বাংলারজমিন
ডাক্তার-নার্সদের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এক অসহায় পিতার আর্তনাদ
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার
‘কাল রাইত থেইকে আমার ছেলে কম নড়াচড়া করতেছিল, কতোবার নার্স আফাদের পায়ে ধরিছি। তারা আমাক অপমান করেছে। সকালে ডাক্তার আমাক ঔষধ আনতে পাঠাইলো। আইসা শুনি আমার ছেলেডা আর নাই। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সেরা আমার ছেলেডারে মারছে।’ এভাবেই আকুতি করে গতকাল সকালে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে ভুক্তভোগী মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার ডুমুরিসা গ্রামের আজিজুল মিয়ার ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার ডাইনকিনি এলাকায় পাখি মিয়ার বাসায় ভাড়া থেকে চায়ের দোকান করে।
ভুক্তভোগী মনোয়ার হোসেন জানায়, গত শনিবার সকালে তার স্ত্রী সাহিদা বেগমের (৩২) পানি ভাঙা (ফ্লুইড ডিজচার্জ) শুরু হলে স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসক তাদের বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে নরমাল ডেলিভারির আশ্বাস দিয়ে ভর্তি করান। ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা অবনতি হতে থাকে। মনোয়ার হোসেন কর্তব্যরত নার্সদের বার বার অবগত করলেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উদাসীন থাকে। গত রোববার বিকাল পর্যন্ত কোনো ডাক্তার সাহিদাকে দেখতে না যাওয়ায় উপায় না পেয়ে মনোয়ার নার্সদের পায়ে ধরে। অবশেষে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে আল্ট্রা সনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেয়। রিপোর্ট অনুযায়ী অবস্থা খারাপ থাকলেও কর্তব্যরত নার্সরা তাকে নরমাল ডেলেভারির আশ্বাস দেয় এবং সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। পরে রোগীর অবস্থার অবনতিতে তাৎক্ষণিক
সিজারের অনুরোধ করলেও নার্সরা তাকে কোনো ভাবেই ডাক্তারের কাছে যেতে দেয়নি। পেটের ভেতর শিশুর নড়াচড়া কম হওয়ায় মনোয়ার আবারো নার্সদের পায়ে ধরে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে। তাতে নার্সরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দেয়। অসহায় মনোয়ার উপায় না পেয়ে স্ত্রীর পাশে বসে সারারাত কান্না করে। গতকাল সকালে নবজাতকের নড়াচড়া না পেয়ে দায় এড়াতে সিজার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. বদরুন্নেছা। সিজারের পূর্বে বাইরে ওষুধ আনতে পাঠায় মনোয়ারকে। ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে শুনেন সিজার হয়ে গেছে। এরপর তার কাছ থেকে অস্ত্রোপচারের সম্মতি পত্রে (অপারেশন কনসেন্ট) স্বাক্ষর নেয়। তার দশ মিনিট পর ডাক্তার জানায় সিজারের পর নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মনোয়ার ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে থানা থেকে জানানো হয় সবাই আনসার ও ভিডিপিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিউটিতে আছেন। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি কালিয়াকৈর থানায় যান অভিযোগ করতে।
অন্য রোগীরা জানান, এই অভিযোগ ছাড়াও এই কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপর এক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নির্দিষ্ট ক্লিনিক থেকে কমিশন নেয়া ও অতিরিক্ত টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে এই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুন্নাহার ইতি বলেন, চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না।
পাঠকের মতামত
"মোরা সবাই রাজা .................."