নির্বাচিত কলাম
সা ম্প্র তি ক
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে রেমিট্যান্সের প্রভাব
ইমাদ আহমেদ
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার
ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এবং মানি ট্রান্সফার সার্ভিসগুলোর কারণে রেমিট্যান্সে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিকাশ, নগদ এবং রকেটের মতো প্ল্যাটফরমগুলো আর্থিক লেনদেনকে করেছে আরও সুবিধাজনক এবং নিরাপদ। তবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এমন পরিষেবা পৌঁছে গেলেও তা কাজে আসছে না সম্পূর্ণভাবে। কারণ এখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো রয়েছে ডিজিটাল সাক্ষরতা কিংবা স্মার্টফোনের অ্যাক্সেসের অভাব। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা দেশ জুড়ে মোবাইল ফোনের সুবিধার হার ৮৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানটি দেশের একটি দৃঢ় কানেক্টিভিটির অবস্থা নির্দেশ করে। ডিজিটাল রেমিট্যান্স পরিষেবার জন্য এমন নেটওয়ার্ক অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এখানেই দেখা যায় মূল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অনেক গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ী এই অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৪২%। ফলে এখানকার মানুষ ডিজিটাল রেমিট্যান্সের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তবে ইন্টারনেট অভাবই একমাত্র বাধা নয়। গ্রামীণ জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল লিটারেসি বা ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব। মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সত্ত্বেও, অনেকেই জানে না কীভাবে জটিল মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটগুলো চালাতে হয়। যার প্রধান কারণগুলো হলো প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, কাঠামোগত শিক্ষার অভাব এবং ভাষার প্রতিবন্ধকতা
বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে দেশের রেমিট্যান্স খাত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ২২.৪ বিলিয়ন ডলার। দেশে থাকা পরিবার এবং সমগ্র সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে যা যোগ হচ্ছে মূলধন হিসেবে। তবে অর্থনৈতিক খাতে ডিজিটাল ডিভাইড বা ডিজিটাল বিভাজন এখনো রয়ে গেছে। বিশেষভাবে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বহু মানুষের জন্য অর্থ আদান-প্রদানে ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।
ডিজিটাল উন্নয়নের এপিঠ-ওপিঠ
ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এবং মানি ট্রান্সফার সার্ভিসগুলোর কারণে রেমিট্যান্সে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিকাশ, নগদ এবং রকেটের মতো প্ল্যাটফরমগুলো আর্থিক লেনদেনকে করেছে আরও সুবিধাজনক এবং নিরাপদ। তবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এমন পরিষেবা পৌঁছে গেলেও তা কাজে আসছে না সম্পূর্ণভাবে। কারণ এখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো রয়েছে ডিজিটাল সাক্ষরতা কিংবা স্মার্টফোনের অ্যাক্সেসের অভাব।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা দেশ জুড়ে মোবাইল ফোনের সুবিধার হার ৮৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানটি দেশের একটি দৃঢ় কানেক্টিভিটির অবস্থা নির্দেশ করে। ডিজিটাল রেমিট্যান্স পরিষেবার জন্য এমন নেটওয়ার্ক অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু এখানেই দেখা যায় মূল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অনেক গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ী এই অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৪২%। ফলে এখানকার মানুষ ডিজিটাল রেমিট্যান্সের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে ইন্টারনেট অভাবই একমাত্র বাধা নয়। গ্রামীণ জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল লিটারেসি বা ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব। মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সত্ত্বেও, অনেকেই জানে না কীভাবে জটিল মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটগুলো চালাতে হয়। যার প্রধান কারণগুলো হলো প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, কাঠামোগত শিক্ষার অভাব এবং ভাষার প্রতিবন্ধকতা।
বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি)- উভয় সমপ্রদায়ের জন্য নিয়মিতভাবে কমিউনিটি-কেন্দ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করে ট্যাপট্যাপ সেন্ড। সমপ্রতি মানিকগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় আয়োজিত একটি ইফতার অনুষ্ঠান এবং নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে একটি ম্যুরাল প্রজেক্ট তেমনই দু’টি উদাহরণ। দেশের মানুষদের চাহিদাগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে ধারণা রাখে সেখানকার স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, এবং সংস্থাগুলো। তাই তাদের সঙ্গে কাজ করার ফলে ট্যাপট্যাপ সেন্ড তাদের প্রচার কর্মসূচি তৈরি করতে পারছে বিশেষভাবে
ডিজিটাল বিভাজনে অর্থনীতি
মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হলেও, গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা না থাকায় এখানে রেমিট্যান্স খাতের পরিষেবাগুলো ব্যাহত হচ্ছে। অর্থাৎ, এই ডিজিটাল বিভাজনে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এমন একটি বড় অংশ আছে যাদের জীবন নির্ভর করছে তাদের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়ের উপর।
২০২১ সালে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যালায়েন্সের (এফআইএ)-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৪১% বাংলাদেশি ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করে না। যার পরিমাণ গ্রামাঞ্চলে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ফলে অন্যান্য আর্থিক পরিষেবাগুলো তারা ব্যবহার করার সুযোগ কম পায় এবং এমন অবস্থায় তারা হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক, অবৈধ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, এই মাধ্যমগুলো যেমন ব্যয়বহুল তেমনি এতে থাকে স্বচ্ছতার অভাব।
রেমিট্যান্স পরিষেবার ভূমিকা
ডিজিটাল বিভাজনের এমন প্রেক্ষাপটে ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’-এর মতো রেমিট্যান্স পরিষেবা একটি সমাধান। বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হলো ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব। তাদের এই সীমাবদ্ধতাটি বিবেচনা করেই, ট্যাপট্যাপ সেন্ড-এর অ্যাপটি তৈরি করেছে একটি ইউজার-ফ্রেন্ডলি প্ল্যাটফরম হিসেবে।
তবে এই প্ল্যাটফরমটি ব্যবহার করতেও থাকা প্রয়োজন ন্যূনতম ডিজিটাল সাক্ষরতা। যেখানে সমাধান দিয়েছে বিকাশ এবং নগদের মতো বাংলাদেশের বহুল পরিচিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’-এর পার্টনারশিপ। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে আরও রয়েছে শীর্ষস্থানীয় স্থানীয় ব্যাংক এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। যা সহায়ক হয়েছে এই প্ল্যাটফরমটিকে ইউজার-ফ্রেন্ডলি করতে এবং এতে অ্যাক্সেসের সুযোগ বৃদ্ধিতে।
বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি)- উভয় সমপ্রদায়ের জন্য নিয়মিতভাবে কমিউনিটি-কেন্দ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করে ট্যাপট্যাপ সেন্ড। সমপ্রতি মানিকগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় আয়োজিত একটি ইফতার অনুষ্ঠান এবং নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে একটি ম্যুরাল প্রজেক্ট তেমনই দু’টি উদাহরণ। দেশের মানুষদের চাহিদাগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে ধারণা রাখে সেখানকার স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, এবং সংস্থাগুলো। তাই তাদের সঙ্গে কাজ করার ফলে ট্যাপট্যাপ সেন্ড তাদের প্রচার কর্মসূচি তৈরি করতে পারছে বিশেষভাবে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলতে পারে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কীভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে-সেটির উপরে ২০২০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (সিআইডি) একটি সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় উঠে আসে যে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একটি পরিবারের ব্যবসা চালানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে ৬.৬%।
অর্থ প্রেরণের জন্য ইউজার-ফ্রেন্ডলি চ্যানেলগুলো ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির মধ্যদিয়ে হতে পারে গ্রামীণ বাংলাদেশের রূপান্তর। গ্রামাঞ্চলের মানুষ যখন এই উপায়ে রেমিট্যান্সের অর্থ পাওয়ার সুযোগ পায়, তখন সেটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ছোট ব্যবসায়ে বিনিয়োগের জন্যও অর্থ যোগানের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের রেমিট্যান্স শিল্পের অগ্রগতি হলেও এখনো এই খাতটির এগিয়ে যাওয়া অনেক বাকি। ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’-এর মতো উদ্ভাবনী সমাধানগুলোর ব্যবহার বাংলাদেশের ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে সহায়ক। যেটি দেশের প্রতিটি কোণে রেমিট্যান্সের পরিষেবা পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে পারলে, কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, সমগ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন করতে সক্ষম হবে।
লেখক: প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর অ্যাপ ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’-এ কাজ করছেন।