ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

কুশিয়ারার তীরে তীব্র হচ্ছে সংকট

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ জুন ২০২২, শনিবার

ওসমানীনগরের সুলতানপুর গ্রাম। দুর্গম এলাকা। হাওরের তীরের বিচ্ছিন্ন জনপদ। নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে গতকাল দুপুরে সেখানে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছলেন র‌্যাব সদস্যরা। ত্রাণের নৌকা দেখে ভিড় জমান কয়েকশ’ মানুষ। কেউ কেউ নৌকাযোগে আসেন ত্রাণ নিতে। আবার কেউ আসেন কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে। ত্রাণ পেয়ে গ্রামের বৃদ্ধা রাহেলা বেগম জানালেন- ২০ দিন ধরে পানিবন্দি। ঘরের ভেতরে পানি। মাচান বেঁধে বসবাস করছেন।

বিজ্ঞাপন
এই প্রথম তাদের হাতে কেউ ত্রাণ তুলে দিলো। তিনি জানান- তাদের গোটা গ্রামেই পানি। কেউ কেউ সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। লোকজন জানিয়েছেন- গ্রামের অনেক মানুষ একবেলা খেয়ে বসবাস করছে। রান্নারও কোনো ব্যবস্থা নেই। অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন তারা। পাশেই ময়নাবাজার। সেখানেও পানিবন্দি মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেই। বাসিন্দারা জানিয়েছেন- সরকারি যে সহায়তা এসেছে তা খুবই অপ্রতুল। গ্রামের ভিত্তবানরা মাঝে-মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করেন। বাড়িঘরে বুক সমান পানি। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন জানেন না তারা। এ দৃশ্য এখন ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের সবখানে। মানুষ পানিবন্দি। কিন্তু কুশিয়ারা তীরের অবস্থা ভয়াবহ। গতকালও কুশিয়ারা তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় পানি বেড়েছে। নতুন করে মানুষ পানিবন্দি হচ্ছে। কিন্তু সেভাবে ত্রাণ পাচ্ছেন না মানুষ। বাড়িঘর ভাসিয়ে নেওয়ার কারণে রান্না করতে পারছে না। শুকনো খাবার খেয়ে দিনযাপন করছেন। ওসমানীনগরের সাদীপুর ইউনিয়নের চাতলপাড়, রহমতপুর গ্রাম। দু’টো গ্রামের পুরোটাই পানির নিচে। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের ভিড়। কেউ কেউ সড়কের ওপর এসে অবস্থান নিয়েছেন। দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে এ দু’টি গ্রামে মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- আসতে হলে তীব্র স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে আসতে হয়। অনেকেই আসছেন না। ত্রাণও পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। তবে- গ্রামের ভিত্তবান মানুষের পক্ষ থেকে একবেলা রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। গাভুরটিকি নূরপুর, হলিমপুর, মোবারক সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষও রয়েছেন দুর্দিনে। সাদীখালের নিকটবর্তী এলাকায় মানুষজন ঘরবাড়ি ছাড়া। ৫-৬ দিন ধরে তারা আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলে। ওখানে অনাহারে অর্ধাহারে বসবাস করছেন। বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার, পূর্ব গৌরীপুর, পশ্চিম গৌরীপুরের অবস্থা ভয়াবহ। একদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের জায়গা হচ্ছে না। অন্যদিকে বাড়িঘরে মানুষের মানবেতর জীবন-যাপন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে অনেকেই নৌকা নিয়ে যেতে পারছেন না। হাওর ও নদীবেষ্টিত ওই এলাকার বাসিন্দারা সংকটে পড়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরে খাদ্য সংকট রয়েছে। তার উপর বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়েছে। ফলে বন্যার্ত এলাকার লোকজন অসুখ-বিসুখে ভুগছেন। বালাগঞ্জের উজানে ফেঞ্চুগঞ্জ। ৬ দিন ধরে বাজার বন্ধ। কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে বাজার। পানি উঠে যাওয়ায় বাজারে পণ্য সংকট রয়েছে। হাকাকুলি হাওরের একাংশের অবস্থান ফেঞ্চুগঞ্জে। স্থানীয় রুবেল আহমদ জানিয়েছেন- সরকারিভাবে ত্রাণ কম পাচ্ছে মানুষ। সিলেট থেকে কেউ কেউ ত্রাণ নিয়ে আসছেন। তবে- সড়কের পাশের বাসিন্দারা সেই ত্রান পাচ্ছেন। হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী কয়েকটি মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। নদী ও হাওরে তীব্র স্রোত থাকার কারনে সাহস করে অনেকেই যাচ্ছেন না। ফলে হাকালুকির তীরবর্তী এলাকাগুলোতে কয়েক হাজার মানুষ সংকটে রয়েছেন। বন্যায় ফেঞ্চুগঞ্জের ৬টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে প্রায় ৫টি ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।  গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের দুর্গম এলাকায় ত্রাণ সংকট রয়েছে। এদিকে- কুশিয়ারা তীরবর্তী বন্যাদুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়নি। প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন। বন্যার পানির কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে পানিবন্দি থাকা মানুষজন দুর্ভোগে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইল  নেটওয়ার্কের বাইরে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক জানিয়েছেন- ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকার বহু মানুষ প্রবাসে বসবাস করেন। বন্যার্তদের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে অনেক সহযোগিতা আসতে শুরু করেছে। তিনিও প্রবাসী উদ্যোগের ত্রান বিতরণ করছেন। অনেক প্রবাসী ইতিমধ্যে দেশে আসতে শুরু করেছেনও। তারা নিজেদের উদ্যোগেও খাবার বিতরণ করবেন। গতকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বনাথের রামপাশাসহ কয়েকটি এলাকায় গতকাল ত্রাণ বিতরণ করেছেন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী। তিনি গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে এখনো তেমন সহায়তা পৌঁছেনি। বেসরকারি ভাবে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তাদের উচিত যারা ত্রাণ পাচ্ছে না তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। এতে কষ্ট হলেও ত্রাণ পৌঁছানোই হচ্ছে আসল চ্যালেঞ্জ। তাদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ২ হাজার মানুষের মধ্যে শফিক চৌধুরী খাবার বিতরণ: পাহাড়ি ঢল ও টানাবর্ষণে মাসখানেকের ব্যবধানে ফের বন্যায় কবলিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ও রামপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার বন্যার্ত মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়া ওই দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং আরো ২ শতাধিক মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন তিনি। দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণকালে শফিক  চৌধুরী বলেন- পর পর দু’বার বন্যাকবলিত বিশ্বনাথ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। আওয়ামী লীগের  নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদেরকে খাবারের জন্য কিংবা ত্রাণের জন্য কষ্ট করতে হবে না। সরকারের পক্ষ  থেকে জনসাধারণকে সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তবে বন্যার মতো সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সমাজের বিত্তবান ও প্রবাসীদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায়। রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণকালে শফিক  চৌধুরীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেনÑ রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান এডভোকেট  মোহাম্মদ আলমগীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ সুমন, কার্যনির্বাহী সদস্য এমদাদ মিয়া, রামপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর নূর, যুগ্ম সম্পাদক মিজাজুল হোসেন, বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য রাজু আহমদ খান প্রমুখ।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক/ এবারো ভোগাতে পারে ১৩ কিলোমিটার

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status