বাংলারজমিন
গাইবান্ধায় রাজা বিরাটের ঢিবি খননে মিললো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
রওশন হাবিব, গাইবান্ধা থেকে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাজা বিরাটে প্রথমবারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য পরিচালনা করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। খননের মাঝামাঝি এসে বেরিয়ে আসছে প্রাচীন ও মধ্য যুগের কিছু অবকাঠামো বলে ধারণা করছেন রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ৮ সদস্যের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা এ কথা বলেন।
বর্তমান খননে ধারণার চেয়ে অধিক বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে বলে জানান নাহিদ সুলতানা। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলঙ্কৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজ-সজ্জায় ব্যবহৃত হয়), ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে বলে জানায়- খননকারী দল। বর্তমানে ঢিবিটির আকার ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪ মিটার, বলছে খননকারী দল। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন আমলের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল বৃহৎ আকারে খনন কার্য সম্পন্ন না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় বলে জানান- নাহিদ সুলতানা।
তবে জনশ্রুতি থেকে জানা যায় এখানে প্রাচীন একটি দুর্গ নগরী ছিল। যার নিরাপত্তার জন্য ছিল সু-উচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে ছিল প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। তবে বর্তমান খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দুর্গ নগরীর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে- মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দুই-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল যা বর্তমানে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
খাজা এমএ কাইয়ুম নামের স্থানীয় গবেষক যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে গবেষণা করছেন তার একটি নোট বুকে লিখে গেছেন বিরাট রাজা সমস্ত ভারত বর্ষে মৎস্য রাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই অঞ্চলে মাছ চাষের জন্য তিনি অনেক পুকুর খনন করেন। ‘সুধীর চন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরাণিক অভিধান’ হতে জানা যায়- বিরাট রাজা মৎস্য দেশের রাজা বিরাট রাজ কুবের তুল্য ধনী ছিলেন। তার গো-ধোনের তুলনা ছিল না। পাবেরা দ্রৌপদীর সহিত বনবাসকালে দ্বাদশ বছর সমাপ্ত হলে এক বছর অজ্ঞাত বাস কালে বিরাটের রাজ সভায় ছদ্মবেশে ও ছদ্ম নাম অতিবাহিত করেন’। রাখাল রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৫-২৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ১৯০৫ সালের দিকেও এ স্থান জঙ্গলাবৃত ছিল। সামান্য কয়েক বছর পূর্বে সাঁওতালরা এখানে পরিষ্কার করে ঘরবাড়ি তৈরি করেন।
আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা আরও বলেন, প্রত্নস্থলটি ইতিপূর্বেই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এই স্থানকে গুরুত্ব দিয়ে বৃহত্যাকারে খনন কার্য পরিচালনা করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মাঝে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পরবর্তীতে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।