ঢাকা, ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ

ঝুঁঁকি নিলেন অর্থ উপদেষ্টা

টুটুল রহমান
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

উল্টো পথে হাঁটা কঠিনই বটে। আর বিপরীত স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার শুধু সাহসের নয়, দুঃসাহসিক। ঝুঁকি আছে। কিন্তু টিকতে হলে সব উপেক্ষা করে উল্টোপথে কখনো-সখনো হাঁটতে হতে পারে। স্রোতের বিপরীতে গা উঁচিয়ে ভাসতে হয়। এটাই চ্যালেঞ্জ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কি সেই ঝুঁকি নিলেন এবারের বাজেটে? ৫ই আগস্ট পটপরিবর্তনের পর মানুষের মনে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে তার কতোটুকুই বা পূরণ হলো বাজেটে। প্রশ্নটা বড় করে দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ভিন্ন কিছু করার সুযোগ ছিল। সেই ভিন্ন করা হয়নি, না করা যায়নি সেটা অর্থ উপদেষ্টা ভালো জবাব দিতে পারবেন। তবে সাদাচোখে দেশের রাজনৈতিক মহল, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেট গতানুগতিক। অনেকটাই আগের সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার একটা গোঁ ধরা ইচ্ছে অর্থ উপদেষ্টার আছে বটে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না টানতে পারলে, ব্যাংক খাত সচল না হলে, কর আহরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে মূল্যস্ফীতির  ঘোড়া কতোটা সামলানো যাবে সেটা দেখার বিষয়। মূলত এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। ঝুঁকি তো বটেই।

বাজেটের দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি, বিদেশি ঋণের কঠোর শর্ত, বিনিয়োগে স্থবিরতাসহ বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। যা আগের বছরের চেয়ে সাত হাজার কোটি টাকা কম। নতুন বাজেটকে ‘ব্যতিক্রমধর্মী’ বলে অভিহিত করছেন অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায়। বলেছেন, “আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে।”
প্রশ্ন হচ্ছে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগে যখন স্থবিরতা, হোঁচট খাচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা, গ্যাস সংকটসহ নানাবিধ কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিবিএসও বলছে, প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ হবে, তখন তো অর্থ উপদেষ্টার এর বাইরে যাওয়ার উপায় থাকে না। এই সংকট থেকে বের হতে হলে তাকে সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতেই হবে। কারণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে সাধারণ মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে নতুন কী ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেটি ঘিরে এক ধরনের বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু অর্থনীতিবিদরা তো ব্যতিক্রম কিছু খুঁজে পেলেন না বাজেটে। তারা বলছেন, আগের রাজনৈতিক সরকারগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে খুব একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

অর্থনীতি বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং’ বা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “এবারের বাজেটে বেশকিছু ভালো উদ্যোগ বা প্রত্যাশার কথা বলা হলেও যে কাঠামোতে বাজেট দেয়া হয়েছে, সেটি পুরনো। ফলে গতানুগতিক বাজেটের পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলো এখানেও রয়ে গেছে। অথচ এই সরকারের সামনে ভিন্নধর্মী একটা বাজেট উপস্থাপনের সুযোগ ছিল, যা তারা সেভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হননি।”
বাজেটে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ না নিয়ে আগের মতোই করদাতাদের করের হার বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটিরও কঠোর সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। 
প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, “মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে তিন দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে, যা চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্যমেয়াদে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি।”

এ ছাড়া চলতি বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার সামনের বছর কমিয়ে সাড়ে ছয় শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নতুন বিনিয়োগসহ অর্থনীতিতে যে ধরনের পরিবর্তন দরকার, সেটি আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সেলিম রায়হান প্রশ্ন তুলেছেন, “ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে বাড়ানোর জন্য যে বাধাগুলো রয়েছে, সেগুলো কতোটুকু দূর করা গেছে? বরং দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের সবচেয়ে স্থবির অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেটি বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হচ্ছে।”
গত বছরের মতোই ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা রাখা হয়েছে। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছর এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নারী করদাতা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা ও স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে এই আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা হবে।

এ ছাড়া গেজেটভুক্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ করদাতাদের জন্য ২০২৬- করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন করদাতাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের পরিমাণ এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে পরের দুই বছর করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে ন্যূনতম কর দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয় হিসাব করার সময় সর্বোচ্চ বাদযোগ্য অঙ্কের পরিমাণ সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এবারের কমানোর বদলে সার্বিকভাবে অধিকাংশ করদাতার ওপর করের চাপ বাড়িয়েছে সরকার।
এক্ষেত্রে করহারের ধাপে কিছুটা পরিবর্তন এনে সাতটির জায়গায় ছয়টি ধাপে করহার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
সর্বোচ্চ করহার আগের মতো ৩০ শতাংশ রাখা হলেও আগের ধাপগুলোর সীমা কমিয়ে আনায় গত বছরের সমান আয় করেও বেশি হারে কর দিতে হবে অনেক করদাতাকে।

বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরে আয়করের হার আগের মতোই থাকছে।
তবে পরের দুই বছরের করহারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরে বার্ষিক তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না। পরবর্তী তিন লাখ টাকা আয়ে কর দিতে হবে ১০ শতাংশ হারে।
যেহেতু কর হিসাব করা হয় আগের বছরের জুলাই মাস থেকে আয়বছর ধরে, ফলে এই জুলাই মাস থেকেই নতুন করের হার প্রযোজ্য হবে।

আগে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর পাঁচ শতাংশ এবং তার পরের চার লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দেয়া লাগতো। অন্যদিকে, সাড়ে আট লাখ টাকার ওপরে পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা আয়ের জন্য ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। এখন ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকার ওপরে পরবর্তী চার লাখ টাকা আয়ের জন্য একই হারে কর দিতে হবে। সাড়ে ১৩ লাখ টাকার ওপরে পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা আয়ের জন্য আগে যেখানে ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো, এখন সেখানে ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ওপরে পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা আয়ের জন্য ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। একইভাবে, এখন ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ওপরে পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা আগে সাড়ে ১৮ লাখ টাকার ওপরে পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের জন্য দিতে হতো।

আর সাড়ে ৩৮ লাখ টাকার ওপরের পরবর্তী সকল আয়ের জন্য আগে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো, এখন সেখানে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ওপরে সকল আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার পুরনো কাঠামো অনুসরণ করেছে। করের আওতা না বাড়িয়ে বরং করহার বাড়ানো হয়েছে। এতে যারা ইতিমধ্যে কর দিচ্ছেন, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে আগের বছরের মতো এবারো কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এটিও আগের  সরকারগুলোর  দেয়া কর ফাঁকির মতো অপরাধকে উৎসাহিত করবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এটার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে, যা অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রসংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করা হচ্ছে। সরকার দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ একইসঙ্গে বৈষম্যমূলক। কারণ, এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের অধিকতর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সৎ উপার্জনকারীদের ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।

এখন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো কী? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিপরীতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈষম্যবিরোধী চেতনা ও কর্মসংস্থান। কিন্তু বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা না গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, করের আওতা না বাড়িয়ে সরকার যেভাবে করের হার বাড়িয়েছে, তাতে করদাতাদের ওপর চাপ বেড়েছে।


লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status