ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চোখে

ত্রাণযোদ্ধাদের টুপিখোলা স্যালুট এবং কিছু কথা...

লুৎফর রহমান
৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

ব্যারিস্টার সুমন, গায়ক তাসরিফ এবং আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মতো আরও অনেকে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বন্যাদুর্গত এলাকায়। মাদারীপুর থেকে খাদ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে বন্যাকবলিত হবিগঞ্জে ছুটে এসেছিলেন একদল তরুণ। চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণের ট্রাক এসেছে সিলেটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ান। মহা দুর্যোগের সময়ে নানা শ্রেণি-পেশার এই ত্রাণযোদ্ধাদের প্রতি টুপি খোলা স্যালুট। যারা দুঃসময়ে অসহায় বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি সিলেট-সুনামগঞ্জ তথা বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।


ভয়াবহ বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার জেলা ডুবে আছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। আকস্মিক বানের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। বন্যায় অনেকে ঘরবাড়ি এবং সহায়-সম্পদ হারিয়েছেন। বন্যার তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিজেদের সম্পদ রক্ষায় নজর পর্যন্ত দিতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন
এক কাপড়ে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়েছেন অনেকে। তারপরও অর্ধশত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এই বন্যা। তাদের কেউ পানিতে ডুবে, কেউ বজ্রপাতে বা সাপের দংশনে মারা গেছেন। শুরুর ভয়াবহ ধাক্কাটা ছিল সিলেট এবং সুনামগঞ্জে। পরে তা বিস্তৃত হয় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে। একই সময়ে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জেও বন্যায় বিপর্যস্ত হয় লাখ লাখ মানুষ। জুনের মধ্যভাগ থেকে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে যে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয় এর জেরেই সিলেট অঞ্চলে অস্বাভাবিক এই বন্যা। বলা হচ্ছে স্মরণকালের ভয়াবহতম এই বন্যার ধরন আগের কোনো বন্যার সঙ্গেই মিলছে না। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মানুষের বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এক অসহায় অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কেউ কারো খবর নেয়ার সময় ছিল না। কে কোথায় আছেন- জানার সুযোগ ছিল না। এমন কি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ভেঙে পড়েছিল পুরো যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

টেলিফোন মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বন্যার ভয়াবহতম সময়ে সিলেট-সুনামগঞ্জের দুর্গত এলাকার মানুষের কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছিল না। দেশে-বিদেশে থাকা স্বজনরা উদ্বেগ নিয়ে বিনিদ্র সময় কাটিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল সময় উপযোগী। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বিরামহীন তৎপরতায় অনেক মানুষকে যথাসময়ে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে থাকা অনেকের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তারা। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পাশে দাঁড়ানোয় আশা আর ভরসা পেয়েছিলেন বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষজন।  একই সময়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ছিল আশা জাগানিয়া। অনেকটা শূন্য হাতেই এসব সংগঠন ও ব্যক্তি সিলেটে ছুটে গিয়েছিলেন অসহায় মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে নিতে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরার পাশাপাশি আকুতি জানিয়েছিলেন সহায়তা পাঠানোর। এসব মানুষের আহ্বানে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। 

দেশ-বিদেশ থেকে অজস্র মানুষ বন্যাদুর্র্গতদের সহায়তা দিয়ে ত্রাণযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ান। এদের কল্যাণে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা আশার আলো দেখতে পান। সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যখন ত্রাণ সংকট তখন অনেকটা ত্রাতা হয়ে সামনে দাঁড়ান ত্রাণযোদ্ধারা। বন্যার খারাপ সময়টাতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন একটি হট লাইন চালু করেছিল বন্যাদুর্গতদের সহায়তার জন্য। দেয়া হয়েছিল টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর। কিন্তু বন্যার কারণে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সেই হটলাইনে ও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তখন মানবজমিনকে জানিয়েছিলেন, চেষ্টা করেও তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। দু’জন ইউএনও তাকে যে খবর দিয়েছেন তা ভয়াবহ। পানিতে ভাসছে পুরো জনপদ। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নিজের এলাকায় যেতে পারেননি মন্ত্রী। এলাকায় যে কয়জন সংসদ সদস্য অবস্থান করছিলেন তারাও বের হতে পারেননি বন্যার ভয়াবহতার কারণে।  

ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে বানভাসি মানুষের জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ হয়ে আসা ত্রাণযোদ্ধাদের কেউ কেউ ছিলেন চেনা মুখ। অনেকেই একেবারেই অপরিচিত মুখ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে তারা ছুটে এসে পাশে দাঁড়ান সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত মানুষের।  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন নেট দুনিয়ায় পরিচিত মুখ। সমাজে বিদ্যমান নানা অসঙ্গতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে তিনি খ্যাতি কুড়িয়েছেন। লন্ডনে ব্যারিস্টারি পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন মানুষের কল্যাণের ব্রত নিয়ে। সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরুর পরই তিনি ছুটে যান সেখানে। নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে তুলে ধরেন বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ান দেশে-বিদেশে থাকা অনেক মানুষ। অপ্রত্যাশিত সাড়া পান তরুণ এই আইনজীবী। শুরুর কয়েক দিনেই দুই কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন ত্রাণ টিম গঠন করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি নিজেও রাতদিন অবস্থান করেন এসব এলাকায়। ব্যারিস্টার সুমন এখনো ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমেও অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 

বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য বড় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে সামাজিক সংগঠন আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। শায়খ আহমাদুল্লাহ’র নেতৃত্বে একদল তরুণ আলেমদের এই উদ্যোগে শরিক হয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ পর্যন্ত এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকার বেশি মূল্যের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে বন্যাদুর্গত মানুষদের কাছে। তাদের ত্রাণ কার্যক্রম এখনো চলছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামনে জোরালোভাবে পুনর্বাসন কার্যক্রমে তারা অংশ নেবে। আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনও বন্যাদুর্গতদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে। সংগ্রহ অর্থের হিসাবের সঙ্গে অর্থ ব্যয়ের হিসাবও নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে সংগঠনটি।  তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সহায়তা দিতে সিলেটে অবস্থান করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যার হানা। দুর্বিষহ এক পরিস্থিতি চারপাশে। এমন অবস্থায় মাথা বেঁধে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন তিনি ও তার টিমের সদস্যরা। তাসরিফের ফেসবুক লাইভে সাড়া দেন অসংখ্য মানুষ। 

আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। একদিনে ১৬ লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাসরিফ অনেকটা অবাকই হয়েছিলেন। জানা ছিল না পরে আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে তার ত্রাণ টিমের জন্য। পরের কয়েকদিনে দুই কোটি টাকার বিশাল তহবিল গড়ে ওঠে মানুষের পাঠানো অর্থে। সেই সহায়তা বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছেন তাসরিফ ও তার টিমের সদস্যরা। ইতিমধ্যে ৫ হাজার পরিবারে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তারা। আরও ১০ হাজার পরিবারকে সহায়তার প্রস্তুতি চলছে। যদিও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হয়েছে এই ত্রাণযোদ্ধাকে। একজন পুলিশ সদস্যের খারাপ আচরণে কষ্ট পাওয়ার অনুভূতি ফেসবুকে শেয়ারও করেছিলেন তিনি। তবে ত্রাণ কার্যক্রম থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরে দাঁড়াননি। ব্যারিস্টার সুমন, গায়ক তাসরিফ এবং আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মতো আরও অনেকে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বন্যাদুর্গত এলাকায়। মাদারীপুর থেকে খাদ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে বন্যাকবলিত হবিগঞ্জে ছুটে এসেছিলেন একদল তরুণ। 

চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণের ট্রাক এসেছে সিলেটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ান। মহা দুর্যোগের সময়ে নানা শ্রেণি-পেশার এই ত্রাণযোদ্ধাদের প্রতি টুপি খোলা স্যালুট। যারা দুঃসময়ে অসহায় বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি সিলেট-সুনামগঞ্জ তথা বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।  এই ত্রাণযোদ্ধাদের অকুতোভয় উদ্যোগ যেমন আমাদের চোখে আশার ঝিলিক দেখিয়েছে তেমনি সরকারি ত্রাণের দৈন্য ও প্রশাসনের উঠপাখি নীতি হতাশ করেছে অনেককে। এখন অনেক এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার। বানের পানিতে যাদের ঘর ভেসে গেছে তারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। নানা রোগ দিয়েছে দুর্গত এলাকায়। ২৭শে জুন দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সরকারি ত্রাণ সংকটের বিষয়টি অনেকটা আন্দাজ করা যায়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১শে জুন দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ত্রাণের আশায় কয়েকশ’ মানুষ কার্যালয়ের সামনের ফটকে ভিড় জমিয়েছেন। অনেকে ত্রাণ না পেয়ে ফিরে গেছেন। চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মনাফ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া ত্রাণের পরিমাণ খুবই কম। কাকে রেখে কাকে দেবেন সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হিসাবে, সিলেট জেলায় বন্যায় ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮৫১টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫১ জন প্লাবিত হয়েছেন। এর বিপরীতে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১ হাজার ৪১২ টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বানভাসিরা মাথাপিছু ৬৪৫ গ্রাম চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। অন্যদিকে একেকজন বানভাসির বিপরীতে প্রায় ১০ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এমন পরিসংখ্যানের পর আর বলার অপেক্ষা রাখে না, সিলেটে ত্রাণ অপ্রতুল কিনা। এটা রীতিমতো উপহাস। সরকারি হিসাবে, সিলেট জেলায় বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫৪টি। 

সর্বশেষ রোববার দুপুর পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ও জেলার ১৩টি উপজেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৯ হাজার ৭৭২ জন মানুষ অবস্থান করছিলেন। এসব মানুষদের অনেকের ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বন্যায়। তাদের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও তারা ফিরতে পারছেন না আশ্রয় না থাকার কারণে। সরকারি ত্রাণের এই দৈন্যতা নিয়ে ক্ষুব্ধ হতাশ স্থানীয়রা। ক্ষুব্ধ সিলেটের প্রবাসীরাও। তারা বলছেন, হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি মজবুত রাখতে সিলেটের প্রবাসীরা ভূমিকা রাখলেও সরকারি ত্রাণের দৈন্যতা তাদের হতাশ করেছে।  বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলার সব ক’টি উপজেলা বন্যাপ্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ঘরবাড়ি। সড়ক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানিও হয়েছে এই জেলায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে মঙ্গলবার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যায় মোট ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জেই মারা গেছেন ২৬ জন। বেসরকারি হিসেবে এ জেলায় প্রাণহানি আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।  যদিও জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন গত ২১শে জুন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সুনামগঞ্জের বন্যায় হত্যা মামলার এক ফেরারি আসামি ছাড়া কোনো মৃত্যুর সংবাদ তিনি পাননি। 

তার সংবাদ সম্মেলনের আগে-পরে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ জেলায় বন্যার কারণে প্রাণহানির সংবাদ প্রকাশ করা হয় নিয়মিত। জেলা প্রশাসকের ওই বক্তব্যে অনেকটা স্পষ্ট তারা ভয়াবহ ওই পরিস্থিতি লুকানোর চেষ্টা করছিলেন না হয় পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারছিলেন না। 

এখন বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ এবং সংকট নতুন মাত্রা পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সংকট বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়া মানুষদের। তারা আশ্রয়কেন্দ্রেও থাকতে পারবেন না। আবার নিজের ঘরেও উঠতে পারবেন না। এসব পরিবারে হয়তো ছোট শিশু আছে। স্কুলপড়ুয়া আছে। বয়স্ক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ আছে। এই সব মানুষের পুনর্বাসন উদ্ধার এবং ত্রাণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে এ কাজে সরকারকেই মূল ভূমিকায় থাকতে হবে। 

বেসরকারি উদ্যোগ হতে পারে সহায়ক। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের আগে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্রটি সরকারকে জানাতে হবে। এই কাজটি স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে। এখানে উটপাখি নীতি কারোই কাম্য নয়। আমরা আশা করবো পুনর্বাসন কাজে কোনো ধরনের গাফিলতি দেখাবে না প্রশাসন।  বন্যাকবলিত মানুষদের পুনর্বাসনের সঙ্গে কৃষি ও অবকাঠামোগত পুনর্বাসন দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বন্যায় কৃষি ও কৃষিপণ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। কৃষক ও কৃষির পুনর্বাসন এবং অবকাঠামো সংস্কারের কাজটিও করতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর পরিদপ্তরকে আগাম প্রস্তুতিও পরিকল্পনা নিতে হবে এখনই। পরিস্থিতি তুলে ধরা এবং বরাদ্দপ্রাপ্তি নিশ্চিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদেরও সক্ষমতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। 

লেখক: নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক দৈনিক মানবজমিন।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status