বাংলারজমিন
রয়্যালিটি ঘাটের কয়েকশ’ নৌকা এলো কোথা থেকে
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
গোয়াইনঘাট সদরের পিয়াইন নদীর ব্রিজে উঠলেই চোখে পড়ে শত শত বালুবাহী ভলগেট আটকে আছে কালা মিয়ার ঘাটে। এরমধ্যে রয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার বালুবাহী নৌকাও। প্রশ্ন উঠেছে; এত ভলগেট এলো কোথা থেকে। প্রশাসন বারবারই বলছে; পিয়াইন নদীতে বালু লুট হচ্ছে না। কিন্তু তাদের বক্তব্যের ঠিক উল্টো দৃশ্য গতকাল বিকালে দেখা গেল গোয়াইনঘাটে। নৌকা আটকে রেখেছেন সমন্বয়ক আজমল হোসেন। তার বাড়ি গোয়াইনঘাটের প্রভাবশালী গ্রাম লেঙ্গুরাতে।
গোয়াইনঘাটের কালা মিয়ার ঘাটের অপর নাম হচ্ছে রয়্যালিটি ঘাট। এই ঘাটে গত দুই মাস ধরে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের জৈন্তাপুরের সারি-১ বালুমহালের কাগজ দিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। স্থানীয় জিয়ারত খানের নেতৃত্বে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছিলো না। সম্প্রতি গোয়াইনঘাটের ছাত্র সমন্বয়ক আজমল হোসেন এই অবৈধ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি সারি-২ নামের আরেকটি বালুমহালের রয়্যালিটি কাগজ নিয়ে চাঁদা তুলতে উদ্যত হন। এতে সারি-১ অংশের নেতৃত্বে থাকা জিয়ারতের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। আজমলের বাড়ি লেঙ্গুরা হওয়ায় তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তারা নদীর তীরে অবস্থান নিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে চলাচলকারী সব ভলগেট আটকে দেন। গত রোববার তিনি যখন গ্রামের লোকজনকে নিয়ে নদীতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য নামেন তখন রয়্যালিটি ঘাটের নেতৃত্বে থাকা জিয়ারত ও তার লোকজন নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে। এতে গোয়াইনঘাটে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে লেঙ্গুরা গ্রামের লোকজন দিনে রাতে পালাক্রমে নদীর তীরে অবস্থান করছেন। জিয়ারত অংশের পক্ষ নিয়ে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ লেঙ্গুরা গ্রামের লোকজনের ওপর অ্যাকশন শুরু করলে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ পিছু হটে। সোমবার রাতে লেঙ্গুরা গ্রামের লোকজন এলাকায় কয়েকঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা স্ট্যালিন থারিয়াং নামে এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এদিকে, গতকাল দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা র্যয়ালিটি ঘাটের নিয়ন্ত্রক জিয়ারত ও সমন্বয়ক আজমল হোসেনকে ডেকে নিয়ে এসেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- র্যয়ালিটি ঘাটে এখন আটক শত শত নৌকার সব বালুই অবৈধ। উজানে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইসিএভুক্ত জাফলং কোয়ারি। সেটি ইজারা দেয়া বন্ধ। কিন্তু রাতের আঁধারে শত শত নৌকা জাফলংয়ে ঢুকে বালু লুট করছে। প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বালুর আরেকটি স্পট বাংলাবাজার। এই বাংলাবাজারে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রয়েছে স্থানীয় পাথর ও বালু ব্যবসায়ী সমাবায় সমিতির নেতারা।
সমিতির সভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপি’র ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন তালুকদার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বাংলাবাজারে তারা বালু লুট বন্ধ রেখেছিলেন। সব ভলগেট নিচে নামিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়ারত ও তার সহযোগীরা সশস্ত্র মহড়া দিয়ে ওই এলাকা থেকে বালু লুট চালায়। উপরে জাফলংয়েও সশস্ত্র মহড়ার পর বালু লুট চলছে। আর অবৈধভাবে লুট করা বালু বর্তমানে কালা মিয়ার ঘাটে আটকা রয়েছে। অথচ পুলিশ বালুখেকোদের পক্ষে থাকায় এই নৌকাগুলো জব্দ করছে না। তিনি বলেন- গোয়াইনঘাটের পুলিশ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারাও লুটেরাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীরা লুটের প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি। গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন- এই বালু কোথায় থেকে এসেছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রয়্যালিটি ঘাটের লোকজন বলেছে তারা বৈধভাবে এই বালুগুলো এনেছেন। তিনি বলেন- লেঙ্গুরা গ্রামের একপক্ষ এই বালুগুলো আটকে রেখেছে। এ নিয়ে সেনাবাহিনী দু’পক্ষকে ডেকেছে। ওখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।