বাংলারজমিন
মানিকগঞ্জে পূর্বের সীমানার চারটি আসন ফিরে পেতে রিতার লড়াই
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
স্বাধীনতা পর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জের চারটি আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতো। বিএনপি’র জন্মলগ্ন থেকেই দলটির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত এই জেলা। যার কারণে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি’র কোনো প্রার্থীর কাছেই আওয়ামী লীগসহ অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সেনাশাসিত নির্বাচন কমিশনার মানিকগঞ্জ জেলা থেকে একটি আসন কেটে তিনটি আসন প্রতিষ্ঠা করে। আসন কমানোর কারণে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দেয়ায় ভৌগোলিক দিক থেকে মানিকগঞ্জের উন্নয়ন কমে গেছে অনেকাংশে। যা সাধারণ মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পায়। তবে পূর্বের চারটি আসন ফিরে পেতে মানিকগঞ্জ জেলাবাসীর পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও নির্বাচন কমিশনে পূর্বের আসন ফিরে পেতে একাধিকবার আবেদন করেও কোনো কাজে আসেনি। তারপরও পূর্বের আসন ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে থেমে থাকেনি আফরোজা খান রিতা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি জোরালো ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলা থেকে বেশ কয়েকটি আবেদন রিতার মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানোর পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে কমিশন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি নয় চারটি আসনেই ভোট দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন জেলার মানুষজন।
৪টি থেকে যেভাবে ৩টি আসন করা হয়: ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে সীমানা অনুযায়ী মানিকগঞ্জ-১ আসনটি ছিল ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে। যেখানে বিএনপি’র প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন টানা ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০৮ সালে নির্বাচনে এ আসনের ঘিওর ও দৌলতপুর সঙ্গে নতুন সংযুক্ত করা হয় মানিকগঞ্জ-২ আসনের শিবালয় উপজেলাকে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ-২ আসনটি ছিল হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলা নিয়ে। আসনের বিএনপি’র সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন মন্নু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম হারুণার রশিদ খান মুন্নু। ৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকটা নির্বাচনে তিনি রেকর্ড সংখ্যক ভোটে বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নতুন সীমানা অনুযায়ী মানিকগঞ্জ-২ আসনটি সিংগাইর-হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদরের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়। নতুন সীমানায় সাজানো মানিকগঞ্জ-২ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপি’র সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা আফরোজা খান রিতাকে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে হারিয়ে দেয়া হয়।
বিলুপ্তি করা হয় মানিকগঞ্জ-৪ আসন নামের অঙ্কটি। সাবেক মানিকগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান নয় মিয়া ও তার ছেলে মনিরুল ইসলাম খান শান্ত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পূর্বের সীমানায় সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাকে বহাল রাখা হয় মানিকগঞ্জ-৩ আসনেই। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সুবিধা দিতেই আসনটিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলার পক্ষ থেকে গত ১৫ই জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সীমানা সংক্রান্ত বৈঠক করেছেন আহ্বায়ক রিতা। মানিকগঞ্জের পূর্বের চারটি আসন ফিরে পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে জোর দাবি তুলেন তিনি।
রিতা মানবজমিনকে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার ধারের কাছেও আওয়ামী লীগ যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতেই মূলত সেনাসমর্থিত নির্বাচন কমিশন বেছে বেছে মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আসন কমানোর নীল নকশা বাস্তবায়ন করে। যার ফলে ওই নির্বাচনে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা বিএনপি’র প্রার্থীদের হারিয়ে দেয়া হয়। রিতা বলেন, আসন কমানোর সিদ্ধান্তে ওই সময় থেকে প্রতিবাদ জানানো হলেও আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন কোনো কর্ণপাত করেনি। আসন কমানোর কারণে ভৌগোলিক দিক থেকে মানিকগঞ্জের উন্নয়ন হয়নি।
পূর্বের চারটি আসন ফিরে পাওয়ার জন্য সমপ্রতি নির্বাচন কমিশনে মানিকগঞ্জবাসীর পক্ষে আমি জোর দাবি তুলেছি। ইনশাআল্লাহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জেলার চারটি আসনেই অনুষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।