বাংলারজমিন
পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা নদী তীরবর্তী মানুষ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে নদী পাড়ের চার গ্রামের বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম দিন পার করছেন। সরজমিন জানা যায়, পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ দিন ধরে বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ মাইল, টিকটিকিপাড়া, মসলেমপুর ও মুন্সিপাড়া সহ আশপাশের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি; হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও নদী প্রতিরক্ষা বাঁধও। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে চার গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। দিশাহারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে প্রতিকার চান। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসন বরাবর দিয়েছেন আবেদন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বারবার তাগাদা দিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। কিন্তু এখনো ভালো কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় চরম হতাশা আর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো সুখবর নেই বলে অভিযোগ করেছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডও বারবার দায়সারা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন রাইটা ফয়জুল্লাহপুর মহিষকুন্ডি পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে। এখানেও গত দুই মাস আগে ভাঙন শুরু হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ পদ্মা নদী রক্ষা পাউবোর বেড়িবাঁধ। আতঙ্ক আর ঝুঁকিতে রয়েছে চার গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। নদী ভাঙনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মুন্সিপাড়ার বাসিন্দারা মানববন্ধন করে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। এ লক্ষ্যে তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার আহ্বান জানান। কিন্তু মানববন্ধন হওয়ার ৩-৪ দিন পরেও আশানুরূপ কোনো ফলাফল না পেয়ে হতাশ তারা। বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা গিয়াস মুন্সি বলেন, আমাদের জানামতে এই পদ্মা নদীতেই কয়েক হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনেও একরের পর একর কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। এদিকে, জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইবাদত আলী জানান, তার মোট সাত বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এক মাস আগে আরও দেড় বিঘা বিলীন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে গোটা এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। তখন লাখো মানুষকে ঘরছাড়া হতে হবে। ফয়জুল্লাহপুর এলাকার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেকদিন থেকেই বলছে এখানে কাজ করবে কিন্তু এখন পর্যন্ত করেনি। তারা এখানে বালির স্তূপ সরাতে বলছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বালু এখনো সরায়নি। তাই কাজও আরম্ভ হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীও আমাদের কাছে একটি আবেদন দিয়েছে। সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, দ্রুতই তারা ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বস্ত করেছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা আমাদের টিম পরিদর্শন করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছি। তারা বরাদ্দ দিলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। আর জিও ব্যাগ ফেলার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। প্রায় দেড় মাস আগে ফয়জুল্লাহপুর এলাকার ভাঙনের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন বালু সরানো সাপেক্ষে কাজ শুরু হবে।