেক ওভার কি পরিকল্পনার ভিত্তিতে হয়েছিল? (সরকারি নিয়মে হ্যান্ড ওভার টেক ওভার প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব দান-গ্রহণ না হয়ে থাকলে সেটা অন্তর্বর্তী বা গণ জাগরণী বা বিপ্লবী সরকারও হতে পারতো)। পূর্ববঙ্গ/পূর্ব বাংলার সঙ্গে পাকিস্তান নাম যুক্ত হয় নাই, এর সীমানা ও আয়তন ঠিক হয় নাই। পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে ৪ প্রদেশ পাকিস্তানের স্বাতন্ত্র্যও অপরিকল্পিতভাবে অনির্দিষ্ট। তাহলে মো. আলী জিন্নাহ গভর্নর জেনারেলের চেয়ারটি ছাড়া আর কিসের ভিত্তিতে তার বা তার উত্তরসূরির জন্য রাষ্ট্রসম্পদ বুঝে নিয়েছিলেন? না নেননি। তাই  উত্তরসূরীর হাতে রাষ্ট্রটি স্থায়িত্বশীলতা পায় নাই। তারা গদির জন্য রাজনীতি করে বড় নেতা বা কায়দে আযম হলেন, প্রায় অর্ধডজন সামরিক জান্তা গদি আঁকড়ে থাকলেন কিন্তু রাষ্ট্রটি অখণ্ড রাখতে পারলেন না। তারা রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখলেন কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  অভাবে রাষ্ট্রটি অনিশ্চয়তায় পড়লো। তারপর? তারপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে  দেশটি দুই টুকরো করে কেবল পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতার দোহাই দিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টু ক্ষমতা দখল করে প্রধানমন্ত্রী হলেন এবং শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুললেন। এক্ষেত্রে কায়দে আযম ও ভুট্টুর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলো না।
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের আবির্ভাব নিয়েও কিন্তু দেশের মানুষের আগ্রহের শেষ নাই। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে বা কে কে হয়েছিলেন, তিনি কার কাছ থেকে কখন কিভাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা অন্তত তিনটি বিকল্প জটিলতায় নিপতিত হয়ে আছে, যা সময়ে সময়ে ভুট্টু ও তার উত্তরসূরির রেফারেন্সের কথা মনে করিয়ে দেয়। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রেক্ষিত তথ্য এবং স্বাধীনতা উত্তর দেশ পরিচালনা কৌশল একে আরও জটিল করে তুলেছে। এতে ক্রমে ক্রমে মানুেেষর রাজনীতি ও দেশের রাষ্ট্রনীতি চরম অব্যবস্থায় নিপতিত হয়ে আমাদের এই ভূখণ্ডকে সংজ্ঞাহীন করে এর অস্তিত্ব বিপন্নপ্রায় করেছে। যা প্রায়শ ভুট্টু ও তার পূর্বসূরীদের রেফারেন্সের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন দেশের মৌলিক ও উন্নয়ন পরিসংখ্যানে বিদেশিরাও আতঙ্কিত। দেশের রাজনৈতিক কর্মী ঘরছাড়া, নেতা-নেত্রী দেশছাড়া। সবকিছু বাহ্যত মনে হয় অপরিকল্পিত শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির ফলাফল এটাই, যা বাংলাদেশে হয়েছে। দেশ এখন রিসেট বাটন চাপার সিদ্ধান্তের কবলে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে সম্পূর্ণ পূর্ব অপরিকল্পিত অস্থায়ী ভারপ্রাপ্ত সরকার কার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন? সাংবিধানিক সরকারের বদলে সরকারি সাংবিধানিক নিয়মে হ্যান্ড ওভার টেক ওভার প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব দান-গ্রহণ না হয়ে থাকলে সেটা অন্তর্বর্তী বা গণ জাগরণী বা বিপ্লবী সরকারও হতে পারে। তবে, সরকারের বর্তমান অবিমিশ্র প্রশাসনে সফল হওয়া এবং সফলতা ধরে রাখা অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন। যা বারবার দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। দেশের রাজনীতি আজ চরমভাবে অবক্ষয়িত। বিগত সরকারের অবহেলা ও দুরভিসন্ধিতে পক্ষপাত ও অদক্ষতার কবলে। এভাবে দেশে চলতে পারে না।
তাই করণীয় হিসেবে সরকারসমূহের ভঙ্গুরতার কারণ ও প্রতিকারকল্পে বলা যায়-
৬-১২ মাস দেশে রাজনীতি বন্ধ ও সর্বাধিক সংখ্যক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কৃষি  কর্মসংস্থানধর্মী বাজেট প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক অবহেলা ও দুর্নীতি কর্মে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা।
দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সপক্ষে আমদানি বন্ধ করা।
আশা করি, এই তিনটি পয়েন্টসহ সময়ে সময়ে দেখা দেয়া সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ১-২ বছরের মধ্যে দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক নির্বাচন, স্বচ্ছতা ও সচ্ছলতা আসবে।
মনে রাখতে হবে ভারত ভাঙা, পাকিস্তান ভাঙা, বাংলাদেশের পতন ও নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় একই সূত্রে গাঁথা। আর তা হলো- অরাজনৈতিক কারণে রাজনীতিকের অধঃপতন এবং জনস্বার্থের রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ভুলে যাওয়া।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status