ঢাকা, ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

মন্তব্য প্রতিবেদন

কাতারে হামলা হলে ‘নিন্দা’, গাজা পুড়লে ‘নীরবতা’?

মোহাম্মদ আবুল হোসেন

(১ দিন আগে) ২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:০৩ অপরাহ্ন

mzamin

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরাইল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। ইরান ও ইসরাইল এখনও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে এবং হামলার ধারাবাহিকতা থেমে নেই। ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে, যতক্ষণ না ইসরাইল হামলা বন্ধ করে, ততক্ষণ তারা থামবে না। অন্যদিকে, কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাতার ও সৌদি আরব ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের’ অভিযোগ এনে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। এখানেই শুরু হয় প্রকৃত প্রশ্ন- ইরান যখন পাল্টা জবাবে হামলা করে, তখন তা ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’, ‘সার্বভৌমত্বের হস্তক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু যখন ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণ ঘটায়, সিরিয়ায় হামলা চালায়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, তখন আন্তর্জাতিক আইন কোথায় থাকে? সার্বভৌমত্বের কথা তখন কেউ বলেন না কেন? গাজার শিশুদের ক্ষুধায় কাঁপতে কাঁপতে মৃত্যু, তাদের মাথায় ড্রোন থেকে বোমা ফেলা হয়- এগুলো কি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভেতর পড়ে না? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যখন বলেন গাজা দখল করে নেবেন। তারপর সেখানে রিভেরা বানানো হবে। এসব পরিকল্পনা কি সার্বভৌমত্বের সর্বনাশ নয়? অথচ সেই সময়ে সৌদি আরব কিংবা তথাকথিত মুসলিম নেতৃত্ব কোথায় ছিল? তখন তারা চুপ, নীরব, নিস্পৃহ। যা-ও বা কথা বলেছে, তা শুধু গা বাঁচানোর জন্য। তাদের কণ্ঠে জোরালো কোনো প্রতিবাদ ওঠেনি। তারা আন্তর্জাতিক ফোরামে টু শব্দটি করেনি। যে সৌদি আরবকে মুসলিম জাতির অভিভাবক হিসেবে মনে করা হয়, তারা জোরালো অবস্থান নিলে গাজা সংকট সহ মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যাগুলো এত জটিল আকার ধারণ করতো না।

ইসরাইলে হামলা, গাজায় হামলা, ইরানে হামলা, সিরিয়ায় হামলা, লেবাননে হামলা- কোনো হামলাই সমর্থনযোগ্য নয়। গাজায় হামাস যে লড়াই করছে সেটা তাদের স্বভূমির অধিকারের লড়াই। তাদের দেশের স্বাধীনতার লড়াই। এই লড়াই করতে গিয়ে যুগের পর যুগ তারা ইসরাইলের নিষ্পেষণ, গণহত্যার শিকার। তাদের ভূমিকে দখল করে নিচ্ছে ইসরাইল। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে হামাস। তাদেরকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। নিজের দেশের স্বাধীনতা দাবি করার করার কারণে তারা পশ্চিমাদের চোখে ‘সন্ত্রাসী’। আসলেই কি তারা সন্ত্রাসী? গাজা, পশ্চিম তীরে যখন তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরাইল তখন মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো কোথায়? তাদের চোখে এসব মানুষের আকুতি কি চোখে পড়ে না? এ সময়ে তারা কি দেখতে পান না আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন? এটা কি তাদের দ্বৈতনীতি নয়? অন্যদিকে ইরানে প্রথম আগ্রাসী হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তাদের এবং পশ্চিমাদের দাবি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ কোথায়? তথ্যপ্রমাণ অস্পষ্ট, সেই ইরাক যুদ্ধের মতো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ইরাকে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের যুদ্ধ ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল না। তাদের যুদ্ধ ছিল ইরাকের তেলসম্পদকে লুট করে নেয়া। যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ইরাকে কোনো ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারেনি তারা। মাঝখান দিয়ে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। ইরানও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে- এই অভিযোগে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে প্রথমে ইসরাইল এবং পরে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আসলেই কি তাদের অভিযোগ সত্য? যদি সত্য হয়ে থাকে, যদি ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির বাইরে গিয়ে অস্ত্র তৈরি করে থাকে তাহলে কোনো কথা নেই। কিন্তু সেই প্রমাণ কই? এক্ষেত্রেও অস্পষ্ট অভিযোগে ইরানে আক্রমণ করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ইরান। সেই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছে তারা

ইরান বলছে, তারা আত্মরক্ষা করছে। ইরান যখন এটা করছে তখন তাকে বলা হচ্ছে অপরাধ, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইসরাইল যখন আক্রমণ করে, তখন তা ‘আত্মরক্ষা’! এই ভাষাগত পক্ষপাতই তো বিশ্ব রাজনীতির ভণ্ডামির নগ্ন রূপ তুলে ধরে। আজ ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরব কঠোর ভাষায় বিবৃতি দিচ্ছে, কিন্তু যখন আল-আকসা মসজিদ রক্তে রঞ্জিত হয়, যখন ফিলিস্তিনি নারী-শিশুদের মরদেহ সারি ধরে পড়ে থাকে- তখন তাদের বিবেক কেন কথা বলে না? কীসের ভয়? তেল-নির্ভর অর্থনীতির গলায় পশ্চিমারা চেপে ধরা চাপের ভয়?
না, কোনো হামলার পক্ষে অবস্থান নেওয়া সুস্থ বিবেকের কাজ নয়। কিন্তু নিন্দা করতে গেলে তা ন্যায়ভিত্তিক হওয়া উচিত। ইরানকে দোষী করার আগে, একই কণ্ঠে ইসরাইলের আগ্রাসনকে দোষারোপ করাও দরকার। একতরফা নিন্দা কেবল জুলুমের পক্ষকেই শক্তিশালী করে। বিশ্ব যদি সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে তাকে একই চোখে দেখতে হবে- ইসরাইল ও ইরানকে, গাজা ও তেল আবিবকে, আরব ও পারস্যকে। নইলে এই দ্বিচারিতাই এক নতুন বিপর্যয়ের জন্ম দেবে, যার খেসারত দিতে হবে নিরীহ মানুষকে- গাজা হোক বা তেহরান।
 

পাঠকের মতামত

ওরে বাটপার!!! গর্তের ভিতর মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকা নিরাপদ ভাবছিস? তোদের পুচ্ছে আগুন লাগল বলে, বেশিদিন নাই। সময় বড় নির্মম, শুধু অপেক্ষা মাত্র।

Shah
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৭:২৭ অপরাহ্ন

সৌদীর রাজ পরিবারের ও হাসিনার পরিনতী হবে ।

Monir
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:২২ অপরাহ্ন

সৌদি আরব জোরালো অবস্থান নিলে গাজা সংকট সহ মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যাগুলো এত জটিল আকার ধারণ করতো না।

JAHIR HOSSAIN
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

এরা পাক্কা মুনাফেক।

আব্দুল্লাহ
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে সমস্ত মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণ করো। দয়া করে সবকিছু ধ্বংস করো। রক্তাক্ত ইসরাইলকে ভেঙে ফেলো।

Nadim Ahammed
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে সমস্ত মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণ করো। দয়া করে সবকিছু ধ্বংস করো। রক্তাক্ত ইসরাইলকে ভেঙে ফেলো।

Nadim Ahammed
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

Attack on all US BASE in Middle East. Please destroy everything. Collapse Bloody Israel.

Nadim Ahammed
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

জাজাকাল্লাহ প্রিয় লেখক।

Rana Ahmed
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status