নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিদেশি থাবা, সিদ্ধান্ত সীমানার বাইরে?
তারিক চয়ন
৩০ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের প্রধান বিরোধী দল-বিএনপি। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক’স ল’ ডিকশনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী এই দুই দলের যেকোনো একটি (যেকোনো কারণেই হোক) নির্বাচনে অংশ না নিলে সেখানে যেকোনো বিকল্প-ই থাকে না তা বলাইবাহুল্য। আর, বিকল্প না থাকলে বিকল্প বেছে নেয়ার বিষয়টিই থাকে না। স্বাধীনতা তো বহুদূর! এখানে লক্ষণীয় যে, গত ১২ই অক্টোবর বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উক্ত বিষয়টি স্বীকার করেই বলেন, ‘বিভিন্ন ছোটখাটো দল নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা বিএনপি’র সমকক্ষ নয়।’ বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কেবল সিইসি-ই নন, বিদেশি বন্ধুদের বার্তাও পরিষ্কার। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাওয়ার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই চিঠির মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিএনপি ছাড়া যেকোনোভাবেই ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ সম্ভব নয় সেই বার্তাটিও মিস্টার লু সংশ্লিষ্ট মহলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন
প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। দেশে যখন মাত্র একটিই টেলিভিশন চ্যানেল (বিটিভি) তখন সেখানে নিয়মিতভাবে প্রচারিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে সমাজের নানা অনিয়ম আর অসংগতির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক গান গাওয়ার সুবাদে ছেলেবুড়ো সকলের কাছেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
এখন দেশে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা যেমন কয়েক ডজন, তেমনি নানা ঘরানার গায়কের সংখ্যাও হাজার হাজার। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছে খুব স্বাভাবিকভাবেই নকুল কুমার বিশ্বাস নামটি আগের মতো খুব একটা পরিচিত নয়। কিন্তু, সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নতুন একটি গান প্রচার করে আবারো তিনি আলোচনায় এসেছেন। দিন দশেক আগে পোস্ট করা ওই গানটি ‘লাইক’-এর হিসেবে নকুলের আগে-পরের সব গানকে ছাড়িয়ে গেছে। এর কারণ মূলত গানটির শিরোনাম: আমিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।
বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র পাশাপাশি অনেক বিরোধী দলই যখন রাজপথে, কোটি কোটি মানুষ যখন এই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন; তখন এমন একটি শিরোনামের গান আলোচনার জন্ম দেয়াটাই স্বাভাবিক। আর সঙ্গে যদি থাকে নকুল কুমারের দরদী কণ্ঠ তাহলে তো কথাই নেই!
গানটি গাওয়ার পাশাপাশি বরাবরের মতোই এর রচনা ও সুর করেছেন নকুল নিজেই। গানটি এমন:
‘আমিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।
তবে যারা গাড়ি ভাংগো, রাস্তাঘাটে আগুন জ্বালো, আমি তাদের দলে নাই।
আমিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।
হয়তো কোনো দোষে দোষী, হতে পারে মন্ত্রী।
সেই অপরাধের দায়ে মরবে কেন যন্ত্রী?
মারো- মানুষকে বাঁচাতে মানুষ, দিয়ে মানুষের দোহাই।
আমিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।
ট্রাক-পিকআপ বন্ধ থাকলে পণ্যের দাম যে বাড়ে।
গরিবের এই কষ্টের কথা, বোঝাই বলো কারে?
গদির জন্য রক্তের নদী, রাজপথে বয়ে যায় ভাই।
আমিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।
দিন আনে দিন খায় যারা, তারা উপবাসী।
তবু দু’দলই বলো তোমরা, গরিব ভালোবাসি।
সৃষ্টিকর্তা নেমে আসো, আমরা অসহায় সবাই।
আমিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।’
মনোযোগ সহকারে পড়লে বোঝা যাবে যে, শিল্পী নকুল এখানে যে কষ্ট কিংবা আক্ষেপের কথা বলে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর দাবি তুলেছেন তার প্রতিটিই যৌক্তিক। এ লেখাটি লেখার সময় ওই গানটির মন্তব্যের ঘরে যে ১,২০০ মন্তব্য করা হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলা হয়েছে। শুধু নকুলের গান-ই নয়, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সভা- সেমিনার প্রায় সব ক্ষেত্রেই সুযোগ পেলেই মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা কিংবা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি তুলছেন। অনেকে সরাসরি এসব দাবি না তুলে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সিংহভাগ মানুষের মূল দাবিটি মোটামুটিভাবে অভিন্ন। সেটি হলো- এই অবস্থায় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব।
গত মঙ্গলবার মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘আবারো সাজানো নির্বাচন: নাগরিক উৎকণ্ঠা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের নতুন তফসিল দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভদ্রলোক এবং সজ্জন হিসেবে সমাজে সম্মানিত নাগরিক, সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী শাহদীন মালিকও সেখানে বেশ কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘সিরিয়ার আসাদ মডেলে’ বাংলাদেশে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা হচ্ছে। এ অবস্থা কোনোভাবে সমর্থন করার মতো নয়।
সভাপতির বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘এখন যে নির্বাচনের পরিকল্পনা হচ্ছে, তা শুধু নিয়ন্ত্রিত বা সাজানো নয়, তা একতরফা নির্বাচন। সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের যথার্থ বিকল্প ও বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দরকার। মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগে এক ঘরোয়া আড্ডায় ‘নির্বাচনে কারচুপি না হলেই তো সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ বদিউল আলম মজুমদারকে কেউ একজন এমন কথা বললে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ‘ব্ল্যাকস ল’ ডিকশনারি’ থেকে নির্বাচনের সংজ্ঞা উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘ইলেকশন ইজ দ্য চয়েস অফ এন অল্টারনেটিভ’। অর্থাৎ নির্বাচন মানে বিকল্প বেছে নেয়ার স্বাধীনতা।
নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন- আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের প্রধান বিরোধী দল-বিএনপি। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক’স ল’ ডিকশেনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী এই দুই দলের যেকোনো একটি (যেকোনো কারণেই হোক) নির্বাচনে অংশ না নিলে সেখানে যেকোনো বিকল্প-ই থাকে না তা বলাইবাহুল্য। আর, বিকল্প না থাকলে বিকল্প বেছে নেয়ার বিষয়টিই থাকে না। স্বাধীনতা তো বহুদূর!

এখানে লক্ষণীয় যে, গত ১২ই অক্টোবর বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উক্ত বিষয়টি স্বীকার করেই বলেন, ‘বিভিন্ন ছোটখাটো দল নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা বিএনপি’র সমকক্ষ নয়।’ বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কেবল সিইসি-ই নন, বিদেশি বন্ধুদের বার্তাও পরিষ্কার। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাওয়ার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই চিঠির মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিএনপি ছাড়া যেকোনোভাবেই ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ সম্ভব নয় সেই বার্তাটিও মিস্টার লু সংশ্লিষ্ট মহলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু, এসব কোনোকিছুকেই তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীনরা যেভাবে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছেন তাতে দেশে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ আসন্ন বলে মনে করছেন অনেকেই। স্বয়ং সিইসি-ও ওই দলে রয়েছেন। গত সোমবার তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাহির থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে।’ দেশের অর্থনীতি, ভবিষ্যৎসহ অনেক কিছু রক্ষা করতে হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিভিন্ন বিবৃতির প্রসঙ্গ নিয়েও তিনি কথা বলেছেন, আমাকে বাঁচাতে হলে, আমার জনগণকে বাঁচাতে হলে, আমার গার্মেন্টসকে বাঁচাতে হলে, আমার সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে হলে, যে দাবিটা আমাদের জনগণের এবং পাশাপাশি বাহিরের, ওরা খুব বেশি দাবি করেনি, ওদের একটাই দাবি যে, বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ফ্রি ফেয়ার হতে হবে। কোনো রকম কারচুপির আশ্রয় নেয়া যাবে না’ (সূত্র: প্রথম আলো)।
শুধু কি সিইসি! বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নিয়ে এখন সরাসরি কথা বলছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও। বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে, মঙ্গলবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে দলের প্রধান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই ‘দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সীমানার বাইরে সিদ্ধান্ত হচ্ছে’ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক চড়াই-উতরাই হলেও এবারের সমস্যা অতীতের যেকোনো সমস্যার চেয়ে জটিল ও বহুমাত্রিক। দেশ আক্ষরিক অর্থেই গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সীমানার বাইরে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ভূ-রাজনীতির জটিলতায় দেশ পরাশক্তির বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করা হয়েছে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জায়গা নষ্ট করে রাষ্ট্রকেই অকার্যকর করা হয়েছে’ (সূত্র: ইনকিলাব)।
ওদিকে, পোশাক রপ্তানি বন্ধে আমেরিকা-ইউরোপের পাঁয়তারা বাস্তবায়ন হবে না বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উদ্যোক্তাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এই দুটি দেশ এমন কিছু করবে না, যার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পড়ে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানালেও তার বক্তব্যের মাঝেই উদ্বেগের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন কেউ কেউ। তাদের প্রশ্ন এমন কী হলো যে, বাণিজ্যমন্ত্রীকে এভাবে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের প্রধান দুই বন্ধু দেশের নাম ধরে কথা বলতে হলো?
তাদের এমন প্রশ্নের পেছনে যে আতঙ্ক কাজ করছে সেটিও সহজেই অনুমেয়। কারণ, যেদিন বাণিজ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন ঠিক সেদিনই প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদন (বাংলাদেশের আয় পশ্চিমে, ব্যয় পুবের দেশে) থেকে আমরা জানতে পারি, দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য এবং চীন থেকে আসে সবচেয়ে বেশি আমদানি পণ্য। আমদানির পেছনে বাংলাদেশ প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তার এক-চতুর্থাংশের বেশি যায় চীনে। আমদানির উৎস হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। গত এক দশকে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি তিন গুণ বেড়েছে। অন্যদিকে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় এসেছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১ হাজার ৪২ কোটি ডলারের পণ্য গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। জোট হিসেবে সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যেখানে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। অন্যদিকে, চীন আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান প্রায় তলানিতে। ভারতের চিত্রও প্রায় একই রকম।
প্রতিবেদনে বলা হয়: পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে সুবিধা হলো তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশে বাংলাদেশ রপ্তানি বেশি করে, আমদানি করে কম। চীন ও ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটা উল্টো। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) দিক থেকে এগিয়ে আছে পশ্চিমা দেশগুলো। চলতি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে বাংলাদেশে এফডিআইয়ের স্থিতি ২ হাজার ২৪ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫০ কোটি ডলার। পরের স্থানটি যুক্তরাজ্যের। কিন্তু পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগে বেশ পিছিয়ে-১২৬ কোটি ডলার। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলা ভারতের বিনিয়োগ আরও কম-মাত্র ৬৯ কোটি ডলার। প্রতিবছর বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। তাদের অনেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে থেকে যান এবং বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে ভূমিকা রাখেন। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গত অর্থবছরে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। চতুর্থ স্থানে ছিল যুক্তরাজ্য।
এসব তথ্য আমলে নিলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বানে উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকাটা মুশকিল।